রেজিষ্ট্রারী মাঠে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ॥ খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন

20
রেজিষ্ট্রারী মাঠে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তিনি নেতাকমীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চান? তাহলে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর ঐতিহাসিক রেজিষ্ট্রারী মাঠে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীমের সভাপতিত্বে শুরু হয় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। বেলা ১টা থেকেই বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসা শুরু করেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ ও সিলেট মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী।

বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদির লুনা, খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এনি, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, যুবনেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ, সহ ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসোইন, সাবেক সভাপতি ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, বিএনপি নেতা হুমায়ন কবির খান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুর্তাজুল করিম বাবলু, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব হাসান জাকির তুহিন, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, কেন্দ্রীয় তাঁতীদলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, মীর হেলাল উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবির খান প্রমুখ। সমাবেশে এ সময় বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী হলেন খালেদা জিয়া। এই নেত্রী যখন সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়ান, তখন চারদিকে আলোকজ্যোতি বের হয়। মনে হয় একটা নূর ছড়িয়ে পড়ে। এই নূর হচ্ছে স্বার্বভৌমত্বের নূর, গণতন্ত্রের নূর, ধর্মের নূর। ইতিহাস সৃষ্টি করা এই নেত্রীকে মুক্তি দিতেই হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে।
সমাবেশে প্রশাসনের বাধা প্রদানের অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, গত সোমবার তারা হঠাৎ করে সমাবেশ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল কেন? এর কারণ, কয়েকদিন আগে সিলেটে ছাত্রদল মিছিল করেছিল, তাতে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেছিল। এতে তারা ভয় পেয়েছিল। তিনি বলেন, ভয় পাওয়া ভালো। এমন ভয় তাদের পেতে হবে। সরকারকে অবৈধ সরকার উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের এই সরকার কোনো সরকার নয়। এরা বৈধ সরকার নয়। এরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তারা নির্বাচনের আগের দিন রাতে ভোট ডাকাতি করেছে। তারা নিজেরা ভোট ডাকাতি না করে প্রশাসন যন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে ভোট ডাকাতি করেছে। তারা জনতার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা অস্ত্রের জোরেই ক্ষমতায় বসে আছে। এজন্য আমরা তাদের অবৈধ সরকার বলি।
আওয়ামীলীগ সরকার দেশকে পরিকল্পিতভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সুপরিকল্পিতভাবে, সুচিন্তিতভাবে এই দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। তারা একটি করে রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। প্রশাসনেও দলীয়করণ করা হয়েছে। সংসদ নাই, একটি গৃহপালিত বিরোধীদল সেখানে বসে আছে। তিনি বলেন, এই সরকারের প্রতিপক্ষ এখন জনগণ, কোন রাজনৈতিক দল নয়। বিগত নির্বাচনে আমাদের একজন ভোটারও ভোট দিতে পারেননি। অথচ সংবিধানে লেখা আছে জনগণ ক্ষমতার মালিক। আপনারা ভোট দিতে পেরেছেন? শুধু আজকে না, স্বাধীনতার পরেও একই কায়দায় ভোট কেড়ে নিয়েছিল। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। করে না বলেই একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। তাদের দুঃশাসনে সেদিন দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানী, প্রয়াত বিএনপি নেতা সাইফুর রহমান ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে স্মরণ করতে গিয়ে ইলিয়াস আলী প্রসঙ্গে মির্জা ফকরুল বলেন, ইলিয়াস আলী ছয় বছর ধরে নিখোঁজ। কয়েকদিন আগে ইলিয়াস আলীর বাসায় গিয়েছিলাম। আমরা তাকে খুঁজে বের করতে পারিনি। আজকে শত শত পরিবার স্বজন হারানোর বেদনায় বেদনার্ত। তাদের পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে যখন বসি, তখন চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। একজন নয়, দুজন নয় ৫০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। এক লাখের ওপরে মামলায় ২৬ লাখ মানুষকে আসামি করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, এখন ঘরে ঘরে ক্যাসিনো। দেশের মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিন সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে। সরকারের সবাই লুটেরা। মেঘা প্রকল্পের নামে মেঘা লুট হচ্ছে। এ সরকার জনগণের সরকার নয়, জনবিরোধী সরকার। তারা দেশের সব ক্ষেত্রকে ধ্বংস করে ফেলছে। তারা বলে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। এমন রোল মডেল হয়েছে যে এখন ঘরে ঘরে ক্যাসিনো পাওয়া যাচ্ছে। মহাসচিব বলেন, ক্যাসিনো অভিযানে যে-ই ধরা পড়ছে, তাকেই বলা হচ্ছে বিএনপির লোক। যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেছেন, তার নেতাকর্মীরা অপকর্ম করেছেন, পুলিশ প্রশাসন ১২ বছর কী করছিল। ১২ বছর ধরে জুয়া, ক্যাসিনো চলছে। সরকার ধরতে পারেনি। এখন যখন ধরা পড়ে গেছে, তখন বলছে বিএনপি সরকারের আমল থেকে এটা চলে আসছে। তাহলে ১২ বছর কি করছিল? আঙ্গুল চুষছিল। এখন ঘরে ঘরে ক্যাসিনো। জুয়ায় ভাসছে সারা দেশে।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গা দুই বছর হয়ে গেল, একজনকেও ফেরত পাঠাতে পারেনি সরকার। তাদের কূটনৈতিক তৎপরতা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব এখন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বিরোধীদলের সাহায্য চাচ্ছেন। আমরাতো আগেই সাহায্য দিতে চেয়েছিলাম।
কুকুরের জন্য মুগুরের প্রয়োজন মন্তব্য করেছেন হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় সম্পাদক জিকে গৌছ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া আর কোনো বিকল্প আমাদের সামনে নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মুক্তাদির বলেন, বর্তমান সরকার মাদক জুয়ায় আসক্ত। ড্রাইভার পিওনকে দিয়ে জুয়ার আসর বসিয়ে দুই একজনকে গ্রেফতার করলেই সরকারের ইমেজ বাড়বে না। ইমেজ বাড়াতে হলে অবাদ সুষ্ঠু নির্বাচন দিন।
নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদির লুনা বলেন, দেড় বছরের অধিক সময় ধরে খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দী আছেন। বয়স বিবেচনায় তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব হলেও হিংসা ও ষড়যন্ত্রের কারনে তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না। দেশে ন্যায় বিচার অনুপস্থিত উল্লেখ করে সবাইকে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তির আহবান জানান লুনা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, এখন বিচারালয় সরকারের নির্দেশে চলে। যে মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে তাতে তার সম্পৃক্ততা নেই। শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ভয় পান বলেই তাকে আটক করে রেখেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আদালতের উপর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাচ্ছে না। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না। তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন না। তাই আগে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। পরে খালেদা জিয়ার মুক্তি আর দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।