সিলেট আ’লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তোফায়েল আহমেদ ॥ এখন গ্রামেও এয়ারকন্ডিশন আছে এটাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ॥ নতুন কোন ইউনিটের কমিটি করতে না পারার জন্য আপনাদের ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত ছিল- হানিফ

18
মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এমপি তোফায়েল আহমদ।

স্টাফ রিপোর্টার :
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর গ্রামকে শহরে পরিণত করেছেন। এয়ারকন্ডিশন আগে কেবল শহরে দেখা যেত। এখন গ্রামেও আছে। এটাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ। যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার বেলা ২টার দিকে নগরীর রিকাবীবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটরিয়ামে সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমানের পরিচালনায় বর্ধিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কার্যনির্বাহী সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, কেন্দ্রীয় সদস্য রফিকুর রহমান, সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ও সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, ছয় দফা দেওয়ার পর আটবার গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু। নিজেও জীবনে অনেকবার কারাগারে গিয়েছি। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকা অবস্থায় ছিলাম কুষ্টিয়ার কারাগারে। তিনি বলেন, ৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ আমরা বাজাতে পারতাম না। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন। তখনও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি। সেই সময়ে আলোকবর্তিকা হয়ে বিধ্বস্ত আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করে চলেছেন। তার নেতৃৃত্বেই আমরা এখন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে জিডিপিতে শ্রেষ্ঠ অবস্থানে রয়েছি। সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করি। তিনি বলেন, আজ সিলেটে এসে জানলাম আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্তি। উপজেলা কমিটি করা করা হয়নি। এটা শেখ হাসিনার দলে মানায় না। তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। এই মহান নেতার কর্মী হিসেবে আমরা যেন কলুষিত না হই, আমরা যেন কলঙ্কমুক্ত থাকি। সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, সৌদি আরবে নারী শ্রমিক নির্যাতন ও হত্যা রোধে সরকার সবধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, নারী কর্মীদের নির্যাতনের বিষয়ে সৌদি আরবের আইনে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তবে কুটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধনে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। মন্ত্রী আরো বলেন, সম্প্রতি এ বিষয়ে সৌদি সরকারের সাথে আলোচনা হয়েছে, আগামী নভেম্বরে সৌদি আরব সফরে এসব সমস্যা নিয়ে ফের সৌদি সরকারের সাথে কথা বলবেন তিনি। সমস্যা সৃষ্টির জন্য অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি নারী কর্মীদের বয়স জালিয়াতিকে দায়ী করে মন্ত্রী বলেন, এসব বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সম্প্রতি সৌদি আরবে নির্যাতনে নিহত মানিকগঞ্জের একজন নারী গৃহকর্মীর লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি জানান, সেখানে আইনী জটিলতা রয়েছে। তা সমাধান হয়ে গেলে লাশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সাম্প্রতিক সৌদি আরব থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন বেশ কিছু নারী শ্রমিক। এদের অনেকে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথাও জানিয়েছেন। দেশে আসার সময় প্রাপ্য বেতনও তাদের দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিত এই নারীরা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি বলেন, নভেম্বরে শেষ দিকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে। এর আগে অক্টোবরের মধ্যে সিলেটের যে কয়টি ইউনিয়নে কমিটি নেই সেগুলো করতে হবে এবং পরবর্তীতে উপজেলাগুলোর সম্মেলন করে জেলার সম্মেলন আয়োজন করার জন্য তিনি নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে সিলেটে এসে শুনে গিয়েছিলাম যে কয়টি কমিটি আছে ২০১৯ সালেও এসে শুনি এগুলোই আছে। নতুন করে কোন ইউনিটের কমিটি করা হয়নি। এটা অবশ্যই ব্যর্থতার পরিচয়। দায়িত্বশীলদের উচিত ছিল এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করা। হানিফ বলেন, সিলেটে যে কয়বার সভা করতে আসি, শুনি আপনরা ঐক্যবদ্ধ হবেন। কিন্তু আজও আপনারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেননি।
জিকে শামীমের চাঁদার ডায়েরিতে ফখরুলের নাম আছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ আরো বলেন, মির্জা ফখরুলকে বলেছিলাম, ক্যাসিনোর বিষয়ে সাংবাদিকদের বলছেন, কিন্তু বলার আগে একশ বার ভাববেন। কারণ, জিকে শামীমের চাঁদার বইয়ে অনেকের সঙ্গে আপনার নামও আছে। তাই বলা যায় না, আপনিও (ফখরুল) মাসিক চাঁদা নেওয়ার জন্য ধরা খেয়ে যেতে পারেন। আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, জিকে শামীমের মতো লোকেরা দলে অনুপ্রবেশকারী। আগে যুবদল করতো, মির্জা আব্বাসের হাত ধরে উঠেছে। আরেকজন করতো অন্য সংগঠন। আওয়ামী লীগকে এসব অনুপ্রবেশকারী থেকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রায় ১১ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। তাই অনেকে অনুপ্রবেশ করছে, করতেও চায়। যেমন জোয়ারের পানি যখন ঢোকে, তখন সাপও ঢোকে, ব্যাঙও ঢোকে। আমাদের অবস্থাও তাই। সিলেটে আওয়ামী লীগের কোন্দল নিয়ে তিনি আরো বলেন, এখানে সাংগঠনিক বিষয়ে অনেক কথা এসেছে। নির্বাচন আসতেই দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান। তারা আওয়ামী লীগের হতে পারে না। শৃঙ্খলা ভঙ্গে যারা অভিযুক্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জাতীয় সম্মেলন নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সম্মেলনের আগেই জেলা থেকে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ের কাউন্সিল সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নভেম্বরে শেষ দিকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে। এর আগেই আমাদের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলার কাউন্সিলর সম্পন্ন করতে হবে। তাহলেই আমরা ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলন করতে পারবো।