মুদ্রাপাচার রোধে পদক্ষেপ জরুরী

21

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে আন্তর্দেশীয় বৈধ আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি অবৈধ লেনদেনও বহুগুণে বেড়ে গেছে। একইভাবে বেড়ে গেছে দেশ থেকে মুদ্রাপাচারের পরিমাণও। সুইজারল্যান্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের মুদ্রাপাচার বেড়েছে ২০ শতাংশ, পাচার হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পের আওতায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি বাংলাদেশি সেখানে বাড়ি কিনেছে। বাড়ি ক্রেতাদের সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ রয়েছে তৃতীয় স্থানে। মুদ্রাপাচার হলে দেশের অর্থনীতি দাঁড়াবে কিভাবে?
মুদ্রাপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষায়িত শাখা রয়েছে। কিন্তু তাদের দক্ষতা নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে আরো কিছু সংস্থা কাজ করছে, তাদের ফলাফলও সন্তোষজনক নয়। প্রতিবেশী অনেক দেশই মুদ্রাপাচার রোধে যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে। ভারতে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে মুদ্রাপাচার অর্ধেকে নেমেছে। নেপালে চার ভাগের এক ভাগে নেমেছে। আমরা পারছি না কেন? আমাদের ব্যর্থতা কোথায়, নীতিনির্ধারকদের তা খুঁজে বের করতে হবে। প্রতিবছরই বাজেট প্রণয়নের সময় মুদ্রাপাচার রোধে কিছু উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়। এবারও বলা হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, অন্যান্য বছরের মতোই এ বছরও এসব কথার কথা হয়েই থাকবে। বাস্তবে পরিস্থিতি আরো খারাপই হবে। বাজেটে বলা হয়েছে, ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং রোধে পণ্যের চালান পরীক্ষা করতে বন্দরগুলোতে আধুনিক স্ক্যানার মেশিন বসানো হবে। কিন্তু কবে নাগাদ কতগুলো বন্দরে তা বসানো হবে, শতভাগ আমদানি-রপ্তানি স্ক্যানিংয়ের আওতায় আসবে কি না তা স্পষ্ট করা হয়নি। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হওয়ায় তৈরি পোশাকশিল্পকে এ বছরও বাজেটে ১ শতাংশ প্রণোদনা প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তেমনি একটি সুবিধা হচ্ছে, বিনা শুল্কে কাঁচামাল আমদানি। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরেরই টাস্কফোর্স বলছে, প্রায় শতভাগ কারখানাই নানা ধরনের আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সুনির্দিষ্টভাবে ৫৬২টি প্রতিষ্ঠানকে তারা চিহ্নিত করেছে, যেগুলো বিভিন্ন সময়ে এক হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই আমদানিতে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য দেখায় এবং অতিরিক্ত অর্থ পাচার করে।
দেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে মুদ্রাপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর হতেই হবে। অর্থনৈতিক গোয়েন্দা তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। দ্রুততম সময়ে বন্দরগুলোতে শতভাগ স্ক্যানিংসহ অন্যান্য প্রযুক্তির প্রয়োগ করতে হবে। আমদানি-রপ্তানির মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।