বাংলাদেশের সোনালি আঁশ হিসেবে খ্যাত পাটের সেই সুদিন আর নেই। পলিথিন বা সিনথেটিক আঁশের ক্রমাগত বিস্তারে পাটের কদর অনেকটাই কমে গেছে। অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। যে কয়টি পাটকল এখনো চলছে সেগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। সরকার অনেক চেষ্টা করেও পাটকলগুলোর লোকসান ঠেকাতে পারছে না। বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের প্রায়ই রাস্তায় নামতে দেখা যায়। এ অবস্থায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক কিছুটা হলেও সুখবর দিয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সামগ্রিকভাবে রপ্তানি খাতে নেতিবাচক ধারা চললেও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২ শতাংশ। এই আয় এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এক কোটি ২৪ লাখ ডলার বেশি। এই তিন মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২২ কোটি ডলার। আশা করা যায়, অর্থবছরের বাকি সময়েও প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
প্লাস্টিক-পলিথিনের অপরিমিত ব্যবহার নিয়ে সারা দুনিয়ায় ব্যাপক শঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুধু ভূ-পৃষ্ঠ বা চাষাবাদের জমিই নয়, সাগরকেও মারাত্মকভাবে দূষিত করছে প্লাস্টিক পণ্য। জীবজগতেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে দুনিয়াব্যাপী আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। ৩২টি দেশ এরই মধ্যে প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশ আগামী জানুয়ারি থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। সিনথেটিক ফাইবারের ব্যবহারও নিরুৎসাহ করা হচ্ছে। ফলে পাটের সুতা ও ব্যাগের কদর পুনরায় বাড়তে শুরু করেছে। এই সুযোগ বাংলাদেশকে পুরো মাত্রায় কাজে লাগাতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে পাটের তৈরি সুতা ও ব্যাগের মানোন্নয়ন করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশের মাটি পাট চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আগে বৈশ্বিক উৎপাদনের বেশির ভাগই হতো এই বাংলাদেশ ভূখণ্ডে। সাম্প্রতিক সময়ে পাটের উৎপাদন লাভজনক না হওয়ায় অনেক কৃষক পাট চাষ বন্ধ করে দিয়েছে। তার পরও বিশ্বে এখন যে পরিমাণ পাট উৎপাদন হয় তার ২৬ শতাংশেরও বেশি হয় বাংলাদেশেই। এর মধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা পাটের জিনোম আবিষ্কার করেছেন। গবেষণার মাধ্যমে পাটের উন্নত জাত আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে, যাতে পাটের মান ও উৎপাদন দুটোই ভালো হয়। আমাদের বিশ্বাস, সে ধরনের উন্নত জাত উদ্ভাবনেও আমাদের বিজ্ঞানীরা সফল হবেন। আমাদের প্রায় সব পাটকলই পুরনো প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে। পাটকলগুলোর মানোন্নয়নেও সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। পাটের বিকল্প ব্যবহার বাড়ানোর জন্যও গবেষণা চলমান রাখতে হবে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের সোনালি আঁশ শিগগিরই তার হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারবে।