জাহাঙ্গীর আলম খায়ের বিশ্বনাথ থেকে :
গুনিয়া খালে মাছ ধরা নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা, লামাকাজি ও খাজাঞ্চী ইউনিযনের তিন গ্রমাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বরাজ করছে। যে কোন সময় সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী। তিন পক্ষের এক পক্ষে রয়েছেন লামাকাজি ইউনিয়নের প্রতাবপুর ও খাজাঞ্চী ইউনিয়নের মাখরগাঁও গ্রামবাসী। আর অন্য পক্ষে রয়েছেন রামপাশা ইউনিয়নের আমতৈল গ্রমবাসী। গুনিয়া খালে প্রতি বছরই ভেজাল দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করেন আমতৈল গ্রামের মৎস্যজীবীরা। সম্প্রতি আমতৈল গামের মৎস্যজীবীদের ওই খালে মাছ ধরতে বাধা দেন খালের পাড়ের প্রতাবপুর ও মাখরগাঁওর গ্রামের বাসিন্দারা। ফলে ওই তিন ইউনিয়নের তিন গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রতাবপুর ও মাখরগাঁও গ্রামবাসীর পক্ষে রয়েছেন প্রতাবপুরের সাবেক ইউপি সদস্য সহিদ আহমদ, মাখরগাঁওয়ের দুদু মিয়া, রইছ আলী ও সৈয়দ আলী। প্রতিপক্ষ মৎস্যজীবী আমতৈল গ্রামবাসীর পক্ষে রয়েছেন তৈয়বুর রহমান রাকিব, আবুল কাশেম মেম্বার ও হুমায়ূন কবির।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতাবপুরের সাবেক ইউপি সদস্য সহিদ আহমদ এ প্রতিবেদককে বলেন, উন্মুক্ত হলেও প্রতাবপুর ও মাখরগাঁও গ্রমাবাসীসহ পার্শ্ববর্তী অন্যান্য গ্রামের লোকজন হাওরের কৃষি কাজের জন্য শুকনো মৌসুমে খালে বাঁধ দিয়ে পানি জমা করে সেচ কাজে ওই খালের পানি ব্যবহার করেন। বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় আমতৈল গ্রামের মৎস্যজীবীদের কাছে তারা ভেলজাল বিক্রি করেন এবং ওই টাকা খালে বাঁধ নির্মাণের কাজে ব্যয় করেন। বর্তমানে আমতৈলের মৎস্যজীবীরা জোরপূর্বক ওই খালটি দখল করে মাছ ধরতে চান। অন্যদিকে প্রতিপক্ষ আমতৈলের মৎস্যজীবীদের দাবি উন্মুক্ত থাকায় তারা ওই খালে মাছ ধরতে চান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার মদনপুর মৌজার লামাকাজী ইউনিয়নের মাখরগাঁও ও খাজাঞ্চী ইউনিয়নের প্রতাবপুর গ্রামের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গুনিয়া খাল। খালের দু’পাশে দুই হাওরে কৃষি কাজের প্রয়োজন থাকায় খালটি বড় হলেও বন্দোবস্তের আওতায় নেওয়া হয়নি, হয়নি জলমহালের তালিকাভূক্তও। কিন্তু তারপরও বর্ষা মৌসূমে মাখরগাঁও ও প্রতাবপুর গ্রামের লোকজন আমতৈল গ্রামের মৎস্যজীবীদের কাছে ভেল-জাল দিয়ে মাছ ধরার জন্য বিক্রি করন। আর শুকনো মৌসুমেও তারা খালে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করেন। আর ওই টাকা দিয়ে খালে বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে পানি সরবরাহ করেন। গত ৩ জুলাই প্রতাবপুর ও মাখরগাঁও পক্ষের সাবেক মেম্বার সহিদ আহমদা, দুদু মিয়া, রইছ আলী ও সৈয়দ আলীর বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবরে স্মারকরিপি দেন মৎস্যজীবী আমতৈল গ্রামের তৈয়বুর রহমান রাকিব, আবুল কাশেম মেম্বার ও হুমায়ূন কবির। বিষয়টি তদন্তের দায়ীত্ব দেওযা হয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমা তুজ জোহরাকে। পরবর্তীতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। শুনানী শেষে গুনিয়া খালে মাছ ধরতে সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরদিনই সকালে আমতৈল গ্রামের শতাধিক মৎস্যজীবীরা খালে মাছ ধরতে গেলে তাদের বাঁধা দেন প্রতিপক্ষ মাখরগাঁও ও প্রতাবপুর গ্রামের লোকজন। এ ঘটনা দিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় ৮দিন ধরে উভয় পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মৎস্যজীবীরা খালে মাছ ধরতে গেলে যে কোন সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমা-তুজ-জোহরা এ প্রতিবেদককে বলেন, গুনিয়া খালে সবার জন্য মাছ ধরা উন্মুক্ত এবং খালে বাঁধ নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। খালে মাছ ধরতে কাউকে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ পেলে বাঁধ নির্মাণ করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্বনাথ থানার ওসি শামীম মুসা এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর মাছ ধরা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ বিষয়টি নিয়ে যাতে সংঘর্ষ না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেওয়া হবে বলে জানিযেছেন তিনি।