গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন ॥ রোহিঙ্গাদের উস্কে দিচ্ছে পাকিস্তান-মধ্যপ্রাচ্যের এনজিওসহ কয়েকটি বিদেশী সংস্থা

37

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের যৌথ মালিকানাধীন এনজিওসহ কয়েকটি বিদেশী এনজিও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে না যেতে নানা ধরনের ইস্যু সামনে এনে সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে উস্কানি দেয়ার বিষয়ে এক বছর আগেই সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার চার পৃষ্ঠার সাতদফা সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দাখিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে। এক বছর আগের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টটি প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন না করায় রোহিঙ্গারা এখন সরকারের জন্য গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না যাওয়ার জন্য প্রত্যাবাসনবিরোধী প্ররোচণার প্রচার ও সর্বশেষ রোহিঙ্গাদের বেআইনী সমাবেশসহ সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয় এমন কর্মকা- চালানোর পর নড়েচড়ে বসেছে সরকার। কিন্তু এক বছর আগে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অনশনে উদ্বুদ্ধ করেছে বিদেশী এনজিও। যেসব বিদেশী এনজিও রোহিঙ্গাদের উস্কানি দিয়েছে তাদের মধ্যে চারটি বিদেশী এনজিও-এর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা।
সরকারের কাছে এক বছর আগে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চারটি বিদেশী এনজিও সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার কথা উল্লেখ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, রোহিঙ্গাদের নানাভাবে উস্কানি দিচ্ছে বেসরকারী সংস্থার বিদেশী কর্মকর্তারা। ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের অনশনে উদ্বুদ্ধের চেষ্টা করছে এনজিওগুলো। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হওয়ার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করছে রোহিঙ্গাদের। অন এ্যারাইভাল ভিসায় বাংলাদেশে এসেছেন এনজিও কর্মকর্তারা। এক বছর আগের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন না করায় এখন আবার প্রত্যাবাসন ঠেকাতে রোহিঙ্গাদের উস্কানি দিচ্ছে কিছু এনজিও। প্রত্যাবাসন ঠেকানোর চেষ্টার পর এখন কক্সবাজারের ক্যাম্পের হাজার হাজার রোহিঙ্গা সমবেত হয়ে বেআইনী সমাবেশ করছে। এসব সবই করছে এনজিওগুলো।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, যেসব এনজিও এবং ব্যক্তি প্রত্যাবাসনবিরোধী সমাবেশ করে রোহিঙ্গাদের না যাওয়ার জন্য প্ররোচনা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মানবিক কারণে যেসব এনজিও সাহায্য করছে তাদের অর্থের উৎসের সন্ধান করছে গোয়েন্দা সংস্থা। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ তৈরি হয়নি এমন প্ররোচনা দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফিরে যায় সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতাসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে আশ্রয় দিয়েছিলেন। ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসলেও এখন এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখে। কারণ গত দুই বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরও এক লাখ শিশু জন্ম নিয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদেশী এনজিও এবং বিদেশী ব্যক্তি যারা মানবিক সাহায্যের নামে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কাজ করছে তাদের অধিকাংশই এনজিও ব্যুরোর অনুমোদন ছাড়াই কাজ করছেন। এ ধরনের কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মাদক ও হত্যা মামলার এক আসামি তাদের সহযোগিতা করছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভোট ব্যাংক গড়ে তোলার চেষ্টা, নানা ধরনের বিতর্কিত কর্মকা-, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জাতীয় নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শৃঙ্খলা এবং সরকারের ভাবমূর্তির জন্য হুমকি বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে গোয়েন্দা সংস্থা। এক বছর আগে গোয়েন্দা সংস্থার চার পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে অবস্থানরত বিদেশী এনজিও কর্মীদের বাংলাদেশে আগমন, প্রস্থান, পুনরায় আগমন ও গতিবিধির বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কক্সবাজার জেলার বালুখালী, কুতুপালং, আঞ্জুমানপাড়া ও নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সন্দেহভাজন বিদেশী নাগরিক, এনজিও’র গোপন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব রোধে সাতদফা সুপারিশ করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতি ও মানবিক বিষয়কে পুঁজি করে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় যে কোন স্বার্থান্বেষী মহল বা মৌলবাদী, সন্ত্রাসী, জঙ্গীগোষ্ঠী আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের চেষ্টা চালাতে পারে। এতে ভবিষ্যতে দেশের স্থানীয়, অভ্যন্তরীণ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা আছে। রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য দেয়ায় কাজে নিয়োজিত এনজিওগুলোয় স্থানীয়দের পরিবর্তে রোহিঙ্গাদের চাকরি দেয়া হচ্ছে। এ নিয়েও স্থানীয় নাগরিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে কয়েকটি এনজিও’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে কোডেক, এমডিএস ও মোয়াসসহ চার এনজিও। এই চার এনজিও’র বিদেশী কর্মকর্তাদের আসা-যাওয়া সন্দেহজনক। কোডেক, এমডিএস ও মোয়াসসহ চারটি এনজিও’র বিদেশী কর্মকর্তারা ঘন ঘন বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করছেন। এসব এনজিওতে কর্মরত অধিকাংশ কর্মকর্তা অন এ্যারাইভাল ভিসা অথবা ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে আসছেন। প্রায় এক মাস অবস্থানের পর পার্শ্ববর্তী কোন দেশে চলে যাচ্ছেন। সেখানে কিছুদিন পার করে আবারও বাংলাদেশে এসে এনজিও’র কাজে নিযুক্ত হচ্ছেন। উচ্চ বেতনে এক মাস অন্তর অন্তর চাকরি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছেন। বিনিয়োগ ও পর্যটনবান্ধব শিথিল ভিসা নীতির কারণে উপার্জিত অর্থ আয়কর জালের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।