গ্রাহকের ঘুষের টাকা ফেরত দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড

32

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পাঁচ মিনিটে বিদ্যুৎ সংযোগে রেকর্ডের পর এবার গ্রাহকের ঘুঘের টাকা ফেরত দিচ্ছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে গিয়ে কেউ ঘুষ দিয়ে প্রতারিত হলে আরইবিতে অভিযোগ করলে ষুষের টাকা ফেরত দেয়ার পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, ফেনী ও ময়মনসিংহ এলাকার গ্রাহকদের দেয়া ঘুষের টাকা ফেরত দিয়ে নতুন নজির স্থাপন করেছে দেশের সব থেকে বেশি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাটি।
সরকার সারাদেশে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের সম্প্রসারণ করছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে সারাদেশের সব মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হবে। বিদ্যুৎ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে গ্রাহকের বড় অভিযোগ আরইবির ঘুষ বাণিজ্য। এক শ্রেণীর দালাল স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীদের সঙ্গে মিলে গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুৎ দেয়ার কথা বলে ঘুষ আদায় করে আসছে। আরইবি বলছে, এমন অভিযোগ দেশের যেখান থেকেই আসছে সঙ্গে সঙ্গে তার সুরাহা করা হচ্ছে।
আরইবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলাধীন ভোজপাতিয়া ইউনিয়নের ৩টি গ্রামে নব নির্মিত বিদ্যুৎ লাইন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নামে দালাল চক্র অতিরিক্ত ৫০ হাজার ৮০০ টাকা গ্রাহকদের নিকট থেকে হাতিয়ে নেয়। কিন্তু বিষয়টি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নজরে এলে দালাল চক্রের কাছ থেকে ওই টাকা উদ্ধার করে তা গ্রাহকদের নিকট ফিরিয়ে দিল বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
শুধু বাগেরহাটে নয় ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ ও ফেনীতে গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা ঘুষের টাকা তুলে দিয়েছে আরইবি।
আরইবি বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার জানায়, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার ভোজপাতিয়া ইউনিয়নের বেতকাটা, জিয়লমারী ও মিরাখালী গ্রামের গ্রাহকদের নিকট থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে অমলেশ ও আলামিন নামে দুই ব্যক্তি গ্রাহকপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে উত্তোলনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে- মর্মে এলাকাবাসীর একটি অভিযোগপত্র বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট অভিযোগ আসে। আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মইন উদ্দিন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়।
বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ জাকির হোসেন তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কমিটি করে সরেজমিনে তদন্ত করার ব্যবস্থা নেন। তদন্ত শেষে দেখা যায়, সংযোগের নামে ১২৭ জন ব্যক্তির নিকট থেকে অতিরিক্ত ৪০০ টাকা করে নিয়েছে বলে প্রমাণ পায়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ফকিরহাট জোনাল অফিসের ডিজিএম মোঃ আহসানুল হক, মোল্লাহাট সাব জোনাল অফিসের এজিএম (ওএ্যান্ডএম) মোঃ তরিকুল ইসলাম এবং পাওয়ার ইউজ কো-অর্ডিনেটর মোঃ আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত ২ অক্টোবর ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার নামে নেয়া ঘুষের দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা ফেরত দেয় ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। পল্লী বিদ্যুৎ ফুলবাড়িয়া জোনাল অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আবুল বাশার মোল্লা নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে টাকা তুলেছিল। অন্যদিকে ফেনীর ফুলগাজীতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে আদায় করা ২০ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার পাশাপাশি একজন লাইন ম্যানকে বরখস্ত করেছে আরইবি।
এদিকে যে ঝিনাইদহ থেকে পাঁচ মিনিটে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয় সেখানেই ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। প্রায় দুই বছর আগে ১২৬ জনের কাছ থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজার ১০০ টাকা নিয়েছিলেন পল্লী বিদ্যুত সমিতির এক পরিচালক। ঝিনাইদহের শৈলকুপা পল্লীবিদ্যুত সমিতির খুলুমবাড়িয়া গ্রামের বসিন্দাদেরও সুদের অর্থ আদায় করে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুত সমিতি।
সারাদেশে ব্যাপকহারে বিদ্যুৎ বিতরণ সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে আরইবির বিরুদ্ধে। এতে করে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আরইবিও এত দিন ভাবমূর্তি সঙ্কটে ছিল। তবে আরইবি বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুত সংযোগের জন্য কোন দালাল না ধরার আহ্বান জানায়। স্থানীয়ভাবে মাইকিং করার পাশাপাশি শুক্রবারে জুমার নামাজের আগে গ্রামে গ্রামে বিদ্যুত সংযোগের জন্য আর্থিক লেনদেন না করার আহ্বান জানানো হয়।
গত বছর আরইবি ৫ মিনিটে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার নতুন কার্যক্রম শুরু করে যা দেশব্যাপী আলোচিত হয়।