স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ (সিওমেক) হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক দ্বারা রোগীর স্বজনকে ধর্ষণের অভিযোগে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. দেবব্রত রায়।
তিনি জানান, হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগীয় প্রধান ডা. এস কে সিনহাকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ক্লিনিক্যাল রিপোর্ট আসতে আরো ২/৩ দিন লাগতে পারে।
এ বিষয়ে ডা. এস কে সিনহা বলেন, তদন্ত কমিটির বিষয়ে শুনেছি তবে এখনো আমি কোন নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পাওয়ার পর কাজ শুরু করবো।
উল্লেখ্য, গত সোমবার ভোরবেলা হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এক রোগীর সাথে থাকা স্বজনকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে সেই ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে ভিকটিমের স্বজন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৈঠকের পর অভিযুক্ত মাহমুদকে পুলিশে স্থানান্তর করেন। পরে ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলে প্রেরণ করা হয়। অভিযুক্ত মাকামে মাহমুদ ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা এলাকারা মোখলেছুর রহমানের পুত্র। তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এদিকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) থেকে সঠিক রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে এ হাসপাতালে ‘ধর্ষণে’র শিকার হওয়া স্কুলছাত্রীটির পরিবার। মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বিকালে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন ওই ছাত্রীর বাবা।
গত সোমবার বিকালে ঘটনার শিকার স্কুলছাত্রীকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। এর চার ঘণ্টা পর তাকে ওসিসি থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ওই স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, ‘ওসিসিতে মেয়ের যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে কিনা, আমার সন্দেহ হচ্ছে। সব কিছু এত দ্রুত হওয়ায় সঠিক রিপোর্ট নিয়ে আশঙ্কা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছে ওসমানী হাসপাতালে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই হাসপাতালেরই একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক। এখানেই আবার মেয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। সেজন্য সঠিক রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে মনের মধ্যে ভয় কাজ করছে।’ মঙ্গলবার সিলেট মেট্রোপলিটন তৃতীয় আদালতের বিচারক হরিদাস কুমারের কাছে ওই স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার ২২নং ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভর্তির চার ঘণ্টার মাথায় ওই স্কুলছাত্রীকে ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যাপারে ওসমানী মেডিক্যালের ওসিসির দায়িত্বে থাকা এসআই শাহীন পরাভিন বলেন, ‘সব ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সোমবার (১৬ জুলাই) বিকালে ওই স্কুলছাত্রীকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়।’ তবে ঘটনার শিকার মেয়েটির বাবার শঙ্কার ব্যাপারে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার এসআই আকবর হোসাইন বলেন, ‘মঙ্গলাবার (১৭ জুলাই) ২২নং ধারায় ওই স্কুলছাত্রী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। সে আদালতকে জানিয়েছে, নানির ব্যবস্থাপত্র নেওয়ার জন্য তাকে হাসপাতালের ৪র্থ তলার ৭নম্বর ওয়ার্ডে ডেকে পাঠায় ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহী। সে সেখানে গেলে ওই চিকিৎসক দরজা বন্ধ করে দেয় এবং তাকে ধর্ষণ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই স্কুলছাত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ধর্ষণের ঘটনার তদন্তে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাহায্য নেওয়া হবে। ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
গত রবিবার (১৫ জুলাই) রাত দেড়টার দিকে ওসমানী মেডিক্যালের নাক-কান-গলা বিভাগের ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহী নবম শ্রেণির ওই স্কুলছাত্রীকে (১৪) ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। পরদিন সোমবার (১৬ জুলাই) দুপুরে হাসপাতাল থেকে অভিযুক্ত চিকিৎসককে পুলিশ আটক করে। এদিন রাতে স্কুলছাত্রীর বাবা কোতোয়ালী থানায় মাহীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২৬)। পরে মাহীকে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারক মোসতাইন বিল্লাল তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।