কাজিরবাজার ডেস্ক :
সৌদি আরবের মদিনায় বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৩৬ জনের মধ্যে ১১ বাংলাদেশী বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে দুজন বাংলাদেশীর পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার দুই সহোদর। এ ছাড়া আরও ৬ জনের নাম জানা গেছে। জেদ্দায় বাংলাদেশ থেকে কারও নাম পরিচয় প্রকাশ না করলেও অসমর্থিত সূত্রে ৬ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মোকতার হোসেন, হুমায়ুন কবির, নাসির, রুহুল আমিন, মানু মিয়া ও সাকিব।
যদিও তাদের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেনি জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা বলেন, দুর্ঘটনায় কয়েকজনের নিহত হওয়ার বিষয়ে আমাদেরকে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আজ (রবিবার) জানাতে পারব।
এ বিষয়ে সৌদি আরবের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট। সে বিষয়ে রবিবার জানানো হবে জানিয়েছেন সচিব সেলিম রেজা।
ওই দুর্ঘটনায় নিহত দুই সহোদর হলেন- কাঞ্চন পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কলাতলী এলাকার হাবিব উল্লাহ্ মিয়ার ছেলে বড় ছেলে আব্দুল হালিম (৩২) ও মেজো ছেলে দ্বীন ইসলাম (২৮)। এ সময় একই বাসে থাকা ছোট ছেলে ইসলাম উদ্দিন (২৫) আহত অবস্থায় সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গত বুধবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টার দিকে আহত ছোট ছেলে ইসলাম উদ্দিন মোবাইল ফোনে তার পরিবারকে এ খবর জানান।
এদিকে একসঙ্গে দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। এলাকার আশপাশের শতশত লোকজন তাদের বাড়িতে সমবেদনা জানাতে আসছে। ছোট ভাই ইসলাম উদ্দিনের বরাত দিয়ে বোন সীমা আক্তার জানান, গত বুধবার কাজ শেষে জিহরা এলাকা থেকে মদিনায় ফেরার জন্য তারা ওমরা যাত্রীবোঝাই একটি গাড়িতে চড়েন। তারাসহ মোট ৩৯ যাত্রী নিয়ে বাসটি গন্তব্যস্থলে আসতেছিল। স্থানীয় সময় রাত ৭টার দিকে মদিনা থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে হিজরা রোডে একটি লোডারের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আব্দুল হালিম ও দ্বীন ইসলামসহ ৩৬ যাত্রী মৃত্যুবরণ করেন। গুরুতর আহত হন ইসলাম উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন। তাদের স্থানীয় আল হামনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তার তিন ভাই আব্দুল হালিম, দ্বীন ইসলাম ও ইসলাম উদ্দিন জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে বসবাস করে আসছেন। তারা সেখানে ঠিকাদারি কাজ করতেন। নিহত আব্দুল হালিমের আলাউদ্দীন নামে ৩ মাসের একটি ছেলে রয়েছে ও দ্বীন ইসলামের ১৪ মাসের হালিমা আক্তার নামে একটি কন্যা রয়েছে।
এ দিকে বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রের খবরে বলা হয়েছে গত ১৬ অক্টোবর মদিনায় যে বাস দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ৪০ যাত্রী ছিলেন। বাসটি মদিনা থেকে মক্কা যাচ্ছিল। বাস দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩৬ জন। আর আহত হয়েছেন ৪ জন। বাসে ১৩ জন বাংলাদেশী ছিলেন। তবে ১৩ জনের মধ্যে ২ জন বাংলাদেশী মদিনা নেমে যান। বাকিরা বাসের অগ্নিকা-ে দগ্ধ হয়ে মারা যান। বাসযাত্রীদের শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তাই তাদের চেনা যাচ্ছে না। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে মদিনায় বাস দুর্ঘটনায় নিহতের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইব্রাহিম বিন আব্দুল আজিজ আল আসফের কাছে পাঠানো এক শোক বার্তায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তিনি।