কাজিরবাজার ডেস্ক :
বহুল আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার রায় আজ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রসিদ সোনাগাজী মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার রায় ঘোষণা করবেন। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে প্রধান আসামি এবং আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনার প্রায় সাত মাসের মধ্যে বিচার কাজ শেষ হচ্ছে। মামলার কার্যক্রম শুরুর ৬২ কার্য দিবসে নুসরাত হত্যা মামলার সকল আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে আদালত। গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ, বাদী ও আসামিদের যুক্তিতর্কের ওপর আইনগত প্রশ্নের উত্তর শেষে আদালত ২৪ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে।
নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বোন নুসরাত হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, নুসরাত ছাড়া আমাদের পরিবার শূন্য। মা এখনও বোনের (নুসরাত) জন্য কেঁদে কেঁদে বুক ভাসান। নুসরাতের হত্যাকারীদের বিচার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে কেউ আর এ ধরনের হত্যাকা- ঘটাতে সাহস পাবে না।
গত ২৯ মে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর মোঃ শাহ আলম। চার্জশীটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। ৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারিক আদালত। এরপর ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী ও নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার কাজ শুরু হয়।
এ মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। তারা হলেন- নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল।
ফেনী সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলীম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে গত ২৬ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় গত ২৭ মার্চ পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেফতার করে। সিরাজ উদদৌলার নির্দেশে মাকসুদ কমিশনার, সাহাদাত হোসেন শামীম তাদের অনুসারীদের নিয়ে সিরাজ উদদৌলার মুক্তির দাবিতে সোনাগাজী বাজারে মানববন্ধন করে এবং থানা ঘেরাও করার চেষ্টা করে। একইসঙ্গে সিরাজ উদদৌলার অনুসারীরা নুসরাতকে মামলাটি উঠিয়ে নেয়ার জন্য চাপ অব্যাহত রাখে। নুসরাত মামলাটি উঠিয়ে নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে সিরাজ উদদৌলার অনুসারী নুসরাতের কয়েকজন সহপাঠী।
গত ৬ এপ্রিল সকালে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত আলিমের আরবি পরীক্ষা প্রথম পত্র দিতে মাদ্রাসায় গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে ডেকে কৌশলে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যায়। পরে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচদিন পর ১০ এপ্রিল রাতে মারা যায়। পরদিন ১১ এপ্রিল বিকেলে সোনাগাজীতে তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নুসরাত মারা যাওয়ার আগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটের ডাক্তারের সামনে ডাইং ডিক্লারেশনে তার ওপর হামালার ঘটনা বলে যায়। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী, থানা পুলিশ, কয়েকজন সুবিধাভোগী সংবাদিক মরিয়া হয়ে অপপ্রচার চালাতে থাকে।