চালকরা মানছে না কোন নিয়ম-কানুন ॥ নগরীর যত্রতত্র সিএনজি অটোরিক্সা স্ট্যান্ড, বাড়ছে দুর্ঘটনা-দুর্ভোগ

103

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরী ও দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন স্থানে রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে গাড়ীর স্ট্যান্ড গড়ে উঠছে। যত্রতত্র এসব স্ট্যান্ড বানিয়ে পুরো নগরীকে অটোরিকশার নগরীতে রূপ দিয়েছে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালকরা। এতে নগরীতে দিন দিন যেমন বাড়ছে যানজট তেমনি লোকজনের বাড়ছে ভোগান্তি। বেশিরভাগ সড়কেই এখন অর্ধেকের বেশি জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা এসব স্ট্যান্ড সরাতে প্রশাসনের তরফ থেকে নেই কোন কার্যকরী উদ্যোগ।
গতকাল শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, কোর্ট পয়েন্ট, বন্দর বাজার, সিটি পয়েন্ট, নাগরি চত্ত্বর, সুরমা পয়েন্ট, কীন ব্রীজের মোড়, ধোপাদীঘিরপার পয়েন্ট, সোবহানীঘাট পয়েন্ট, শাহী ঈদগাহ, জেলরোড, টিলাগড়, কদমতলী পয়েন্ট, কদমতলী শাহজালাল ব্রীজের নিচ, হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বর, চন্ডিপুল সামাদ আজাদ চত্ত্বর, রেলগেইট, স্টেশন রোড,বাবনা পয়েন্ট ও কাজিরবাজার ব্রীজের মুখের জিতু মিয়ার পয়েন্ট কোন সড়কই বাদ নেই। প্রতিটি সড়কই সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালকদের দখলে। এতে নগরীজুড়ে যানজটের সমস্যা যেমন প্রকট হচ্ছে, তেমনি দিন দিন বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি। নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে বাইরে যেখানেই যাত্রী মেলে সেখানেই স্ট্যান্ড বানিয়ে বসে থাকেন সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালকরা। ব্যাপারটা এমন যে, যেখানে গাড়ি থামবে সেখানেই স্ট্যান্ড।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট শহরে আইনত বৈধ কোন সিএনজি চালিত অটোরিক্সার স্ট্যান্ডই নেই। নামমাত্র অনুমতি নিয়ে স্ট্যান্ডগুলো বসানো হয়েছে। নাগরিক সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয় না কেউ। সিলেট জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন (শাখা-৭০৭) ও সিলেট জেলা অটোটেম্পু/অটোরিক্সা চালাক-শ্রমিক জোট (শাখা-২০৯৭) সমিতিরা এসব অবৈধ স্ট্যান্ড ও চালকদের নিয়ন্ত্রণ করছেন।
এদিকে সড়কের অর্ধেকটাতে সিএনজি দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামার পাশাপাশি ফুটপাত হকারদের দখলে থাকায় মানুষজন বাধ্য হয়েই রাস্তার মাঝ দিয়ে হাঁটতে হয়। ফলে প্রতিনিয়ত মানুষজন সড়ক দুঘর্টনার শিকার হচ্ছেন। বিগত দিনে সিলেট সিটি করপোরেশন ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ যৌথভাবে অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়ে রাস্তায় দাগ টেনে সীমানা নির্ধারণ করে দেয়াও হয়েছিল। সেই দাগের বাইরে গাড়ি না রাখতে দেয়াও হয়েছিল কঠোর নির্দেশনা। তবে এখন আর ওইসব নির্দেশনা না মেনেই আগের অবস্থায় ফিরে গেছে চালকরা।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর কোর্ট পয়েন্টকে জঞ্জালমুক্ত করতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষ থেকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। তাদের সাথে কথা বলে মেয়র মৌখিক সিদ্ধান্তও জানিয়েছিলেন কোর্ট পয়েন্টে যে অস্থায়ী গাড়ি স্ট্যান্ড রয়েছে সেখানে সব সময় ১০টি লেগুনা ও ২৫টি সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়াতে পারবে। এর বেশি যানবাহন সেখানে থাকতে পারবে না। এছাড়া তাদের দাঁড়িয়ে থাকার সীমানাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা সিটি করপোরেশনের সেই নির্দেশেরও তোয়াক্কা করেননি। তারা পুরো এলাকা দখলে নিয়ে কোর্ট পয়েন্টকে যানজটের ভাগাড়ে পরিণত করেছেন। এতে কোর্ট পয়েন্ট, সিটি পয়েন্ট ও বন্দরবাজার এলাকাগুলোতে যানজট লেগে পথচারীদের কাছে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা যায়, নগরীর ধোপাদীঘিরপার এলাকার অবৈধ স্ট্যান্ড যানজটের অন্যতম কারণ। শিশুপার্ক স্থাপনের আগে ধোপাদীঘিরপারে এক সময় তামাবিল-জৈন্তাপুর সড়কের বাসস্ট্যান্ড ছিল। পরবর্তীতে সেটি সরিয়ে শিবগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে ধোপাদীঘিরপার থেকে অনুরাগের গলি মোড় পর্যন্ত রাস্তা গেলো দেড় দশক ধরে মুক্ত করা যাচ্ছে না। এটি ছিল মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড। এখনো সেই স্ট্যান্ড আছে। তার উপর এসে যুক্ত হয়েছে লেগুনা ও সিএনজি। কয়েকশ’ লেগুনা ও সিএনজি দখল করে নিয়ে ধোপাদিঘীরপাড় থেকে জেলরোড গলির মুখ পর্যন্ত এলাকা। রাস্তায় যাত্রী উঠানামা করার কারণে সবসময় ওই এলাকায় যানজট লেগেই থাকে।
এদিকে নগরীর আম্বরখানা এলাকায় রাস্তা দখল করে স্ট্যান্ড বসানোর কারণে যানজট কমছে না। সঙ্গে ওই রুটে চলছে ট্রাকও। দিনের বেলা ট্রাক চলাচলের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে ট্রাফিক ম্যানেজ করেই চলছে ট্রাক। এতে করে নগরীতে যানজট কমছে না।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) ফয়ছল মাহমুদ বলেন, রাস্তার উপর কোন গাড়ী যদি রং পাকিং করে তাহলে পুলিশ গাড়ি আটকের পাশাপাশি মামলা দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, নরগীতে অবৈধ কোন স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে হলে আমাদের পুলিশ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা করে থাকে। কিন্তু আমরা অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে পারি না।
এ ব্যাপারে সিলেট অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাকারিয়া আহমদ বলেন, সিলেট ছোট শহর, কিন্তু গাড়ি বেশি। সিটি করপোরেশন এতদিন আমাদেরকে গাড়ি রাখার বা দাঁড় করানোর নির্দিষ্ট জায়গা দেয়নি। তাই এমন অব্যবস্থাপনা ছিল। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের দেয়া বেশ কয়েকটি স্পট নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যেই চালকরা গাড়ীগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। তিনি বলেন, এখন আমি মিটিংয়ে রয়েছি পরে কথা হবে বলে তিনি মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।