সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
রাস্তা প্রস্তকরণে ড্রেন নির্মাণ, মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন টানা, সড়ক সংস্কার করতে রাস্তায় খুঁড়াখুঁড়ি ও যত্রতত্রভাবে সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ডের কারণে সিলেট নগরীতে যানজট চরম আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি এসব কাজের কারনে রাস্তায় ধুলাবালির নগরীতে পরিনত হয়েছে। মহানগরীর কয়েকটি ব্যস্ততম সড়ক ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
জানা গেছে, নগরীর দক্ষিন সুরমার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রবেশমুখ হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বরে রাস্তা সংস্কার, রাস্তা খুঁড়াখুঁড়ি, রাস্তার চর্তুরদিকে সিএনজি অটোরিক্সা স্ট্যান্ডের কারনে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছয়মুখী এ সড়কে পারাইচক পর্যন্ত, শাহজালাল উপশহর থেকে সোবহানীঘাট পর্যন্ত, কদমতলী হয়ে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পর্যন্ত এক ভয়াবহের যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল।
এমন যানজটের কারণ খোঁজতে গিয়ে জানা যায়, গত ১৮ অক্টোবর শুক্রবার একটি ব্যাংকে লোক নিয়োগের লিখিত পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ওইদিন সকাল থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লিখিত পরীক্ষা দিতে সিলেটে প্রায় ৫০ হাজারের মতো নিয়োগপ্রার্থী সিলেটে ঢুকেন। ফলে এমন ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের নিরলস প্রচেষ্টার কারনে নগরীতে এমন যানজট থেকে রেহায় পায় সিলেট মহানগরীর বাসিন্দারা। এছাড়া কীন ব্রীজ বন্ধ করে দেওয়ায় শাহজালাল ব্রীজ দিয়ে বড় বড় গাড়ী ছাড়াও ব্যাপক আকারে ছোট ছোট গাড়ী চলাচল করায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পূর্ব থেকে রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত শাহজালাল উপশহর পয়েন্ট থেকে সোবহানীঘাট পয়েন্ট পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। ফলে এ রাস্তা দিয়ে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটছে।
দেখা গেছে, কয়েকদিন পূর্বে বন্দরবাজার ও কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন টানা হয়। এতে খুঁড়াখুঁড়ির ফলে সপ্তাহ ধরে পথচারী লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েন। এদিকে রাস্তা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে জিন্দাবাজার হয়ে চৌহাট্টা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের ধীরগতিভাবে ড্রেন তৈরীর কাজের ফলে পথচারীদের ভোগান্তির পাশাপাশি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। এসব কাজ এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে। সিটি কপোরেশনের এমন ধীরগতির কাজে বৃষ্টিতে পথচারী ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের আরো দুরগতি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
ভোক্তভোগিরা জানিয়েছেন, সিটি কপোরেশন জনগণের দুর্গতির কথা বিবেচনা করে দ্রুত উক্ত কাজ সম্পন্ন করতে জোর দাবী জানিয়েছেন।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে- নগরীর কোর্ট পয়েন্টকে জঞ্জালমুক্ত করতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষ থেকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে মেয়র মৌখিক সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন- কোর্ট পয়েন্টে যে অস্থায়ী গাড়ি স্ট্যান্ড রয়েছে সেখানে সব সময় ১০টি লেগুনা ও ২৫ টি সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়াতে পারবে। এর বেশি যানবাহন সেখানে থাকতে পারবে না। এছাড়া তাদের দাঁড়িয়ে থাকার সীমানাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা সিটি করপোরেশনের সেই নির্দেশেরও তোয়াক্কা করছেন না। তারা পুরো এলাকা দখলে নিয়ে কোর্ট পয়েন্ট, সিটি পয়েন্ট, বন্দরবাজার পত্রিকা পয়েন্ট ও বন্দরবাজারস্থ জেলরোডের প্রবেশ মুখকে যানজটের ভাগাড়ে পরিণত করেছেন। এতে করে যানজট লেগে কোন কোন সময় বড় যানজটে পরিনত হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যত্রতত্র স্ট্যান্ড বানিয়ে পুরো নগরীকে অটোরিকশার নগরীতে রূপ দিয়েছেন সিলেটের সিএনজি অটো রিক্সা চালকরা। বেশিরভাগ সড়কেরই অর্ধেকের বেশি জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা এসব স্ট্যান্ড সরাতে প্রশাসনের তরফ থেকে নেই কোন কার্যকরী উদ্যোগ। নগরীর আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, কোর্ট পয়েন্ট, সিটি পয়েন্ট, বন্দরবাজার, কীন ব্রীজের মোড়, শাহী ঈদগাহ, জেলরোড, টিলাগড়, কদমতলী, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, স্টেশন রোড, কোন সড়কই বাদ নেই। প্রতিটি সড়কই সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকদের দখলে। এতে নগরীজুড়ে যানজটের সমস্যা যেমন প্রকট হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ। নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে বাইরে যেখানেই যাত্রী মেলে সেখানেই স্ট্যান্ড বানিয়ে বসে থাকেন চালকরা। ব্যাপারটা এমন যে, যেখানে গাড়ি থামবে সেখানেই স্ট্যান্ড। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গভীর রাত পর্যন্তও এসব এলাকায় যানজট থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট শহরে আইনত বৈধ কোন স্ট্যান্ডই নেই। নামমাত্র অনুমতি নিয়ে স্ট্যান্ডগুলো বসানো হয়েছে। নাগরিক সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয় না কেউ। এছাড়া যতদিন যাচ্ছে নগরীতে সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নগরীতে অতিরিক্ত যানজট সৃষ্টির কারণ জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিস) মো: জেদান আল মুসা জানান, মূলত রাস্তা ছোট থাকার কারণে বিভাগীয় এ শহরের বর্তমানে যানজট কিছুটা বেড়ে গেছে। এছাড়া রাস্তা প্রস্তকরণ ও খুঁড়াখুঁড়ি করার কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, এসএমপি এলাকায় এসব যানজট নিরসনে আমরা ক্যাম্পইনের পাশাপাশি পুলিশ কাজ করে করছে বলে জানান তিনি।
সিলেট সিটি কপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানান, বিভাগীয় এই শহরে বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত গাড়ী বেড়া যাওয়ায় বর্তমানে সিলেট সিটি কপোরেশন রাস্তা প্রস্তকরণ ও পানি নিস্কাশনের জন্য ড্রেনের কাজ করতে গিয়ে খুঁড়াখুঁড়ি করায় মহানগরীতে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, সিসিক যত দ্রুত সম্ভব নগরীর রাস্তা প্রস্তকরনের কাজ সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, নগরীকে সুন্দর, পরিস্কার পরিচ্ছিন্ন রাখতে ও যানজটমুক্ত শহর গড়ে তুলতে সিসিক কাজ করে যাচ্ছে।