কাজিরবাজার ডেস্ক :
উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিক রোহিঙ্গাদের মাঝে বাংলাদেশী মোবাইল সেবা সোমবার পর্যন্ত সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। থ্রিজি, ফোরজি বন্ধ হয়েছে। চালু রয়েছে টুজি। তবে রোহিঙ্গাদের কাছে নতুন সিম বিক্রয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সিম ও মোবাইল বিক্রয়কারী, মোবাইল অপারেটরের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রশাসন কয়েক দফা বৈঠক করেছে। এতে একটি বিষয় উঠে এসেছে সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে চব্বিশ ঘণ্টা মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করা যায়। কিন্তু এতে ওই অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দারা মোবাইল ব্যবহার নিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হবেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে, আশ্রিত রোহিঙ্গারা বিভিন্নপন্থায় বাংলাদেশী সিম ব্যবহার করে সীমান্তের এপার এবং ওপারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। এতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে অনেকে চোরাচালান, মাদক পাচার, মানব পাচার, ইয়াবা পাচারসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। বেসরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৮ লক্ষাধিক মোবাইল সিম রয়েছে রোহিঙ্গাদের মাঝে। বাংলাদেশী অপারেটরদের সিম শুধু রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে নয়, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের মংডু পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। অনুরূপভাবে মিয়ানমারের চার অপারেটরের সিমকার্ড এপারে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ব্যবহার করে থাকে। গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠান করার পর সকল মহলে বিস্ময় ছড়িয়েছে এ কারণে যে, এরা কিভাবে নিজেদের মাঝে যোগাযোগের মাধ্যমে এমন সমাবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যেই প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তথ্য এসেছে রোহিঙ্গা শিবিরের বহু ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের যেমন অবস্থান রয়েছে, তেমনি অস্ত্রেরও মজুদ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এনজিওর পক্ষ থেকে দেশীয় অস্ত্র জোগানদানের ঘটনাও উদঘাটিত হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার পক্ষে রোহিঙ্গা শিবির কেন্দ্রিক মোবাইল সেবা বন্ধের কথা বলা হলেও অদ্যাবধি এ ব্যাপারে কার্যকর কিছুই হয়নি। আশ্রিত রোহিঙ্গারা ঠিকই নেটওয়ার্ক পাচ্ছে। দিনরাত ব্যবহৃত হচ্ছে এদেশীয় সিম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি। এতে করে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিমিষেই পাচার হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বিভিন্ন সংস্থার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনবিরোধী কর্মকা-সহ সকল অপকর্মের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনই অন্যতম। নিমিষেই তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে। ফলে রোহিঙ্গাদের মাঝে মোবাইল সেবা বন্ধের একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু রোহিঙ্গাদের হাতে বাংলাদেশী অপারেটদের মোবাইল সিম গেল কিভাবে। একটি নয়, কারও কারও কাছে ৫ থেকে ৭টি সিমও রয়েছে। এ ব্যাপারে তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে রোহিঙ্গারা এদেশে আশ্রয় নেয়ার পর স্থানীয়রাই মূলত এদের কাছে মোবাইল সিম সরবরাহ করেছে। স্থানীয়রা নিজেদের নামে একাধিক সিমকার্ড নিয়ে কিছুটা অধিক মূল্যে রোহিঙ্গাদের কাছে বিক্রি করেছে। এসব মোবাইল সিম শুধু এদেশে আশ্রিতদের মাঝে নয়, সীমান্তের ওপারেও চলে গেছে। উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলের মোবাইল অপারেটরদের যেসব টাওয়ার রয়েছে এসব টাওয়ার থেকে নেটওয়ার্ক ওপারের মংডু পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এছাড়া দুটি মোবাইল অপারেটর সংস্থা আশ্রয় শিবির কেন্দ্রিক টাওয়ারও প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে, যাতে রোহিঙ্গারা সহজে মোবাইল নেটওয়ার্ক যোগাযোগের আওতায় থাকে।
এসব নিয়ে গত রবিবার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিকারুজ্জামান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত অধিকাংশ মোবাইল সিম স্থানীয়দের নামে নিবন্ধিত। স্থানীয়দের কেউ কেউ ১০ থেকে ১৫টি পর্যন্ত সিমকার্ড গ্রহণ করেছে নিজেদের নামে। এসব সিম কার্ডের বড় একটি অংশ রোহিঙ্গাতের হাতে চলে গেছে। ওই সভায় আরও জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গারা নিজ নামে খুব বেশি সিমকার্ড নিবন্ধন করতে পারেনি। কিন্তু আশ্রয় শিবিরে রয়েছে মোবাইল সিমের রমরমা ব্যবহার। এদের অধিকাংশ বাংলাদেশী সিম ব্যবহার করে থাকে। আবার অনেকের হাতে রয়েছে মিয়ানমারের মোবাইল সিম। তবে মিয়ানমারের মোবাইল সিম থেকে বাংলাদেশী সিমের মোবাইলে যোগাযোগ করা যায় না। ফলে রোহিঙ্গারা নিজেদের সুবিধার্থে দুদেশের মোবাইল সিম ব্যবহার করে থাকে।
এ ব্যাপারে রোিহঙ্গা ক্যাম্পের নেটওয়ার্ক কমিয়ে আনা বা বন্ধ করার ব্যাপারে একটি মোবাইল অপারেটর সূত্রে জানানো হয়েছে, বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী তারা দিনের বেলায় শুধু টুজি সার্ভিস দিচ্ছে। থ্রিজি ও ফোরজি গত ২৫ আগস্টের মহাসমাবেশের পর পরই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে রাতের বেলায় নির্দিষ্ট কিছু কিছু ক্ষেত্রে থ্রি ও ফোরজি সার্ভিস চালু রয়েছে। এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক টাওয়ার ও মিনি টাওয়ার বন্ধ করার কথা উঠেছিল। কিন্তু সব অপারেটর এ বিষয় নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি।