ঈদের ছুটির আগে যে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা সত্যি হলো। ঈদের ছুটিতে সড়ক কেড়ে নিয়েছে ৪৫ জনের প্রাণ। এর মধ্যে দুজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও একজন বিএনপি নেতাও রয়েছেন। বগুড়ার শাজাহানপুরে পাঁচজন, রংপুরে চারজন, দিনাজপুরে চারজন, রাজধানী ঢাকায় তিনজন এবং মানিকগঞ্জের ঘিওরে তিনজন নিহত হয়েছে। এদিকে কুমিল্লার দেবীদ্বার ও চান্দিনা, নরসিংদীর শিবপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, গোপালগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে দুজন করে মারা গেছে। এ ছাড়া নাটোরের বড়াইগ্রাম, যশোরের মণিরামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নওগাঁর ধামইরহাট ও সাপাহার, মাদারীপুরের রাজৈর, ময়মনসিংহের ফুলপুর, গফরগাঁও ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় একজন করে নিহত হয়েছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী একটি পিকনিকের বাস ফেনীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা লেগে আটজনসহ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপ থেকে জানা যায়, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন প্রাণ হারায়। এর মধ্যে এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলোকে দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাণ্ডও বলা যায়। লাইসেন্সহীন অদক্ষ চালকের হাতে, এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হয়। বহু ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে রাস্তায়, যেগুলোর নিয়ন্ত্রণে সমস্যা রয়েছে। অনেক চালক রাত-দিন গাড়ি চালায়। অত্যধিক ক্লান্তি এবং গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আবার বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়ম ঘটে রাস্তায়। এসব কারণে রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই আছে। যাদের এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা তারাও উদাসীন। ফলে এসব দুর্ঘটনাকে অনেকেই দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাণ্ডই বলে থাকে। সড়কের এই নিরাপত্তাহীনতা কি চলতেই থাকবে?
আমাদের দেশে চালকদের বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তাদের অনেকেই আধুনিক সড়ক নির্দেশনা বুঝতে অক্ষম। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। সেদিকেও আদালতের দৃষ্টি পড়েছে অনেক আগেই। গাড়িচালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অন্তত এসএসসি নির্ধারণ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ পাঁচ বছর পর কার্যকর করতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক আইন ও নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরাও ট্রাফিক আইন ও নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবে। তবে সড়ক দুর্ঘটনার মতো অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে সবার আগে চাই সদিচ্ছা। অদক্ষ চালকদেরও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা যাবে। আমাদের প্রত্যাশা, দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।