কাজিরবাজার ডেস্ক :
সারাদেশের ৩৩টি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার জন্য তালিকা তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এর মধ্যে ১২টি জঙ্গি সংগঠন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছে পুলিশ সদর দফতর। নিষিদ্ধকরণের জঙ্গি সংগঠনের তালিকাটি পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আন্ডারগ্রাউন্ডে কাজ করছে এসব জঙ্গি সংগঠন। রাজধানীতে পুলিশের ওপর বোমা হামলা এবং পুলিশ বক্সের কাছে বোমা রেখে যাওয়ার ঘটনায় জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নজরদারি করছে গোয়েন্দা সংস্থা। দেশের বিভিন্ন স্থানে একেকটি জঙ্গি সংগঠন গোপনে কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে ৭টি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যেসব জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছেÑ ইসলামিক সলিডারিটি ফ্রন্ট, তামীরউদ্দীন বাংলাদেশ, তৌহিদী ট্রাস্ট, হিজবুত তাওহিদ, শাহাদত-ই-নবুয়ত, জামাত-আস-সাদাত, আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশ, মুসলিম মিল্লাত, আল হারাত-আল-ইসলামিয়া, ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ফ্রন্ট, তৌহিদী জনতা, জুমাদআতুল আল সাদাত, তামিরউদ্দীন দ্বীন বাংলাদেশ, আল খিদমত, হিজবুল মাহদি, হিজবুল্লাহ ইসলামী সমাজ, দাওয়াতি কাফেলা, আল মারকাজুল আল ইসলামী, আল ইসলাম মার্টেনস ব্রিগেড, জমিয়ত আহলে হাদিস আন্দোলন, তাজির বাংলাদেশ, হায়াতুর ইলাহা, ফোরকান মুভমেন্ট, জামিউতুল এহজিয়া এরতাজ, আনজুমানে তালামিজ ইসলামিয়া, কলেমার জামাত, সাহাবা পরিষদ, কাতেল বাহিনী, মুজাহিদীন-ই-তাজিম, এশার বাহিনী, আল ফাহাদ, হরকত-উল-মুজাহিদীন ও জাদিদ আল কায়দা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশকে জঙ্গিমুক্ত করতে আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহর দল নামের একটি জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েকজনকে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া নব্য জেএমবিসহ কয়েকটি সংগঠন নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। বিশেষ করে নব্য জেএমবিকে দ্রুত নিষিদ্ধ করা হতে পারে। বাংলাদেশে কোন আইএস নেই। অথচ চলতি বছর পুলিশের ওপর বোমা হামলা এবং পুলিশ বক্সের কাছে বোমা রাখার ঘটনার পর পরই দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিচ্ছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে। যারা জঙ্গিদের লালন-পালনের পাশাপাশি উসকে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার মধ্য দিয়ে দেশ-বিদেশে নব্য জেএমবি আত্মপ্রকাশ ঘটায়। এর পর থেকে একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে এই সংগঠনের জঙ্গিরা। এদের ধারাবাহিক হামলার শিকার হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিদেশী নাগরিক, অধ্যাপক, যাজক, পীরসহ অনেকে। এসব ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে পুলিশ-র্যাব। দেশের বিভিন্নস্থানে একের পর এক অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানে নব্য জেএমবির একাধিক শীর্ষ নেতা মারা গেছে। তবে এখনও অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। যেসব জঙ্গি ধরাছোঁয়ার বাইরে তারা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে একেকটি নামের জঙ্গি সংগঠন গড়ে তুলে তৎপরতা চালাচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে জঙ্গি সংগঠন সম্পর্কে বিশদ তথ্য দেয়া হয়। এখনও যেসব সংগঠন সক্রিয় আছে তাদের বিষয়ে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে বারোটি সংগঠন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। সংগঠনগুলোর কর্মকা- দ্রুত নিষিদ্ধ করতে বলেছে পুলিশ সদর দফতর। গোয়েন্দা সংস্থার জঙ্গি সংগঠনগুলোর সুপারিশের বাইরেও পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রায় এক ডজন জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে মোট ৩৩টি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে ১২ জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।