ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত ১৭৩ জনের মৃত্যু

15

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ডেঙ্গ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শুরু থেকে সোমবার পর্যন্ত ১৭৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর মধ্যে ৮৮ মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করে এই রোগে মোট ৫২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সোমবার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, এই ৮৮ জনের মধ্যে ৩৬ জনের বেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার কোন প্রমাণ মেলেনি। তারা জানিয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৯১ ভাগ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পক্ষ থেকে ডেঙ্গুর সবশেষ অবস্থার তথ্যে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন ১২৫১ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭৭, ঢাকার বাইরের ৬৭৪। তারা জানান, সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৪ হাজার ৭৬৫। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৫৯ হাজার ৩০। সারাদেশে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫ হাজার ৫৬২। ঢাকায় এই সংখ্যা ৩ হাজার ৮১, ঢাকার বাইরে ২ হাজার ৪৮১।
এদিকে গত জুন থেকে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়লে এখন পর্যন্ত এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। কোন দিন আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমলেও পরদিনই আবার তা বেড়ে যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশা নিয়ন্ত্রণে চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। নেয়া হয়েছে নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচী। এরপরও প্রায় প্রতিদিন হাজারের বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে ডেঙ্গু নিয়ে মানুষ এখনও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়েছে শুরু থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে আসা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর পর্যালোচনা করে আসছে তারা। তারা ১৭৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পেলেও এর মধ্যে ৮৮ জনের তথ্য যাচাইয়ে ৫২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ডেঙ্গুতে মুত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা তিন ভাবে কাজ করেন। প্রথমত, সব ক্লিনিক্যাল ডকুমেন্ট, চিকিৎসার তথ্য, হাসপাতালে থাকার সময়কার তথ্য পর্যালোচনা করতে হয়। তারপর ভার্বাল অটোপসি (মৃত্যুর কারণ বোঝার জন্য উপসর্গ ও শারীরিক অবস্থার তথ্য বিচার) এবং নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। যখন ল্যাবের পরীক্ষায় পিসিআর (রক্তে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী ভাইরাসের জিন অবশেষ) পেয়ে যাই, তখন বলতে পারি যে ডেঙ্গুতেই তার মৃত্যু হয়েছে। আর বাকি ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করা হয় ডেঙ্গুর ‘সম্ভাব্য সংক্রমণ’ হিসেবে। মৃতের তালিকায় আমরা সেসব নাম দেই না।
তিনি বলেন, অনেক ডেঙ্গু রোগী এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে যায়। তখন রোগী হিসেবে তার নাম একাধিক হাসপাতালেই এন্ট্রি হয়। হাসপাতালগুলো থেকে যখন স্বাস্থ্য অধিদফতরে তালিকা আসে, তখন জানার উপায় নেই যে রোগীরা এক না একাধিক হাসপাতালে ছিলেন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায় ক্রমান্বয়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে। যদিও তা খুব ধীরগতিতে। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার রাজধানীর চেয়ে এখনও বেশি। সেখানে ক্রমান্বয়ে আক্রান্তের হার কমে আসছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা জানিয়েছে আগের দিনের চেয়ে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার ৪ শতাংশ কমেছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমেছে আগের দিনের চেয়ে ৬ শতাংশ। সারাদেশে এই রোগে আক্রান্ত হওয়াদের ৯১ ভাগ সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছে।