কাজিরবাজার ডেস্ক :
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল নিপীড়ন রোধ করতে, শোষণ-বঞ্চনা-ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে। বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞা নিয়ে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে।
রবিবার দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগই দেশকে আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে নিচ্ছে। বাংলার হারানো স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই এই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগই দেশ ও জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বাংলার জনগণ কিছু না কিছু পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ আজ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাঙালি জাতি সমগ্র বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। সেই সম্মান আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি, যে মর্যাদা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বাঙালি জাতি হারিয়েছিল। বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব- আজকের দিনে এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা।
তিনি বলেন, নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগ এখন দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। বক্তৃতার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী দেশের সব থেকে প্রাচীন এবং বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, চার জাতীয় নেতা এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মাহুতি দানকারী দলের নেতা-কর্মীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ, বর্ণিল নানা আয়োজন ও যথাযোগ্য মর্যাদায় রবিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পালিত হয়েছে আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। জন্মদিনের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই সাম্প্রদায়িকতা-মাদক ও জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
সকালে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরিয়ে দেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতি। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসংখ্য সংগঠনের ব্যানারে উপস্থিত সবার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে- ‘শুভ শুভ শুভ দিন, আওয়ামী লীগের জন্মদিন’ ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘জামায়াত শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই, দিতে হবে’, ‘মুজিবের বাংলায় খুনীদের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি নানা স্লোগান।
সকাল সাড়ে ৮টায় প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। পুষ্পস্তবক অর্পণের পরে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকবার শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। অন্যদের সঙ্গে শেখ হাসিনাও গলা মেলান জাতীয় সঙ্গীতে। এরপর পায়রা অবমুক্ত করার পাশাপাশি বেলুনও ওড়ানো হয়। পরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের ভেতরে যান এবং সেখানে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের, সাহারা খাতুন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ ফারুক খান, এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শম রেজাউল করিম, রেলপথ মন্ত্রী এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মেজবাহউদ্দিন সিরাজ, বিএম মোজাম্মেল হক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন প্রমুখ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকা ত্যাগ করার পর একে একে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ, তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগ, ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীজুড়ে আন্দোলন-সংগ্রাম, অর্জন-সাফল্যের বর্ণিল আলোকসজ্জায় সেজেছে আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটি এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্মৃতিবিজড়িত পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেন হয়ে নবাবপুর রোড, নবাবপুর রোড থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ রাজধানীজুড়ে আলোকসজ্জা ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ডে এক অনন্য মাত্রায় সেজে উঠেছে। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কের আইল্যান্ড, রাস্তার দুইপাশ, লাইট পোস্টে রঙিন আলোকসজ্জা করা হয়েছে।