দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠনে শুদ্ধি অভিযান

15

দেশের সব মানুষের দৃষ্টি এখন শুদ্ধি অভিযানের দিকে। চলমান অভিযানে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত মহল এবং টেন্ডারবাজ ও চাঁদাবাজ নেতাদের অনেকে গাঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ দেশও ছেড়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। অনেকে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ কাউন্সিলরকে এখন আর কার্যালয়ে দেখা যাচ্ছে না। বন্ধ রয়েছে ঢাকা শহরে যুবলীগের কার্যালয়গুলোও। যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যের ব্যাংক হিসাব তলব করার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেও। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের দুই নেতার বাড়ি থেকে পাঁচ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, আট কেজি স্বর্ণালংকার ও ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে র‌্যাব। নিজেদের বাড়িতে সব টাকা রাখার জায়গা না থাকায় তাঁরা অনেক টাকা বন্ধু বা কর্মচারীর ফ্ল্যাটে রাখেন বলেও জানা গেছে। এমনকি অস্ত্রও রেখেছেন কর্মচারীর বাসায়। কোটি কোটি টাকার বান্ডেল সুরক্ষিত রাখার জন্য তাঁরা বানিয়েছিলেন লোহার ভল্ট। গণমাধ্যমের খবর, নগদ টাকা রাখতে সমস্যা হওয়ায় তাঁরা স্বর্ণালংকার কিনে রাখা শুরু করেন। রিমান্ডে থাকা যুবলীগ নেতা খালেদ ও জি কে শামীম জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিদিন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন। জিজ্ঞাসাবাদে যুবলীগ নেতা খালেদ ঢাকায় ৬০টি ক্যাসিনোর নিয়ন্ত্রক ২৫ জনের নাম বলেছেন। তাঁদের মধ্যে যুবলীগের পাশাপাশি মতিঝিলের আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এবং গুলশান ও মতিঝিল এলাকার কয়েকজন কাউন্সিলর রয়েছেন। একসময় যাঁরা বিএনপির রাজনীতি করতেন, তাঁরাও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্যাসিনো কারবারে জড়িয়ে পড়েছেন। জি কে শামীম চক্রের দখলদারির আরো খবর ছড়িয়ে পড়ছে। বান্দরবানে সম্পদের পাহাড়, জিম্মায় ছিল পুলিশ। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন অবৈধ ক্যাসিনোতে কাজ করা ৯ নেপালি নাগরিককে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন রমনা থানার এক কনস্টেবল এবং একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই সদস্য। শুধু ক্লাবই নয়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট বাড়িতেও অবৈধ ক্যাসিনো চলছে। এসব ক্যাসিনো চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এমন ২১টি ক্যাসিনোর বিষয়ে তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।
চলমান অভিযানে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নাম এলেও সাধারণ মানুষ এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে। জনমানুষের সমর্থন পেয়েছে এই শুদ্ধি অভিযান। সব শ্রেণি ও পেশার দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শুদ্ধি অভিযান চলুক—এ মর্মে জনমতও গড়ে উঠেছে। প্রত্যাশিত দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এ ধরনের অভিযান কার্যকর ভূমিকা রাখবে।