মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে নিয়ে বাংলাদেশ আজ চরম সংকটে নিমজ্জিত। জাতিসংঘসহ পাশ্চাত্যের কিছু দেশ কিছু সহায়তা দিলেও সংকট সমাধানে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একাধিকবার বিষয়টি উত্থাপিত হলেও চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে কোনো সমাধান আসেনি। অথচ রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের সীমানা ছাড়িয়ে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকে অন্যান্য দেশেও পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অনেকে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও জড়িয়ে গেছে। যত দিন যাবে, এই সংকট ততই ঘনীভূত হবে। তখন তা শুধু বাংলাদেশের স্থিতিশীলতায়ই আঘাত করবে না, আঞ্চলিক নিরাপত্তায়ও মারাত্মক সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। তাই এই সংকটের অতি দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে চীন সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। গোটা দুনিয়ায় সমালোচিত মিয়ানমার এখন কার্যত চীনের ওপর নির্ভরশীল। চীন সমঝোতার উদ্যোগ নিলে মিয়ানমার তা মেনে নিতে বাধ্য হবে বলেই মনে করেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সেদিক থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করেন তাঁরা।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশেই চীনের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে এবং বিনিয়োগের পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। তা ছাড়া চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর সঙ্গেও যুক্ত উভয় দেশ। তাই রোহিঙ্গা সংকটের যৌক্তিক সমাধান তিন দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনও বিভিন্ন সময় তাদের বক্তব্যে এই সংকটের দ্রুত সমাধান আশা করেছে। এর আগে চীন সহযোগিতার হাতও বাড়িয়েছিল। তখনই মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। কিন্তু এরপর চীনের ভূমিকা অনেকটাই গৌণ হয়ে পড়ে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, ১ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ফলে চীন আবার রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মিয়ানমারের প্রতি কারো আর কোনো আস্থা নেই। রোহিঙ্গাদের স্থায়ী পুনর্বাসন ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পুরো বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব নিতে হবে চীনকে।
আমরা চাই, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকুক এবং উত্তরোত্তর তা আরো গতিশীল হোক। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গেও কার্যকর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সমস্যা যেন কোনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সে ব্যাপারে সব পক্ষকেই সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা যেন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টের কারণ না হয়ে ওঠে, সে ব্যাপারেও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আমরা আশা করি, রোহিঙ্গারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে ফিরে যাবে।