কাশ্মীরে নিখোঁজ ১৩ হাজার শিশু-কিশোর

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে কাশ্মীরে ১৩ হাজার নাবালক (শিশু-কিশোর) নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রগতিশীল মহিলা সংগঠনের সদস্যরা।
নয়া দিল্লি থেকে সাংবাদিক অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানিয়েছে কলকাতাভিত্তিক দৈনিক এই সময়।
দেশটির সমাজকর্মী ও বামপন্থী আন্দোলনের নেত্রী অ্যানি রাজা, যোজনা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য সঈদা হামিদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি ৩৭০ ধারা বিলোপের এই সিদ্ধান্ত কাশ্মীরের অধিবাসীদের একজোট করেছে, যাবতীয় ছোটখাটো বিভেদকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আট থেকে আশি সবাই এখন ভারত সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কথা বলছে। প্রত্যেকেরই অভিমত হলো, সরকার তাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিয়েছে।
গত ৫ আগস্ট সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলে ১৪৪ ধারা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। একই সঙ্গে সব স্কুল-কলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গৃহবন্দিসহ অনেক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোটা রাজ্যে মোবাইল টেলিফোন আর ইন্টারনেট সেবা আংশিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিবিসির সাংবাদিক সামির হাশমি দক্ষিণ কাশ্মীরের অন্তত ছয়টি গ্রাম ঘুরে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের মারধর এবং নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছিলেন।
গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যানি রাজা অভিযোগ করেন, ‘যে গ্রামগুলোতে আমরা গিয়েছিলাম, সেখানকার অধিকাংশ বাড়িতে ছোট-ছোট ছেলেরা নিখোঁজ। এদের ধরে নিয়ে গিয়েছে সেনাবাহিনী ও আধা সেনা সদস্যরা। তাদের অভিভাবকরা খোঁজ নিতে গেলে তাদের বলা হচ্ছে তিন রাজ্যের জেলে গিয়ে খোঁজ নিতে। সেখানে গেলে দেখা যাচ্ছে জেলের বাইরের দেওয়ালে একটি তালিকা আটকানো রয়েছে, যেখানে নাম রয়েছে কাশ্মীরি অধিবাসীদের। এভাবে অগণিত কাশ্মীরি ছোট ছোট ছেলে জেলের মধ্যে রয়েছে।’
যোজনা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ও সাবেক আমলা সঈদা হামিদের জন্ম কাশ্মীরে। ছোট থেকেই তিনি কাশ্মীরে বড় হয়েছেন। কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি বোঝাতে গেলে বলতে হয় এই উপত্যকার পরিস্থিতি এখন বড় বেশি শান্ত, বড় বেশি অবসাদগ্রস্ত। সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণের সঙ্গে কথা বলার পরে আমরা প্রাথমিকভাবে যে হিসাবে পেয়েছি, তাতে দেখা যাচ্ছে ৩৭০ ধারা বিলোপের পরে উপত্যকা থেকে নিখোঁজ হয়েছে প্রায় তের হাজার নাবালক।’
প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য আইনজীবী পুনম কৌশিকের দাবি, ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে কাশ্মীরের সর্বত্র রাত আটটার মধ্যে সব বাড়ির আলো নিভিয়ে দিতে হয়। তা না হলে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর রোষানলে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় জনগণকে।
পুনম আরও দাবি করেন, ‘আমরা জম্মু-কাশ্মীর বার অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে গিয়ে তালা ঝুলতে দেখেছি। স্থানীয় আইনজীবীরা আমাদের জানিয়েছেন, আদালতে কোনো কাজ হচ্ছে না। কার্যত পুরো বিচারব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়েছে। দেশের সংবিধানের কোনো অস্তিত্ব নেই এই উপত্যকায়। মারাত্মক ভয়, গ্লানি আর অসম্মানকে সঙ্গী করে বাঁচার জন্য রোজ লড়াই করতে হচ্ছে।’
উপত্যকা থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশের কী অবস্থা হয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন অ্যানি রাজা। তিনি বলেন, ‘আগে যতবার কাশ্মীরে গিয়েছি, দেখেছি সেখানকার পুলিশের হাতে বন্দুক। এবার দেখলাম সবার হাতে লাঠি। কারণ জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারলাম, উপরের আদেশে বন্দুক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই বন্দুক প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছেন কাশ্মীরের পুলিশের সদস্যরা? তারা বলছেন আর জঙ্গিদের হাতে বন্দুক ছিনতাইয়ের ভয় থাকবে না। কিন্তু এবার কোনো জঙ্গি হামলা হলে পাল্টা দেওয়ার কোনো সুযোগ আর থাকবে না।’