জাতীয় মুক্তিমঞ্চের আলোচনা সভায় কর্ণেল (অব.) অলি ॥ মুক্তিমঞ্চ হচ্ছে দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম

8

জাতীয় মুক্তিমঞ্চের আহ্বায়ক ও এলডিপির চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব.) ড. অলি আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, দেশ আজ গভীর সংকটে। দেশে সুশাসন বলতে আজ কিছু নাই। মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। চারদিকে শুধু লুটপাট, ধর্ষণ আর খুন-খারাপী। জাতিকে এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতেই বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকেই জাতীয় মুক্তিমঞ্চের যাত্রা। অবিলম্বে পুনঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিমঞ্চ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার একটি কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের সাথে দেশপ্রেমিক যে কোন দল বা ব্যক্তিকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে কোন গাদ্দার ও মোনাফেকদের মুক্তিমঞ্চে ঠাঁই দেয়া হবে না। আমাদের স্পষ্ট কথা হলো বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে জাতিকে মুক্ত করতে জাতীয় মুক্তিমঞ্চ হচ্ছে দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম।
তিনি গতকাল জাতীয় মুক্তিমঞ্চ সিলেটের উদ্যোগে অবিলম্বে পুনঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম আরো বলেন, সিলেটের সাথে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও আমার রয়েছে গভীর সম্পর্ক। মুক্তিযুদ্ধের অনেক উত্তাল দিন আমি সিলেটে কাটিয়েছি। তখন দেশকে স্বাধীন করার জন্য শহীদ জিয়ার ঘোষণায় তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। সেদিন দেশকে স্বাধীন করেছি ঠিকই কিন্তু আজ নিজেদেরই স্বাধীনতা নেই। এই বয়সে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে বিশ্রামে থাকার কথা কিন্তু বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে মুক্তিমঞ্চ গঠন করেছি। সারাদেশ সফরের অংশ হিসেবে সিলেট আজকের সভা। দেশে আজ এমন অবস্থা বিরাজ করছে যে, ব্যাংকেও টাকার নিরাপত্তা নেই, কৃষক তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় বিশাল জনগোষ্ঠী ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত, ঘরে বাইরে কোথায়ও মেয়েদের নিরাপত্তা নেই। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব আজ বড় বেশী প্রয়োজন। কিন্তু সরকার একটি ঠুনকো মামলায় তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রীকে পরিত্যক্ত একটি বাড়ীকে কারাগার বানিয়ে আটকে রেখেছে। অথচ বেগম খালেদা জিয়া শুধু তিন বারের প্রধানমন্ত্রী নয়, সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী, মহান স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডারের স্ত্রী। কোন দুর্নীতির অপরাধ নয়, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তিনি দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে কারাগারে বন্দী রয়েছেন। এই মুহূর্তে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বৃহত্তর স্বার্থে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রতিষ্ঠা করেন সংসদীয় গণতন্ত্র। সুতরাং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি গণতন্ত্রের একটি অপরিহার্য দাবী। আমরা প্রতিহিংসার, ধ্বংসের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় করতে রাজপথে নামতে চাই। দেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে মুক্তিমঞ্চের আওয়াজকে পৌছে দিতে হবে। দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যকে সুসংহত করার মাধ্যমে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। অনেকে জামায়াত নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে চায়। বুঝে নিন তারা জাতির ঐক্য চায় না, মানুষের মুক্তির চায়না। এদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য মুক্তিমঞ্চ সকল দেশপ্রেমিক নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন, জাতীয় মুক্তিমঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, এলডিপির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদওয়ান আহমদ, জাগপার কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, শাহাদাত হোসেন সেলিম, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শিক্ষাবিদ লে. কর্ণেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, জাগপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আসাদুর রহমান খান, সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী মোঃ শাহজাহান আলী, সিলেট জেলা জাগপার সভাপতি শাহজাহান আহমদ লিটন, মহানগর বিএনপির সহ-যোগাযোগ সম্পাদক উজ্জল রঞ্জন চন্দ। সভার শুরতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আলী আকবর রাজন। উপস্থিত ছিলেন, সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, দফতর সম্পাদক সৈয়দ রেজাউল করিম আলো, পরিবারকল্যান সম্পাদক লল্লিক আহমদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক সুহাদ রব চৌধুরী প্রমুখ।
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক বলেন, ২০ দলীয় জোটের সাথে আমাদের কোন বিভেদ নেই। জাতীয় মুক্তিমঞ্চ আলাদা প্লাটফর্ম হলেও ২০ দলীয় জোটের সাথে রয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে বিগত নির্বাচন পর্যন্ত আমাদেরকে জোট ছাড়তে অনেক লোভ দেখানো হয়েছে। কিন্তু আমরা যাইনি। কারণ আমরা গাদ্দারী করতে রাজনীতিতে আসি নাই। সরকার আমাদের উপর সমস্যার বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে আমরা তা বহন করেই চলেছি। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি তা কিন্তু বিদেশী শক্তির দ্বারা নই। বরং আমাদের দেশের আজ্ঞাবহ প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা। এথেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্রের মুক্তির স্বার্থেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্যফ্রন্টের পাতানো ফাদে পড়ে গণফোরাম দুটি আসন পেয়েছে বলেই বিএনপির পাঁচজন সংসদ সদস্যকে সংসদে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। অথচ প্রত্যাখ্যান করা নির্বাচনে বিজয়ীদের সংসদে যাওয়ার কথা ছিলনা। নিজেদের মধ্যে সমালোচনা আমরা করবো তবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবী সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বে। বিজ্ঞপ্তি