কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রায় ২ মাস ধরেই এবার শীতের ধকল সইতে হচ্ছে দেশবাসীকে। সেই পৌষের শুরু থেকেই দেশের ওপর শীত জেঁকে বসেছে। মাঘের শেষাবধি তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। মাঘের শুরুতে যে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তবে শেষ সময়ে এসে শীতের প্রভাবে দেখা দিচ্ছে নানা রোগব্যাধি। ঘরে ঘরে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এই অবস্থায় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের প্রকোপ থাকবে। তারপর তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বেড়ে বিদায় নেবে শীত। লঘুচাপের প্রভাবে শীত বিদায়ের আগে আরও একবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে।
ষড়ঋতুর এই বাংলায় পৌষ মাঘ শীত ঋতু হিসেবে পরিচিত। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই শীতেরও ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে। আগে বর্ষায় যেমন প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টিপাত হতো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে। তবে এখন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে গেছে। একই ধরনের আচরণ শুরু হয়েছে শীত ঋতুতে। প্রতিবছর শীতেরও ধারাবাহিকতা থাকছে না। সার্বিকভাবে শীতের ব্যাপ্তি যেমন কমছে। এর বিপরীতে শীত ঋতুতে হঠাৎ হঠাৎ শীত জেঁকে বসার প্রবণতাও বাড়ছে। আবার কোন কোন বছর মিলছে না শীতের দেখা। বিশেষজ্ঞরা আহাওয়ার বিরূপ আচরণকেই এর জন্য দায়ী করছেন।
পৌষ মাঘ বাংলায় শীত থাকলেও ঋতু বৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী ইংরেজী অক্টোবরের বর্ষা বিদায়ের পরপরই গ্রাম বাংলায় শীতের আবহ শুরু হয়। শীত ঋতুতে তার প্রকোপ বেড়ে যায়। টানা ২ মাস শীত শেষে বসন্ত আসে বাংলায়। কিন্তু সম্প্রতি বছরগুলোতে শীতে এই আচরণও অনেকটা বদলে যাচ্ছে না অন্য ঋতুর মতোই। শীতের ধারাবাহিকতা না থাকলেও কোন বছরের শীতে তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। গত ২০১৮ সালের জানুয়ারির শুরুতে শীতে তাপমাত্রা একেবারে নিচে নেমে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভূখন্ডে আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় শীতে তাপমাত্রা জিরোতে নেমে যাওয়ার কোন রেকর্ড নেই। আবার গ্রীষ্মেও তা অধিক বেড়ে যাওয়ার রেকর্ড নেই। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ প্রায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে হঠাৎ কোন বছর গ্রীষ্মের তাপমাত্রা যেমন অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আবার কোন বছর শীতের তাপমাত্রাও একেবারে নিচে নেমে আসছে।
গত ২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারি শীতের তাপমাত্রাও স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙ্গে ২.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে। এর আগে ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তাপমাত্রা ২.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল। ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারি তাপমাত্রা নেমে এসেছিল ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। এর নিচে আর নামেনি। শীতের এই তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় পৌষের দ্বিতীয়ার্ধে দেশের শীতের প্রকোপ বেশি থাকছে। তবে কখনো কখনো মাঘ মাসে এই প্রবণতা বজায় থাকতে দেখা গেছে।
তবে বাংলায় যে প্রবাদ বাক্য ‘মাঘের জারে বাঘ কাঁপে’ প্রতিবছর সত্য হয়ে ধরা না পড়লে এবার এই প্রবাদ বাক্যটি সত্য হয়ে ধরা দিচ্ছে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে দেশে শীতের প্রকোপ শুরু হয়েছে তার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। আবহাওয়া অফিসের হিসাব মতো দেশের ওপর দিয়ে এখনও মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। তা মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, মাঘের শেষ দিন পর্যন্ত শীতের প্রকোপ থাকবে। এরপর তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। শীত বিদায় নেবে। তবে সম্প্রতি বছরগুলোতে টানা ২ মাস এভারে শীত নামতে দেখা যায়নি। যা এ বছর হয়েছে। পৌষের শুরু থেকে এবার শীত জাঁকিয়ে পড়তে শুরু করে। এই মাঘের শেষে এসে সমান দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে। তবে সাগরে লঘুচাপের প্রভাবক থাকায় আজ খুলনা বিভাগের দুএক জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তারা জানায়, রংপুর বিভাগসহ পবনা ও শ্রীমঙ্গলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। ফলে দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৭.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আজ শৈত্যপ্রবাহ কমে আসতে পারে। তবে বৃষ্টি হলে আবারও শীত বাড়বে। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, মাঘের শেষ সময়ে উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি থাকবে। বাকি এলাকায় স্বাভাবিক শীত থাকবে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমা দেশের আবহাওয়া সব সময় চরমাভাবাপন্ন। যখন তখন তাপমাত্রা মাইনাস জিরো ডিগ্রীর নিচে চলে যায়। সব সময় বরফ পড়ে। কিন্তু আমাদের দেশের আবহমানকাল থেকে আবহাওয়া ছিল নাতিশীতোষ্ণ। না গরম, না শীত ধরনের আবহাওয়া। এই আবহাওয়ায় এদেশের জনগণ অভ্যস্ত। এর হেরফের হলে দেশবাসীকে চরম দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়। আবহাওয়া অফিসের হিসাব মতো, মধ্য নবেম্বরের পর থেকে দেশের বেশিরভাগ জায়গায় শীতের অনুভূতি স্পষ্ট হতে শুরু করে। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ার কারণে দেশের সর্ব উত্তরে শীতে প্রকোপ ঋতু শুরু আগেই শুরু হয়। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বর্ষা শেষ হতেই ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে ঠান্ডা ও ভারি বাতাস আফগানিস্তান পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরের দিকে ছুটে আসে। পরে তা বয়ে যায় উত্তর ভারত, নেপাল হয়ে বাংলাদেশেও প্রবেশ করে। এ কারণেই শরৎ শেষে হেমন্তের শুরুতেই শীতের আগমনী বার্তা জানান দিতে শুরু করেন। পৌষ মাঘ শীত কাঁপিয়ে বিদায় নেয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীতের এই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ছে প্রতি বছরই।