টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে বন্যা। গত কয়েক দিনে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। চট্টগ্রাম জেলার বন্যাকবলিত ১৪ উপজেলায় দুর্গত পাঁচ লাখ ২৮ হাজার ৭২৫ জন। ২০ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত। বান্দরবানের পাঁচ উপজেলা প্লাবিত। ১০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। খাগড়াছড়ির চার উপজেলায় ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এখানে ১৫ কিলোমিটার রাস্তাঘাট ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় রাঙামাটির ক্ষতিগ্রস্ত ১০ উপজেলার ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজার জেলার তিন লাখ ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ২৭৫ কিলোমিটার রাস্তা এবং ৬ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করলেও বিপদসীমার ওপরে বইছে। নীলফামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা দুই উপজেলায় ২৮ হাজারেরও বেশি। যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপরে বইছে। ৮২ হাজার মানুষ দুর্গত। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে চার শ পরিবার। গাইবান্ধায় যমুনা নদীর পানি বিপত্সীমার ওপরে রয়েছে। প্রায় দুই লাখ ৯০ হাজার মানুষ বানভাসি। এদিকে অবিরাম বর্ষণ আর উজানের ঢলে গাইবান্ধায় রেলপথ ডুবে যাওয়ায় ঢাকার সঙ্গে গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাটের রেল যোগাযোগ গত বুধবার সকাল থেকে বন্ধ হয়ে যায়।
ওদিকে বৃষ্টি কমার সঙ্গে সঙ্গে পানি কমতে থাকায় কোথাও কোথাও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে দেশের অভ্যন্তরে এবং উজানে বর্ষণ কমলেও পানির ঢলে দেশের নদ-নদীর ২৩টি পয়েন্টে এখনো পানি বিপত্সীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ৫ জুলাই থেকে বন্যা শুরু হয়। চলতি মাসের প্রথমার্ধে বন্যা ২১টিরও বেশি জেলায় বিস্তার ঘটে। এখন প্রভাব পড়ছে মধ্যাঞ্চলেও। ধীরে ধীরে শনিবার থেকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বাংলাদেশের উজানের এলাকাগুলোয় আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারি বর্ষণের আভাস না থাকলেও দেশের অভ্যন্তরে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-পদ্মার পানি বাড়বে আরো ৪৮ ঘণ্টা। এরই মধ্যে বন্যাকবলিত বেশির ভাগ এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। অনেক স্থানে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। বন্যায় গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে বিপদে পড়েছে মানুষ। শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি, গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। ওদিকে বৃষ্টি কমার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় গরমে দুর্গত এলাকায় রোগের প্রাদুর্ভাবের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা। বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বন্যার পানি যাতে বেশিদিন আটকে না থাকে তার জন্য এখন থেকেই নদী খননে মনোনিবেশ করতে হবে। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রম যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা আশা করব, বন্যাদুর্গতদের কষ্ট লাঘবে সম্ভব সব ব্যবস্থা নেবে সরকার।