কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের প্রতি প্রকৃত ‘জনগণের সেবক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি অগ্রাধিকার প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে বিভাগ ও জেলার প্রশাসনিক প্রধানদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনার কর্মস্থলে দায়িত্ব ও ক্ষমতার মধ্যে ব্যবধান বজায় রাখুন। ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না, জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেবেন।’
রাষ্ট্র প্রধান মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের বিরাজমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনার জন্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এ সম্মেলন সরকারের নীতি নির্ধারকগণের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে নীতি বাস্তবায়নকারী হিসেবে আপনাদের মতবিনিময়ের সুযোগ করে দিয়েছে।
জেলা প্রশাসন কর্মকর্তাদের দক্ষ নেতৃত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ডিসিদের অবশ্যই জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়নে কার্যকর ও সঠিক নেতৃত্বদান করতে হবে। রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘মনে রাখবেন কোন প্রকৃত দারিদ্র্য লোকেরা যাতে সরকারি কর্মসূচির আওতার বাইরে না থাকে।’
আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক উন্নতি বিশেষ করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তিনি ধানচাষীদের তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার উল্লেখ করে তাদেরকে স্বার্থান্বেষী মহলের শোষণ থেকে রক্ষায় বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ডিসিদের প্রতি নির্দেশনা দেন।
গৃহায়ন, শিক্ষা, শিল্প ভিত্তিক কৃষির সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি উপজেলা ও উপ-শহরগুলোকে আধুনিক করে গড়ে তোলার জন্য ডিসিদের প্রতি আহ্বান জানান।
আবদুল হামিদ ডিসিদের প্রতি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন, যাতে তৃণমূল পর্যন্ত আইসিটি সেবা পৌঁছানো যায়।
রাষ্ট্রপতি বর্তমান ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট অফিসের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং প্রভাবশালী মহলের কারো দোষ পাওয়া গেলে তাদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও তিনি ডিসিদের নির্দেশনা দেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, যে কোন ধরনের অনিয়ম এবং গণমানুষের দুর্ভোগ বন্ধ করাটা দুরহ কাজ। এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মচারি ও লোক অসাধুপায়ে অর্থ উপার্জন করছে।
তিনি বলেন, সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে, ফলে মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় আপনাদেরকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদকের অপব্যবহার দেশের তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয় হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি দুর্নীতিকে উন্নয়নের মূল বাধা হিসেবে উল্লেখ করে প্রশাসনের সকল স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহবান জানান।
তিনি গণমানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে মেধা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে তাদের প্রতি পরামর্শ দেন।
জেলা প্রশাসকগণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম শফিউল আলম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান এবং সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল হক বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনারগণ, বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ এবং জেলা প্রশাসকগণ উপস্থিত ছিলেন।