দুর্নীতি নামের অক্টোপাস আমাদের গ্রাস করছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু উদ্যোগ নিলেও এটি এতই নগণ্য যে দুর্নীতিবাজদের কাছে তা কোনো সতর্কবার্তা দিতে পারছে না। উপরন্তু দুদকের অভ্যন্তরেও দুর্নীতির ছায়া পড়তে শুরু করেছে। অথচ বিজ্ঞজনরা বারবার সতর্ক করছেন, এই সর্বগ্রাসী দুর্নীতি রোধ করা না গেলে দেশের কোনো উন্নয়নই কাঙ্ক্ষিত গতি পাবে না। উন্নয়ন টেকসইও হবে না। তাঁরা মনে করেন, দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগকে আরো অনেক গুণ জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি সততার চর্চাকে উৎসাহিত করতে হবে।
গণমাধ্যমে প্রতিদিনই দুর্নীতির অসংখ্য খবর আসছে। এর মধ্যে আছে সিলেটের ডিআইজি প্রিজন পার্থ গোপাল বণিকের বাসা থেকে নগদ ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার, দিনাজপুরে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে ৬০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের সময় হাতেনাতে আটক করেছে দুদকের একটি দল, পাইলট নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিমান বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত এমডি ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিলসহ তিনজনকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ, শতকোটি টাকা পাচারের অভিযোগে একটি রিয়াল এস্টেট কম্পানির এমডিকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত—এমনই আরো কিছু খবর। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রামের সাবেক সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিককেও দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক ভবনে বালিশ কেলেঙ্কারির রেশ এখনো কাটেনি। তদন্তেও দুর্নীতির অস্তিত্ব মিলেছে। প্রায় দেড় ডজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই ঘটনায় মামলাও হয়েছে। দুদক সীমিত সামর্থ্য নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেটুকু ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু দুর্নীতির ব্যাপকতার কাছে তা প্রায় কিছুই নয়। দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের আরো কিছু সংস্থা রয়েছে; কিন্তু তাদের তেমন কোনো সক্রিয়তা দৃশ্যমান নয়। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দুর্নীতিবিরোধী সেসব সংস্থার কর্মকাণ্ড জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, সর্বগ্রাসী দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার জন্য দুদকের সক্ষমতা, লোকবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট আরো অনেক বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি দুদকের অভ্যন্তরে যেন দুর্নীতি বাসা বাঁধতে না
পারে সে জন্য কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। দুর্নীতি রোধে দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে, তাকে আরো এগিয়ে নিতে হবে।