প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযান সফল হোক

13

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও অনেকেরই মনে তা একটা প্রশ্ন হয়ে থেকে গিয়েছিল। দীর্ঘ সময়ে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন দেশে যেভাবে জেঁকে বসেছে, তাতে এমন প্রশ্ন বা সন্দেহ থাকা অমূলক নয়। কিন্তু তাঁর নিজ দলের মধ্যেই যেভাবে শুদ্ধি অভিযান এগিয়ে চলেছে, তাতে মানুষ আবার আশাবাদী হতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা যে অমূলক ছিল না, তা এখন অনেকেই স্বীকার করছেন। সর্বশেষ দৃষ্টান্ত দেখা গেল গত রবিবার গণভবনে যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে। সেখানে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীসহ বিতর্কিত নেতাদের প্রবেশাধিকার ছিল না। যুবলীগের আসন্ন জাতীয় কংগ্রেস সফল করার লক্ষ্যে একটি প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে; তাতেও বিতর্কিতদের কোনো স্থান হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কংগ্রেসের আগ পর্যন্ত এই কমিটিই সব কাজ করবে। বিতর্কিতরা যেন কোনোভাবেই যুবলীগের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে না পারে, তিনি তা নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রস্তুতি কমিটিকে।
গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরাখবর থেকে যত দূর জানা যায়, ইসমাইল হোসেন সম্রাট, জি কে শামীম, খালেদ ভূঁইয়াসহ গ্রেপ্তারকৃত যুবলীগ নেতারা রিমান্ডে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। জোট ও দলের অনেক বড় নেতাকে তাঁরা নিয়মিতভাবে টাকা দিতেন। তাঁদের নামও বলে দিচ্ছেন। ফলে জোট ও দলে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। অনেক নেতারই ঘুম হারাম হতে চলেছে। কেউ কেউ প্রলাপও বকতে শুরু করেছেন। দেশের মানুষ এমন শুদ্ধি অভিযানই আশা করে। শুধু ক্যাসিনো নয়, দেশের তরুণসমাজকে ধ্বংসকারী মাদক কারবার, চোরাচালান, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, সন্ত্রাস তথা এমন কোনো অপরাধ ছিল না, যা রাজনীতির আড়ালে করা হচ্ছিল না। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে উপার্জিত অর্থ নিয়ে যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁরা আর যা-ই হোক, কখনো দেশের কল্যাণে কিছু করতে পারেন না। তাঁদের কারণে দেশ তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ই, দলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দলের সৎ নেতাদের চরম মূল্য দিতে হয়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে তা কারো বেশি জানার কথা নয়। ফলে তাঁর পক্ষেই সম্ভব রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সূচিত শুদ্ধি অভিযানের সাফল্য কামনা করি।
রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এক দিনে হয়নি। সামরিক শাসকরা রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করার লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সূচনা করেছিলেন। সাত খুন মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছাত্রনেতাকে জেলখানা থেকে বের করে এনে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিতে সন্ত্রাস ঢোকানো হয়েছিল। আওয়ামী লীগের বহু নেতাকে হত্যা করানো হয়েছিল। সেই খুনের আসামিরা আশ্রয় পেত মন্ত্রীদের বাসায়। সেই কলুষিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে এক দিনেই বের হওয়া যাবে না, সময় লাগবে। কিন্তু বের হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রাখতে হবে। দেশে প্রথম এমন উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এর প্রতি সর্বমহলের সমর্থন থাকা অত্যন্ত জরুরি।