কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে রমনা থানায় দায়ের করা মাদক ও অস্ত্র মামলায় তার মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। একইসঙ্গে সম্রাটের সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে রমনা থানায় দায়ের করা মাদকের মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এদিন আসামি সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর শুরুতে রমনা থানার দুটি মামলায় সম্রাটকে এবং আরমানকে শুধু মাদক মামলায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাফুজ্জামান আনছারী গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে রিমান্ড শুনানির জন্য বিচারক তোফাজ্জল হোসেন এজলাসে আসেন।
সম্রাটের পক্ষে আদালতের ভেতরে অবস্থান নেন আইনজীবী গাজী জিল্লুর রহমান, আব্দুল কাদেরসহ প্রায় ২৫ জন। রাষ্ট্রপক্ষে এ সময় রিমান্ড শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু, একই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সাজ্জাদুল হক শিহাব, তাপস পাল ও এপিপি আজাদ রহমান।
এদিন আদালতে শুনানি শুরু হয় ১২টা ৪৪ মিনিটে। শুরুতেই আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে সম্রাটের দুই হাতের হ্যান্ডকাফ (হাতকড়া) খুলে দেয়ার আরজি জানান। তার এক আইনজীবী বলেন, হুজুর সম্রাট আপনার কাস্টডিতে। তিনি অসুস্থ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তার হ্যান্ডকাফটি খুলে দেয়ার অনুমতি দিন।
উত্তরে ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আগে শুনানি শুরু করুন, এরপর দেখছি।
এরপর শুনানি শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। তিনি আদালতকে শুধু মামলার এজাহার পড়ে শোনান, এরপর রিমান্ড চান। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর পর শুনানি শুরু করেন সম্রাটের আইনজীবীরা। তাদের একজন বলেন, সম্রাট যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি, তিনি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মী তাকে অন্তর দিয়ে ভালবাসে। একটি কুচক্রীমহলের ষড়যন্ত্রে তাকে গ্রেফতার করে এখানে দাঁড় করানো হয়েছে। তাকে যেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে (কুমিল্লা) সেখানে কোন অস্ত্র পাওয়া যায়নি। অথচ একটি কার্যালয় থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তার রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে, এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত। কেননা সম্রাট ৬ অক্টোবর সকালে গ্রেফতার হয়েছিলেন কুমিল্লা থেকে। এ সংবাদ সবাই টিভিতে শুনেছে, দেখেছে। তাকে গ্রেফতারের ৬-৭ ঘণ্টা পর এমন একটি জায়গা থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার যুবলীগ সমর্থক ভিড় করেন। এছাড়া র্যাব সব অভিযানে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয় অথচ সেখানে কেন অভিযান শুরু হওয়ার ৪ ঘণ্টা পর সাংবাদিকদের ঢুকতে দিল, এ নিয়েও সন্দেহ আছে। তাই আমরা তার জামিনের আবেদন করছি।
সম্রাটের পক্ষের আরেক আইনজীবী বলেন-হুজুর, সম্রাটের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে, ভালভ লাগানো। ভালভের মেয়াদ শেষ, ২৪ অক্টোবর ভালভ প্রতিস্থাপনের ডেট। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তাকে জামিন দেয়া হোক। পুলিশ বলছে, অস্ত্র উদ্ধারের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য সম্রাটের রিমান্ড প্রয়োজন। অথচ যে অস্ত্র সম্রাটের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি সেটার রহস্য উদ্ঘাটনে তাকে কেন রিমান্ডের প্রয়োজন।
আদালতের ভেতরেই এ সময় পেছন থেকে এক আইনজীবী চিৎকার করে বলেন, সম্রাট মারা গেলে দায় কে নেবে? আদালত নেবে?।
তার চিৎকারের পর শুরু হয় সম্রাটের সমর্থকদের হট্টগোল। তারা পেছন থেকে ‘ঠিক’ ‘ঠিক’ বলতে থাকেন।
এ সময় তখন হাকিমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সম্রাটের আরেক আইনজীবী বলেন, আমরা চাই না সে মারা যাক। এখানে কোন রাজনৈতিক বক্তব্য দেব না। আমরা শুধু তার জামিন চাই।
মাদক মামলার শুনানিতে সম্রাটের আরেক আইনজীবী ও ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আফরোজা শাহনাজ পারভীন বলেন, যেদিন সম্রাটকে নিয়ে কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়, তার একদিন আগে আমি ও আমার স্বামী ওই কার্যালয়ে যাই। সেখানে রান্নাবান্না হয়, আমরা একবেলা খাবার খাই। রান্নার জিনিসপত্র কার্যালয়ের একমাত্র ফ্রিজ থেকেই বের করা হয়েছিল। অথচ পরদিন অভিযানে দেখলাম একই ফ্রিজ থেকে তরকারি-মাছ-মাংসের জায়গায় মদের বোতল বের হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব, একমাত্র র্যাবই বলতে পারবে। মামলাটি ‘টোটালি ফলস’ বলে আখ্যা দেন তার আরেক আইনজীবী। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন অস্ত্র মামলায় পাঁচদিন এবং মাদক মামলায় পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী তাকে ওই দুই মামলায় গ্রেফতার দেখান।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রায়সাহেব বাজার থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতের গেট পর্যন্ত অবস্থান নেন যুবলীগের সমর্থকরা। তারা সম্রাটের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। আদালতে আসার পর এজলাসের এক কোণে সহযোগী এনামুল হক আরমানের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন সম্রাট। সেখানে তাকে অনেকটা অসহায় মনে হচ্ছিল। দীর্ঘ ৪৫ মিনিট আদালতের ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। গা বেয়ে ঘাম ঝরছিল তার। পাশ থেকে একজন তাকে টিস্যু পেপার এগিয়ে দেন। শুনানির মাঝেই একবার নিজের আইনজীবী এবং বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা বলতে দেখা যায় তাকে।