এডভোকেট আবুল খায়ের :
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের বেচে থাকা সর্বশেষ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ছিলেন আমাদের প্রেরণরা উৎস। তিনি ছিলেন গরীব-মেহনতী ও শ্রমিক জনতার নেতা। প্রায় শত বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করলেও আজীবন ছিলেন নীতি ও আদর্শে অটল। তার মৃত্যু হলেও এই আদর্শ এবং নীতি বেচে থাকবে বহুদিন। তিনি এই দেশের নতুন প্রজন্মের জন্য রেখে গেছেন নীতি ও আদর্শের অনুপম উদাহরণ।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পœন সমাজতান্ত্রিক নেতা ছিলেন। স্বাধীনতার পক্ষে এবং বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত নেতা হিসাবে এই দেশ স্বাধীনতার পিছনে তার ভূমিকা ছিল উল্লেখ করার মত। এই দেশের ইতিহাসের পরতে পরতে লেখা থাকবে তার নাম। নীতিবিচ্যুত হয়ে তিনি মন্ত্রী হওয়ার প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করেছেন। স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে তিনি প্রমাণ করেছেন অন্যদের সঙ্গে তার পার্থক্য।
মোজাফফর আহমদ ছিলেন গরীব মানুষের নেতা। তিনি নিজেও সহজ-সরল জীবন যাপন করতেন। আরাম আয়েশ করেননি কখনও। স্বাধীনতার পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে যারা ছাত্র রাজনীতি করতেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন তার আদর্শের অনুসারী। তখন আমিও তাকে অনুসরন করে কলেজে রাজনীতি করেছি এবং তাকে কাছ থেকে দেখারও সৌভাগ্য হয়েছে আমার। বঙ্গবন্ধুর ডাকে যখন দেশ স্বাধীনের আন্দোলন হয় তখন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এর অনুসারী সকল ছাত্রনেতারা তাতে যোগদেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ৬ দফারও সমর্থক ছিলেন। এমনকি যখন বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেয়া হয় তখনও তিনি এর বিরুদ্বে আন্দোলন করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি রেসকোর্স ময়দানে আন্দোলনেরও ডাক দেন। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দেশের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ভূমিকাও দেশবাসী চিরদিন মনে রাখবে।, ‘দেশের প্রগতিশীল রাজনীতিতে ছিলেন উদাহরণসৃষ্টিকারী ব্যাক্তি।
আমি জীবনের এই পর্যায় অতিক্রম করে অনেক নেতার সান্নিধ্য পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করে এখনও চেষ্টা করে বিভিন্ন কার্যক্রমে উপস্থিত থাকতে। এই বয়সে আমার একটি উপলদ্ধি হল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এই জাতী যখন দিশেহারা তখন মোজাফফর আহমদ ছিলেন শতবর্ষী বৃক্ষের মতো। তাঁর প্রতীকী ছায়া পেয়েছে জাতি। এখন অনুভব করছি তাঁর মতো প্রাজ্ঞ, সৎ, নির্লোভ, দায়িত্বশীল একজন উঁচুমাপের রাজনীতিকের দারুণ অভাববোধ।
ছাত্র রাজনীতিতে অধ্যাপক মোজাফফরের হাতেখড়ি ১৯৩৭ সালে। মহাত্মা গান্ধী ছিলেন তাঁর প্রেরণা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এই নেতা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তার যেন বেহেশত নসিব হয়।
লেখক : সিনিয়র আইনজীবী ও সভাপতি বঙ্গবন্ধু পরিষদ হবিগঞ্চ জেলা শাখা, সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা জেলা কমিউনিটি পুলিশং কমিটি।