স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ভেঙ্গে পড়া শাহবাজপুর সেতুর যান চলাচলের জন্য খুলে দিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। গতকাল সোমবার সকালে সেতু খুলে দেওয়ার পর থেকে এই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। যা ১৯ জুন থেকে প্রায় বন্ধ ছিলো। তবে যান চলাচল শুরু হলেও ওই এলাকায় তীব্র যানজট লেগে আছে।
সোমবার সকাল থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য জরুরী ভিত্তিতে বেইলি ব্রীজটি চালু করা হয় বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামী আল মামুন। তিনি বলেন, জনদূর্ভোগের কথা বিবেচনা করা আপাতত বেইলি ব্রীজ চালু করা হয়েছে। আর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ শেষ করতে আরও ১০দিনের মতো সময় লাগবে। আশা করছি ৩ জুলাই সেটি চালু হবে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে বেইলি সেতু দিয়ে সব ধরণের যাবাহন চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ১৮ জুন সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর এলাকায় তিতাস নদীর ওপর সেতুর চতুর্থ স্প্যানের ফুটপাতসহ রেলিং ভেঙে পড়ে। এর ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ১৯ জুন থেকে ওই সেতু দিয়ে ভারী ও মাঝারি যানবাহন চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেয় সওজ বিভাগ। এতে বন্ধ হয়ে পড়ে সিলেট থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী বাস ও ট্রাক চলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, ২০ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সারাদেশের সাথে ফের সিলেটের রেল যোগাযোগ চালু হয়েছে। এর ফলে সিলেটের সাথে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। গতকাল সোমবার রাত ৭টার দিকে এ যোগাযোগ চালু হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেন বরমচাল স্টেশনের মাস্টার রোমান আহমদ।
সোমবার সকালে আখাউড়া থেকে আসা দুইটি রিলিফ ট্রেনের সাহায্য রেলের বগি উদ্ধার ও লাইন স্বাভাবিক রাখতে কাজ শুরু করে রেল বিভাগ। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ শেষ হয় তাদের লাইন স্বাভাবিক করার কাজ। এর ফলে টানা ২০ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পরে ফের সিলেটের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ চালু হয়।
এর আগে নদীতে ছিটকে পড়ার ট্রেনের ৬টি বগি সিলেট ও মৌলভীবাজার দমকল বাহিনীর ১২টি ইউনিট উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। তাদের সহযোগিতায় কাজ করে রেলওয়ে পুলিশ এবং বিজিবির একাধিক দল।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উয়ারদৌস হাসান জানান, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস হতাহতদের উদ্ধারে কাজ করে। ট্রেনের অন্য যাত্রীদেরও নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়ার কাজ করা হয়। উদ্ধারকাজে বিজিবি অংশ নেয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের সহকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, হতাহতদের উদ্ধার সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও সিলেট সদর দফতর থেকে দমকল বাহিনীর একাধিক ইউনিট উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। এছাড়া স্থানীয় এমপি ও জনপ্রতিনিধিরা উদ্ধার কাজ পরিদর্শন করেন।
গত রবিবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা যাওয়ার পথে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল এলাকায় সেতু ভেঙ্গে উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ৩টি বগি নদীতে ছিটকে পড়ে। এরপর থেকে সিলেটের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় ৬ জন নিহত ও অন্তত শতাধিক ট্রেন যাত্রী আহত হন। এর মধ্যে নিহত ৬ জনের মাঝে ৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। পরিচয় পাওয়া ৩ জনই নারী। তবে অপর নিহতদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। নিহতদের মধ্যে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স বাগেরহাট জেলার মোল্লার হাট থানার আতজুরি ভানদর খোলা গ্রামের মো. আকরাম মোল্লার কন্যা সানজিদা আক্তার, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুরের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের আব্দুল বারীর কন্যা ফাহমিদা ইয়াসমিন ইভা এবং ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও শেখেরটিলার মৃত চেরাগ মিয়ার কন্যা মনোয়ারা পারভীন লায়লন (৫৫)। মনোয়ারা পারভীন লায়লনের শশুর বাড়ি কুলাউড়া উপজেলায়।