খালেদ ফের ১০ দিন, লোকমান দু’দিনের রিমান্ডে

32

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ক্যাসিনো ব্যবসার সূত্র ধরে দুইভাবে অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে। প্রথম দফায় ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জামের অধিক দাম দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়েছে। আর ক্যাসিনোর মাধ্যমে উপার্জিত অবৈধ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে দ্বিতীয় দফায় অর্থ পাচার করার ঘটনাটি ঘটেছে। দশটি কোম্পানির নামে ক্যাসিনোসামগ্রী আমদানি করে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। ওইসব কোম্পানির বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। সত্যিকার অর্থেই ওইসব কোম্পানি ক্যাসিনোসামগ্রী আমদানি করেছে, নাকি তাদের নাম দিয়ে অন্যকোন কোম্পানি আড়ালে বসে ক্যাসিনোসামগ্রী আমদানি করেছে তার আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা চলছে। ক্যাসিনোর অর্থ পাচারের সঙ্গে কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ খতিয়ে দেখছে সিআইডির মানিলন্ডারিং বিভাগ।
এদিকে জুয়ার বড় আসর হিসেবে পরিচিত ক্যাসিনো চালানোর দায়ে গ্রেফতার হওয়ার পর বহিষ্কৃত ঢাকা মহানগর যুবলীগের দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে আবারও দশ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। এছাড়া সদ্য গ্রেফতারকৃত মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে আদালত দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দশটি কোম্পানির নামে ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে এদেশে ক্যাসিনোসামগ্রী আনা হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্যাসিনোসামগ্রী আনা হয়েছে। ২০১৭ সালে মাত্র কয়েকটি চালান এসেছে। ক্যাসিনোসামগ্রীর সবচেয়ে বেশি চালান এসেছে ২০১৮ সালে। ওই বছর কয়েকশ’ কোটি টাকার ক্যাসিনোসামগ্রী আনা হয়েছে। এসব ক্যাসিনোসামগ্রীর অধিকাংশই এসেছে বন্দর দিয়ে। দেশে আসা ক্যাসিনোসামগ্রীর অধিকাংশই চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জেও বেশ কয়েকটি ক্যাসিনোসামগ্রীর চালান খালাস হওয়ার তথ্য মিলেছে। এসব ক্যাসিনোসামগ্রী খালাস হওয়ার পর কোথায় স্থাপন করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে।
আমদানি করা ক্যাসিনোসামগ্রীর মধ্যে রোলেট টেবিল, বোর্ড থেকে শুরু করে টাকার বিপরীতে কয়েন পর্যন্ত আনা হয়েছে। এসব কয়েনের গায়ে বিভিন্ন অঙ্ক লেখা আছে। অঙ্ক অনুযায়ী ওই কয়েনের মান নির্ধারণ করা হতো। কোন কয়েনের গায়ে পাঁচ লেখা থাকলে তাকে পাঁচ হাজার টাকা হিসেবে গণনা করা হতো। পাঁচ হাজার টাকা ক্যাশে জমা দেয়ার পর তাকে পাঁচ লেখা একটি কয়েন দেয়া হতো।
সূত্রটি বলছে, সে দশটি কোম্পানির নামে ক্যাসিনোসামগ্রী আনা হয়েছে, তার মধ্যে দেশের অন্যতম একটি অত্যন্ত সুপরিচিত কোম্পানির নামও আছে। এছাড়া আরও দুইটি কোম্পানি বেশ পরিচিত। বাকি কোম্পানিগুলোর তেমন কোন পরিচিতি নেই। বড় বড় কোম্পানির নামে আনা ক্যাসিনোসামগ্রী, সত্যিকার অর্থেই ওইসব কোম্পানি এনেছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। যেসব কোম্পানির নামে ক্যাসিনোসামগ্রী আনা হয়েছে, সেসব কোম্পানির বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে।
দায়িত্বশীল সূত্রটি বলছে, অতীতে ওইসব কোম্পানির নামে অবৈধ মালামাল আসার কোন তথ্য পাওয়া না যাওয়ায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যেই যেসব দেশ থেকে ক্যাসিনোসামগ্রী আনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেইসব দেশের ওইসব কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ওইসব দেশ থেকে আমদানি করা ক্যাসিনোসামগ্রী কাদের নামে, কি প্রক্রিয়ায় এবং তার দাম সত্যিকার অর্থে কত সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি বিশ্ব বাজারে যেসব দেশে ক্যাসিনোসামগ্রী সহজলভ্য এবং যেসব দেশে ক্যাসিনো সরকারীভাবে স্বীকৃত সেসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ইন্টারনেটে আমদানি করা ক্যাসিনোসামগ্রীর দাম দেখা হচ্ছে। তাতে দেখা গেছে, আমদানি করা ক্যাসিনোসামগ্রীর দাম তুলনামূলক অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। দাম বেশি দেখিয়ে কম দামের ক্যাসিনোসামগ্রী আমদানির মাধ্যমে অর্থপাচার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বড় বড় কোম্পানির নামে ক্যাসিনোসামগ্রী আনার ঘটনাটিতে বেশ গরমিল রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বন্দর থেকে আমদানি করা পণ্য সহজেই ছাড় করাতে এবং কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছে দিতেই বড় কোম্পানির নামে ক্যাসিনোসামগ্রী আনা হতে পারে। যে কোম্পানির নামে ক্যাসিনোসামগ্রী আনা হয়েছে, ওই কোম্পানিগুলো বিষয়টি জানে কিনা বা এর সত্যতা কতটুকু তা যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।
মানিলন্ডারিং মামলার তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ৪১ কোটি টাকা অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাংকে থাকার তথ্য মিলেছে। অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ ও এএনজেড ব্যাংকে ওই টাকা আছে। লোকমান আরও কোন দেশে অর্থ পাচার করে থাকতে পারেন। শুধু মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দেহরক্ষী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নয়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যারাই গ্রেফতার হয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধেই মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। ক্যাসিনোর অধিকাংশ টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।
ব্যাংকে তাদের নানা লেনদেনের পর্যালোচনা চলছে। সেইসব লেনদেনের মধ্যে কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও লেনদেনের তথ্য আছে। এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইয়ুব বাদ্রার্স, এ্যাসেঞ্জার, ঢাকা হাইডস্কিন, বিএলসি কোম্পানিসহ মোট দশটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রায়াত্ত কয়েকটি ব্যাংকের ঢাকার বেশ কিছু শাখার মাধ্যমে কয়েকশ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি টাকাগুলো ক্যাসিনোর হতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দেখছে সিআইডির মানিলন্ডারিং বিভাগ।
এদিকে শুক্রবার খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে সাত দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে র‌্যাব। মামলার তদন্তের জন্য অস্ত্র ও মাদক মামলায় আরও দশ দিন করে ২০ দিনের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-৩ এর এএসপি বেলায়েত হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দিদারুল আলম দুই মামলায় পাঁচ দিন করে দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। প্রসঙ্গত, খালেদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংসহ মোট চারটি মামলা হয়েছে।
অন্যদিকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। শুক্রবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে তাকে রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন মনিপুরী পাড়া থেকে মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়।
র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, মোহামেডান ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো ভাড়া দিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। তার উপার্জিত টাকার মধ্যে ৪১ কোটি অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ ও এএনজেড ব্যাংকে রাখা আছে।