করোনার বহুল সংক্রমণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার যে দুঃসহ চিত্র দৃশ্যমান হয়েছে সেখানে চিকিৎসা সামগ্রীর মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। করোনা মহামারীর দুর্যোগকে কাজে লাগিয়ে সুবিধা নেয়ার বিপন্নতাও সবাইকে হতবাক করে দেয়। করোনায় সম্মুখ সময়ের যোদ্ধা বলতে চিকিৎসক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্যও বিশেষ প্রয়োজন পড়ে পিপিই এবং গগলসের। আর যেসব ওষুধ বিভিন্ন ভাইরাস রোগে কার্যকরী সেটার প্রতিও বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণে স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রীর ক্রয়-বিক্রয় ব্যাপারটি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে সামনে চলে আসে। আর ওষুধপত্র নিয়েও চলে চরম অনিয়ম ও নৈরাজ্য। সেখানে ভেজাল থেকে শুরু করে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বাজারও রমরমা এমন তথ্য উঠে আসে। সেখানে জড়িত এক কঠিন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী চক্র। যারা করোনা সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যকে এক লাগামহীন অবস্থায় নিয়ে গেছে। মানহীন ওষুধ ছাড়া মূল্যের ব্যাপারে চলছে চরম অরাজকতা। মূল দামের অনেক বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। বৃহৎ পরিসরে তিন ধাপে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ওষুধের দাম। যেখানে ক্রেতা ঠকানোর দুঃসহ চিত্রও বিদ্যমান। এক্ষেত্রে দেশীয় কিছু ওষুধ কোম্পানি ছাড়াও অসাধু ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসা সেবার এ অতি প্রাসঙ্গিক জিনিসটি। এসব নিয়ে ঘোরতর আপত্তি উঠলেও এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ওষুধ প্রশাসন ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীরও বিশেষ দায়বদ্ধতা রয়েছে মান আর দাম নিয়ে তৈরি হওয়া সংশয়ের কঠোর নজরদারি করা। নকল, ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ, নিবন্ধনহীন ওষুধ এবং সুরক্ষা সামগ্রীর ওপর এমন হঠকারী বাণিজ্যে সরাসরি জরিপ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াও কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা। তবে পুলিশী অভিযানে এমন সব নৈরাজ্য চিহ্নিত হলেও সর্বশেষ আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া এখনও সময়ের ব্যাপার। ওষুধ ছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়েও চলেছে অসহনীয় বাটপাড়ি। চিকিৎসা সামগ্রী এমন দুরবস্থায় ঔষধ প্রশাসন সেভাবে কোন বক্তব্যও পেশ করতে পারছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে কিছু ওষুধের দাম বাড়ানোর কোন সুযোগই নেই। যেসব ওষুধ সরকারী নির্দেশনায় দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানেও যদি কোন অসৎ কার্যক্রম চলে তাহলে তীক্ষ নজরদারিতে তা খতিয়ে দেখার অবকাশ ঔষধ প্রশাসনের রয়েছে।
আমাদের দেশে ওষুধ শিল্পের মান ও অগ্রগতি নিয়ে আশার আলো দৃশ্যমান। প্রায় ১৫০টি দেশে আমাদের ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসা সেবার বিভিন্ন সামগ্রী রফতানিও করে যাচ্ছে। তবে দেশের ওষুধের অভ্যন্তরীণ বাজারের যে লাগামহীন অসৎ বাণিজ্য তাতেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসহ জীবন সুরক্ষার। ঔষধ প্রশাসন নীতিমালা প্রয়োগ করলেও তাকে উপেক্ষা করার অপসংস্কৃতি ওষুধের বাজারকে অস্থির করে তুলছে। আইনী বিধান থাকলেও তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয় না। স্বাস্থ্য ও জীবন সুরক্ষায় ঔষধ প্রশাসনকে আরও যত্নবান এবং সক্রিয় হওয়া বাঞ্ছনীয়।