বঙ্গবন্ধু হত্যা ॥ নেতৃত্ব সংকট ও আদর্শিক বিপর্যয়

80

রণেশ মৈত্র

খোন্দকার মোশতাককে বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ ও পরবর্তী সময়ে বাকশালের দুই নম্বর নেতা বানিয়েছিলেন। সেই মোশতাকই ছিল প্রকৃত বিশ্বাসঘাতক, স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধী এবং পুরোপুরি পাকিস্তানপন্থি ও সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্ববাসী।
দীর্ঘকাল পর সমাবর্তন উৎসবের আয়োজন হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বঙ্গবন্ধু তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্যও। তাই তিনি সম্মতি দিয়েছিলেন সমাবর্তন উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদানের।
যেহেতু রাষ্ট্রপতি যাবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাই স্বভাবতই কঠোর নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছিল ধানমন্ডির ৩২নং বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন তাবৎ এলাকায় ছাত্রাবাস সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো ও ছাত্রীবাসগুলোসহ। সেনাবাহিনীর যানবাহনও চলাচল করছিল তাদের ট্যাংকসহ। ট্যাংক যদিও এ জাতীয় কর্মসূচিতে রাজপথে নামানোর কথা নয়, তবুও ততটা অস্বাভাবিক বলে বিবেচনা করেননি অনেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তার কথা ভেবে। তিনি তো শুধুমাত্র একজন রাষ্ট্রপতি ছিলেন না- ছিলেন বাংলাদেশের জনগণের জীবন-মরণের সাথী। স্বাধীন এই দেশটির স্থপতি। আজ প্রশ্ন জাগে ১৫ আগষ্ট, ১৯৭৫ এ প্রকৃতই কি বাংলাদেশে ভোর হয়েছিল? রাতের নিকষ কালো অন্ধকার কেটে ছিল আদৌ কোনো উজ্জ্বল সূর্য? প্রখর উত্তাপ নিয়ে সূর্য করোজ্জল প্রভাতের উদয় কি ঘটেছিল? অন্তত বাংলাদেশের আকাশে? আকাশে সেদিন কি বাতাস বইতে দেখেছিল বাঙালি? নদীর জল বা সমুদ্রের টেউ এ কি দোলা দিয়েছিল প্রবল বাতাস তার নিত্যদিনের অভ্যাসমত? পাহাড় কি সেদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল পাহারা দিচ্ছিল কি বাংলাদেশকে, অপর পাড় থেকে কোন শক্রু যেন এসে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে না পারে তা নিশ্চিত করতে?
জীব-জন্তু প্রাণীকূল? তারাই বা কি করছিল ওই ১৫ আগষ্টের ভোরে? নিদ্রিত ছিল কি? শত্র“র আগমন টের পেয়ে ‘ঘেউ ঘেউ’ করে আর্তনাদ করে গৃহস্থকে সজাগ করতে সচেষ্ট ছিল কি পোষা কুকুরেরা? ফোঁস ফোঁস করে উঠেছিল ঘরের বেড়ালগুলো? সাপ কি ফণা তুলতে উদ্যত হয়েছিল শত্র“র দেহে ছোবল মেরে দেহগুলিকে নীলাভ করে দিতে?
আর বঙ্গবন্ধুর প্রিয় মানুষগুলো? নেতাকর্মী মুক্তিযোদ্ধারা কৃষক মজুর খেটে খাওয়া মানুষরা? তারা কি রোজকার মতো নিরুদ্বিগ্ন স্নিগ্ধ একটি ভোরের সুবাতাস ও প্রাকৃতিক সবুজ দৃশ্য অবলোকন করেছিলেন। জেলেরা কি নিত্যদিনের মতো নদীতে মাছ ধরছিল? বাজারে কি দোকন পাট খোলা হয়েছিল? কাঁচাবাজারে কি মাছ মাংস তরিতরকারী শাক-সবজির দোকানগুলি খোলা ছিল? কেনাবেচা কি স্বাভাবিক ছিল সেদিন?
কিষাণ-কিষাণীরা কি মাঠে শস্য বুনন-কর্তন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল? কিষাণীরা কি ঢেঁকিতে পা ফেলে চাপ দিয়ে ধান ভানছিলেন? শ্রমিকরা কি তাদের নিজ নিজ কারখানায় কাজ করতে, মেশিনের চাকা ঘুরাতে হাজির হয়েছিলেন?
ছাত্রছাত্রীরা কি তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে পাঠ গ্রহণ করতে উপস্থিত হয়েছিলেন?
ছাত্রছাত্রীরা কি তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে পাঠ গ্রহণ করতে উপস্থিত হয়েছিলেন? শিক্ষক-শিক্ষিকারাও কি এসেছিলেন শিক্ষাঙ্গনে পাঠদান করতে? যেমনটি তারা নিত্যদিন করে থাকেন?
না। কেউ আসেননি। উপরের সবগুলো প্রশ্নেরই উত্তর হলো, না। কেউ সেদিন কাজ করেনি। কাজে যাওয়ার মতো মানসিক পরিস্থিতি কারওই ছিল না। স্কুল-কলেজ-বিশ্বদ্যিালয় সবই অঘোষিত বন্ধ। সব শিক্ষাঙ্গন নিস্তব্ধ হয়েছিল সারাদিন সেদিন তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় নিত্যদিনের মতো মুখরিত হয়নি বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাঙ্গন।
আকাশ-বাতাস-পাহাড়-পর্বত-নদ-নদী-সমুদ্র সাগর মহাসাগর সবই ছিল নিন্তরঙ্গ, নিস্তব্ধ।
আর হাজার হাজার কর্মীরা? মুক্তিযোদ্ধারা? বেতারে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যার খবর এক মেজরের কণ্ঠে (মেজর ডালিম) বারবার শুনলেও বিশ্বাস করতে কেউই পারছিলেন না প্রথমত, শেষ অবধি যখন বুঝাই গেল, সত্যই ওরা হত্যা করেছে। দিশাহীন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ কর্মীরা ঘরে বসে হাহুতাশ না করে ছুটলেন একের পর এক নেতার বাড়িতে। অনেকেই দেখতে পেয়েছেন নিজ নিজ বাসভবনে নেতারা অনুপস্থিত। হয়তো বা তারা কোথাও গোপন কোন সভায় মিলিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছেন করণীয় নির্ধারণ করছেন। আবার কেউ কেউ হয়তো আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। মোট কথা, কর্মীরা সারাদিন অতিবাহিত হলেও কোনো দিন নির্দেশনা না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন।
আবার আওয়ামী লীগেরই একটি মহল প্রচার করে বসলেন, বঙ্গবন্ধু নেই বটে, কিন্তু ক্ষমতায় আওয়ামী লীগই আছে কারণ বাকশালের দুই নম্বর নেতা এবং সাবেক আওয়ামী লীগের প্রথম সহ-সভাপতি খোন্দকার মোশতাক আহমেদই রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
বস্তুত, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তার রক্তাক্ত লাশ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে দ্বিতল বাড়ির সিঁড়িতে রক্ত ঝরাচ্ছিল একদিকে; অপর দিকে খোন্দকার মোশতাক আহমেদ শপথ নিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে। একইদিন একের পর এক সামরিক বাহিনীর প্রধানরা আনুগত্য প্রকাশ করছিলেন তথাকথিত রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাকের ওপর।
বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী সভার সদস্যদের সিংহভাগ অংশও খোন্দাকার মোশতাকের নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রী সভার সদস্য হিসেবে একের পর এক শপথ নিলেন। অসহনীয় সেই দৃশ্যাবলি বেদনাদায়কও বটে। কিন্তু নেতাদের এহেন আপসকামিতা ও সুবিধাবাদী ক্রিয়াকলাপ তরুণ কর্মীদের মনে একদিকে যেমন চরম বিভ্রান্তি-অপরদিকে মারাত্মক হতাশাও সৃষ্টি করেছিল। ফলে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিবাদ সংগঠিত করতে দেখা যায়নি। প্রতিবাদ সংগঠিত হয়েছে কিন্তু তা অনেক দেরিতে।
যারা ওই মুহূর্তে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসতে পারতেন সেই সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান প্রমুখ তাৎক্ষণিকভাবেই সামরিক বাহিনীর প্রহরাধীনে থাকাবস্থায় স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাকের নির্দেশে পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের সবাইকে আটকে রাখা হয়। প্রস্তাব দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণের, তাদের একে একে জেলাখানার অফিসকক্ষে ডেকে এনে। সবাই তারা এমন প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল। তার নীতি, আদর্শ বাস্তবায়ন করা হবে মর্মে প্রথমে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হোক। তারপর তারা ভেবে দেখবেন। নতুবা নয়।
পরিণতি দাঁড়াল ৩রা নভেম্বরের মর্মান্তিক হত্যালীলা। ওই দিন ভোররাতে খোন্দকার মোশতাকের নির্দেশে সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র কয়েকজন কারা আইন, দেশের প্রচলিত আইন- সব কিছু লঙ্ঘন করে কারারুদ্ধ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যা করে কাপুরুষের মতো। ওরা এতটাই ভীত সন্ত্রস্ত ছিল যে, এই হত্যালীলার খবর দেশের কোন সংবাদপত্রে, বেতার টেলিভিশনে প্রচার করতেও দেয়া হয়নি।
কিন্তু যে দিন ভোরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, ওই দিনই সন্ধ্যাবেলায় প্রদত্ত আকস্মিক এক বেতার ভাষণে খোন্দকার মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি বলে দাবি করে বঙ্গবন্ধুকে ‘গণতন্ত্র ও ইসলামবিরোধী’ ভূমিকা অবলম্বনের দায়ে অভিযুক্ত করে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ও মানবাধিকার ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন অথচ তার নির্দেশেই দেশের সব প্রথম স্থানের নেতাকে বঙ্গবন্ধুসহ নির্মমভাবে বিনাবিচারে হত্যা আটক ও কারাগারে হত্যা চালানো হলো- সমস্ত মিডিয়ার ন্যূনতম স্বাধীনতাও হরণ করা হলো। স্তম্ভিত হলো বাঙালি জাতি স্তম্ভিত হলো গোটা বিশ্ব।
ফলে, এসব নির্মম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে দেশবাসী, হাজার হাজার কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সব বিভ্রান্তিই দূর হলো এবং দেশের নানাস্থানে সংগঠিতভাবে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ ধ্বনিত হতে থাকল। যখন প্রকৃতই সবার উপলব্ধিতে এলো যে, এই দুটি হত্যালীলার অন্তর্নিহিত অঘোষিত উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশকেই হত্যা করা, বাংলাদেশকে নেতৃত্বহীন করা মুক্তিযুদ্ধ ও তার পূর্ববর্তী দুই দশকেরও বেশিকাল ধরে ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত বাঙালি জাতির গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার আইনের শাসন, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রের সুমহান সংগ্রামী আদর্শগুলোকে হত্যা করে, উধাও করে দিয়ে তার পরিবর্তে ১৯৪৭ এর আগষ্টপরবর্তী পাকিস্তানি ভাবাদর্শ ফিরিয়ে আনা।
এবার পেছনে ফিরে তাকাতে হয়। ফিরে তাকাতে হয় নেহায়েতই এত কিছু দুর্ঘটনার উৎসের সন্ধানে। সেই উৎসের যা পাওয়া যাঊেশ্ছ যা দেখা যাবে- তেমন ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীদিনে দেশ পরিচালনার মধ্য দিয়ে শুধু বাংলাদেশকে বাঁচানো, তার আদর্শমালাকে বাঁচানো, তার সঠিক ইতিহাসকে পুনরুদ্ধার করতে, পারব সেগুলোকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণও করতে।
খোন্দকার মোশতাককে বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ ও পরবর্তী সময়ে বাকশালের দুই নম্বর নেতা বানিয়েছিলেন। সেই মোশতাকই ছিল প্রকৃত বিশ্বাসঘাতক, স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধী এবং পুরোপুরি পাকিস্তানপন্থি ও সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্ববাসী।
আওয়ামী মুসলিম লীগের অসাম্প্রদায়িকীকরণ তিনি চাননি- তিনি তার বিরোধিতা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের তিনি বিরোধী ছিলেন তাই, কলকাতায় বসেও ১৯৭১ এ তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে গোপন সলাপরামর্শ করছিলেন; কোনো একটি কনফেডারেশনের কাঠামোর মাধ্যমে যাতে পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখা যায়। কিন্তু এই গোপন কার্যকলাপ ভারত সরকার জানতে পেরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদকে জানালে তিনি তাকে নাম-কা-ওয়াস্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে রেখে সব ক্ষমতা বিচারপ্রতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও আব্দুস সামাদ আজাদের হাতে অর্পণ করেন- ভারত সরকার ডিসেম্বর ‘৭১ পর্যন্ত তাকে গৃহবন্দি করে রাখেন। অথচ মুক্তিযুদ্ধের পর সেই মোশতাকের প্রতিই বঙ্গবন্ধু এতটা বিশ্বাস স্থাপন করে কী মারাত্মক ভুলই করেছিলেন- যার ফলে তাকে সপরিবারে নিহত হতে হলো- বাংলাদেশকে তার মৌল আদর্শ থেকেও বিচ্যুত হতে হলো।
একই ভুল আরও মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হলো। বিশ্বস্ত ও নীতিনিষ্ঠ মন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদকে বঙ্গবন্ধু স্বহস্তে ১৯৭৩ এ মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করলেন কিন্তু রেখে দিলেন খোন্দকার মোশতাককে চরমভাবে আদর্শিক শত্রম্ন এ কথা জনা সত্ত্ব্বেও।
সেই সাম্প্রদায়িকতাবাদী দলগুলো আজও দিব্যি ধর্মের নামে সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে বজায় আছে, রাষ্ট্রধর্ম দিব্যি নতুন করে সংবিধানে স্থায়ী আসন গেড়ে বসেছে, সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিলস্নাহ’ স্থাপন করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামায়াতে ইসলামী- হেফাজতে ইসলাম প্রমুখ ওই বৈধতার সুযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে নানা সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্ম দিয়ে চলেছে বাংলাদেশকে যেন বাংলা-পাকিস্তানি ভাবধারা ও আদর্শ সংবিধানে বজায় না থাকে- মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের প্রকৃত অস্তিত্ব যেন বজায় থাকে। কোনো সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক ও চিন্তাশীল দায়িত্ব জ্ঞান সম্পন্ন মুক্তিযোদ্ধা কিছুতেই ভুলতে পারেন না যে বাঙালি জাতি কদাপি আপস করে না- করেননি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যদি তার ঐতিহাসিক ৬ দফা ও ছাত্র সমাজের ১১ দফা নিয়ে আপস করতেন সমগ্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন তিনি কিন্তু সে পথে হাঁটেননি তিনি। তাই দেশটা স্বাধীন হতে পেরেছে। তবে বঙ্গবন্ধু কিছু মারাত্মক ভুল করে ছিলেন যার মাশুল তাকে এবং বাঙালি জাতিকে দিতে হয়েছে- আজও দিতে হচ্ছে।
এখন আমরা কী করব? আমরাও কি হাঁটব ভুলের পথে? আপসের পথে? বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, তার আদর্শ বাঁচবে কি তাতে? বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে ওই পথে?
আপস দেবে না সমাধান- তার প্রমাণ বঙ্গবন্ধু। ওই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে জিয়া এরশাদের বিসমিলস্নাহ, জামায়াত- হেফাজতের বৈধতা ও রাষ্ট্রধর্ম সংবিধান থেকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে ‘৭২ এর মূল সংবিধান চালু করে গণতন্ত্রের পথে নতুন করে অভিযাত্রা শুরু করা ছাড়া গত্যান্তর নেই। বঙ্গবন্ধু অমর হোন।
ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।
লেখক :সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত।