কবির কাঞ্চন
খুব ফুরফুরে মেজাজে এঘরওঘর পায়চারি করছে সোহেলী।
এ বাড়িতে কাজ করতে এসে সবার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেছে সে। জারিম চৌধুরীর সাথে সোহেলীর কোন ধরনের রক্তের সম্পর্ক নেই। তবু গৃহকর্মীর কাজ করতে এসে খালুজান কেমন হতে পারে তা সে ভালোভাবে বুঝেছে। সোহেলীর সাথে তিনি কোনদিন রাগত স্বরে কথা বলেননি। প্রতিদিন বাইরে থেকে ফিরে এসে তিনি বৌ, বাচ্চার খোঁজ-খবর নেয়ার পরপরই সোহেলীর খোঁজ নেন। সোহেলীর তখন কী যে আনন্দ লাগে! তার কাছে নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান বলে মনে হয়। সবার সাথে বসে সোহেলী একসাথে টিভি দেখে। সোহেলীর আরও ভালো লাগে টিভি দেখার সময় ওকে ফ্লোরে বসতে হয় না। সবার মতো করে সোফায় বসেই বিনোদন উপভোগ করে।
একদিন টিভি দেখতে দেখতে সে নীরবে দু’চোখের জল ছেড়ে দেয়।
জারিম চৌধুরীর একমাত্র ছেলে, আরিম সোহেলীকে কাঁদতে দেখে তার মায়ের শাড়ীর আঁচল টানতে টানতে বলল,
-মা, দেখো না, সোহেলী আপু কাঁদছে।
ততক্ষণে সোহেলী ওড়না দিয়ে চোখের জল মুছতে চেষ্টা করে।
শাহীন সুলতানা সোহেলীর দিকে মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
- সোহেলী, কি হয়েছে তোমার? তুমি কাঁদছো কেন?
আমাদের কারো কোন ব্যবহারে মনে কষ্ট পেয়েছো?
সোহেলী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল,
- না, খালাম্মা, আমাকে কেউ কিছু বলেনি।
- তাহলে কি বাড়ির কথা মনে পড়েছে?
- না, তা নয়।
- তবে কাঁদলে কেন?
সোহেলী আরো আবেগী হয়ে বলল,
- খালাম্মা, আমি এ বাড়িতে এসেছি আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে। এতদিনে আপনাদের সবার কাছ থেকে আমি যে স্নেহ ভালোবাসা পেয়েছি, তা কখনও ভুলবার নয়। আপনাদের ভালোবাসা পেয়ে আমি আমার বাড়ির কথা পর্যন্ত ভুলে যেতে বসেছি।
সেই বুঝ হবার পর মাকে হারিয়েছি। বাবা আবার বিয়ে করলেন। সৎমা আমাকে কারণে-অকারণে খুব মারধোর করতো। রাতে বাবাকে তার বিরুদ্ধে নালিশ দিতে বুকে সাহস পেতাম না। মাঝে এক দুইদিন বাবাকে জানিয়েছি। বাবা নির্বাক থেকেছে। বাবার অবস্থা দেখে মনে হতো নতুন মাকে বাবা খুব ভয় পেতেন। এরপর কোনভাবে নতুন মা তা জেনে গেলে আমার পরদিন খুব অশান্তিতে কাটতো।
সেই থেকে বাবার কাছে আর কখনও নালিশ করিনি। সৎমা কোনভাবেই চাননি, আমি তাদের সাথে একসাথে থাকি। অবশেষে আপনাদের বাসায় পাঠিয়ে নিজে শান্তিতে থাকতে চাইলেন। কিন্তু আলাহর কি বিচার! চির অশান্তির ঘর থেকে শান্তিময় এক ঘরে আমার ঠাঁই হলো। এখানে এসে আমার ভালো বাবার মতো একজন খালুসাব পেলাম। হারানো মায়ের মতো একজন খালাম্মা পেলাম। তাছাড়া আরিমের মতো একজন ছোট ভাই পেয়েছি। এ দুনিয়ায় আমার চেয়ে সুখী আর কে আছে?
- সুখে থাকলে আবার কাঁদছো কেন?
- গতকাল রাত আটটার খবরে দেখলাম আমার মতো একজন কাজের মেয়েকে তার মালিকের স্ত্রী মেরে রক্তাক্ত করেছেন। মেয়েটি বাঁচা-মরার সাথে লড়াই করছে। তিনি শুধু মেরেই শান্ত হননি। মেয়েটির গায়ের বিভিন্ন স্থানে আগুনের ছ্যাকাও দিয়েছেন। মেয়েটির আর্তনাদে আশপাশের ঘর থেকে লোকজন ছুটে আসে। তারপর এক কান দুই কান হয়ে বিষয়টি চলে আসে স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থার একজন কর্মীর কানে।
এরপর মানবাধিকার সংস্থা পুলিশ নিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। আর পুলিশ মেয়েটির মালিক ও মালিকের স্ত্রীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। খুব অবাক করা কথা হলো, মেয়েটি যার বাসায় কাজ করতো তার মালিক দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। স্ত্রীর কারণে তাকেও জেলে যেতে হয়েছে।
- হ্যাঁ, সোহেলী আমিও সেই খবর দেখেছি। কিন্তু তোমার মতো অতো কাছ থেকে অনুভব করিনি। আমি ভেবেছি, এমন ঘটনা তো আজকাল হরহামেশায় ঘটছে। দিনেদিনে আমরা সবাই পাষন্ড হয়ে যাচ্ছি। কারোর মধ্যে সামান্যতম মানবতাবোধ নেই। নইলে কিভাবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে আঘাত করতে পারে। ভাবতে অবাক লাগে। যখন দেখি সেই পাষন্ড কারো না কারোর মা।
- খালাম্মা জানেন, আমি কেন নিজেকে সবচেয়ে সুখী মনে করি? আমি একজন কাজের মেয়ে। এ বাসায় আসার পর থেকে একবারের জন্যও আমি অনুভব করতে পারিনি।
- তুমিও তো কখনো আমাদের অবাধ্য হওনি। যেভাবে বলেছি ঠিক সেভাবে চলছো। এমন মেয়ে পাওয়াও তো ভাগ্যের ব্যাপার। তোমার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল কখন বের হচ্ছে?
- শুনেছি আগামী সপ্তাহে দেবে।
- দোয়া করি আলাহ তোমাকে অনেক বড় করুক।
সোহেলী খালাম্মার মুখের দিকে মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকে। দেখতে দেখতে রমজান মাস চলে আসে।
সোহেলী রমজান মাসের সবগুলো রোজা রাখে।
ঈদের পূর্বরাত। ব্যাগভর্তি ঈদের কেনাকাটা নিয়ে বাসায় ফিরেন জারিম চৌধুরী।
শাহীন সুলতানা স্বামীর হাত থেকে সবগুলো ব্যাগ নিয়ে একে একে সব বের করলেন।
আরিমের জন্য সুন্দর কাজ করা জামা, জিন্সের প্যান্ট, সানগ্লাস ও একটি ফতুয়া এনেছেন।
আরিম নতুন জামা সানগ্লাস পরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারাকে বারবার দেখছে।
শাহীন সুলতানা জোরে জোরে ডেকে বললেন,
– সোহেলী, কোথায়? এদিকে এসো। দেখো, তোমার আংকেল তোমার জন্য কী কী এনেছেন।
সোহেলী খালাম্মার গলার আওয়াজ পেয়ে এক দৌড়ে সামনে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। শাহীন সুলতানা ব্যাগ থেকে একে একে তিনটি পোশাক বের করেন। এরপর সোহেলীর মুখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন,
– সোহেলী, আরো কাছে এসো। এই নাও। এগুলো তোমার ঈদের পোশাক।
সোহেলী এত সুন্দর সুন্দর পোশাক দেখে আনন্দিত হয়।
সোহেলীকে খুশি দেখে জারিম চৌধুরী স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসেন। ততক্ষণে আরিমকে সাথে নিয়ে সোহেলী বৈঠকখানার দিকে চলে আসে।
আরিমকে নিয়ে সোহেলীর খুব হাসিখুশিতে সময় কাটে।
রাত সাড়ে বারোটা বাজে। আরিমের চোখে ঘুম নেই।
এবারই প্রথম ঈদের আনন্দ অনুভব করছে সে। ঈদের দিন সকালে গোছল সেরে বাবার সাথে ঈদগাহে নামায পড়তে যাবে। নামায শেষে পছন্দমতো খেলনা কিনবে। তারপর সোহেলী আপুর সাথে মজা করে খেলবে। আব্বু, আম্মু, সোহেলী আপুরসহ আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ঈদ সেলামি পাবে। ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে আনন্দে আরিমের চোখে ঘুম নেই।
অনেক চেষ্টা করেও আরিমকে ঘুম পাড়াতে পারলেন না জারিম চৌধুরী ও শাহীন সুলতানা। শেষে শাহীন সুলতানা জোরে জোরে ডাকতে লাগলেন,
– সোহেলী, ঘুমিয়ে গেছিস। একটু এদিকে আয় তো, মা।
সোহেলী তখনও জেগে আছে। ঘুমাবেই বা কি করে। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পর ঈদ। সবাই নিজের বাবা-মা’র সাথে থেকে কতো আনন্দ করবে। ঘুরতে বের হবে। ওর তো মা নেই। শত চেষ্টা করেও মাকে কাছে তাকে পাওয়া যাবে না। শুধু স্মৃতির রোমন্থন করা যাবে। এ নিয়ে বুকে পাথর বাধা আছে। তাই চোখের জলে মায়ের মুখচ্ছবি ভাসছে।
বাবার কথা ভাবতেই মনটা দুবড়েমুচড়ে একাকার হয়ে আসে। সৎমা খারাপ হলেও বাবা তো তাকে ভালোবাসতে পারতেন। মা হারা এই পৃথিবীতে কিছুটা হলেও তার অসহায়ত্বকে বুঝতে পারতেন।
নতুন মায়ের কাছে বাবা কেন এত অসহায়? কোনভাবেই হিসেব মিলে না তার। সবই নিয়তির খেলা। ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে অশ্রুজলে তার চোখের পাতা ভিজে আসে। ঝটপট ওড়না দিয়ে চোখ-মুখ মুছে খালাম্মার কাছে ছুটে আসে সে।
সোহেলীকে বিষন্ন দেখে শাহীন সুলতানা জিজ্ঞেস করলেন,
– কিরে মা! তোর এ কি হাল হয়েছে। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই তো ঈদ। এমন আনন্দের দিনে মন খারাপ করছিস যে?
– না, খালাম্মা। হঠাৎ করে বাবা-মা’র কথা মনে পড়লো। তা-ই।
শাহীন সুলতানা মায়াভরা চোখে সোহেলীর এদিকে তাকিয়ে বললেন,
– এদিকে আয়, মা।
সোহেলী দৌড়ে ছুটে আসে। মুহূর্তে শাহীন সুলতানা সোহেলীকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগে আপ্লুত হয়ে কাঁদতে লাগলেন। মায়ের আদর খোঁজা সোহলীও যেন হারানো মায়ের বুকে প্রশান্তি ফিরে পেয়েছে। সে আনন্দে কাঁদতে লাগলো। জারিম চৌধুরী আর আরিম এমন দৃশ্যে নির্বাক তাকিয়ে রইলো।
একটুপর শাহীন সুলতানা সোহেলীকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– সোহেলী, একদিন তুমি এ বাসায় কাজের মেয়ে হয়ে এসেছিলে। এখন তুমি আর আমাদের কাজের মেয়ে নও। আমরা মনে করি, আমাদের আরিমের সাথে আলাহপাক তোমাকে আমাদের মেয়ে হিসেবে দান করেছেন। তাছাড়া তুমি পড়াশুনাও করছো। আরও শক্ত হও, মা।
– আম্মা, আমার খারাপ লাগছে এই ভেবে, আমার জন্মদাতা কিভাবে আমার কথা ভুলে যেতে পারে!
প্রথম প্রথম আমায় দেখতে এলেও গত দুই বছরে একবারও এলেন না। মা বেঁচে নেই। তা তো মেনে নিয়েছি। কিন্তু বাবা তো আছেন!
শাহীন সুলতানা সোহেলীর আবেগকে বুঝে বললেন,
– বাদ দাও ওসব। তোমার বাবাও হয়তো কোন সমস্যায় আছেন। এখন রাত অনেক হলো। তোমাকে যেজন্য ডেকেছি। আরিমকে অনেক চেষ্টা করেও ঘুম পাড়াতে পারছি না। তুমি একটু চেষ্টা করো।
– ঠিক আছে, মা।
এই কথা বলে আরিমকে কোলে নিয়ে সোহেলী নিজের রুমের দিকে চলে আসে।
সোহেলীকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে জারিম চৌধুরী স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
– শাহীন, এজন্য তোমাকে পেয়ে আমি গর্বিত। আমার মন মানসিকতার সাথে তোমার অনেক মিল। সোহেলীকে আমিও মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেছি। আমাদের তো কোন মেয়ে নেই। একটি মেয়ের জন্য আমরা কম চেষ্টা তো করিনি। কিন্তু হলো না। আমার মনে হয়, আলাহ সোহেলীকে আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন। আমার ইচ্ছে, সোহেলীর লেখাপড়া শেষ হলে ভালো একটা পাত্র দেখে মহা ধুমধামে ওর বিয়ে দেব। তুমি কি বলো?
শাহীন সুলতানা খুশি হয়ে বললেন,
– তুমি তো আমার মনের কথাটা বললে। আমরা মেয়েকে পড়াশুনা করাচ্ছি। তাছাড়া সবাই তো জানে, সোহেলী আমাদের মেয়ে। আমরা ওকে সুপাত্র দেখে বিয়ে দেবো। যাতে ওর মনে কোন কষ্ট না থাকে। মা মরা মেয়ে। তার উপর বাবা তো থেকেও নেই।
– আমি ভেবেছি, আলাহ তো আমাদের চলবার মতো যথেষ্ট সম্পদ দান করেছেন। এমনও হতে পারে সোহেলী আমাদের জন্য সৌভাগ্য হয়ে এসেছে। একটা বিষয় খেয়াল করেছো? যেদিন প্রথম সোহেলীকে নিয়ে আসি, সেদিন থেকে আমাদের ব্যবসার উন্নতির শুরু হয়েছে।
– হ্যাঁ, তুমি একদম ঠিক কথা বলেছো।
জারিম চৌধুরী একটু ব্যায়াম সেরে নিয়ে ঘুমঘুম চোখে বললেন,
– সোহেলীকে পেয়ে আরিম এতক্ষণে নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়েছে। গিয়ে ওকে এখানে নিয়ে এসো।
শাহীন সুলতানা সোহেলীর রুমে এসে দু’জনকে গভীর ঘুমে মগ্ন থাকতে দেখে একাকী বেডরুমে ফিরে আসেন।
আজ খুব ভোরে সোহেলী ঘুম থেকে জাগে। দাঁত ব্রাশ শেষ করে খালাম্মাকেও ঘুম থেকে জাগায়।
ততক্ষণে জারিম চৌধুরীরও ঘুম ভাঙ্গে।
তিনি ওযু করে মসজিদের দিকে চলে যান।
সোহেলী খালাম্মার সাথে একসাথে নামায আদায় করলো। এরপর ঈদের নানান খাবার তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
শাহীন সুলতানা মনযোগ দিয়ে রাঁধছেন। আর সোহেলী তাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে।
সকাল সাতটা বাজছে। রান্নার কাজ শেষ করে খালাম্মা ও সোহেলী গোছল করতে যায়।
ঈদের নামায শুরু হবে সাড়ে আটটায়। জারিম চৌধুরী নতুন পায়জামা পাঞ্জেবী পরেছেন। এরপর আরিমকে নতুন পায়জামা পাঞ্জেবী পরিয়ে ঈদগাঁহের দিকে হাঁটতে লাগলেন।
ঈদগাহে হাজারো মানুষের ভীড়। সবার পরনে নতুন পোশাক। গা থেকে সুগন্ধি ছড়াচ্ছে। আরিমও সবার মতো করে বাবার সাথে পশ্চিমদিকে মুখ করে বসেছে। জীবনে এই প্রথম বাবার সাথে এত মানুষের সাথে নামায পড়তে এসেছে সে। তাই বারবার এদিকওদিক তাকাচ্ছে।
ঈদুল ফিতরের মূল্যবান আলোচনা শেষে ইমাম খুতবা পাঠ করলেন। এরপর যথাসময়ে নামায শুরু হলো। আরিমও বাবার সাথে নামায পড়লো।
নামায শেষে বাবার হাত ধরে বাসায় ফিরে আসে আরিম।
সোহেলী আপুকে নবরূপে দেখে আরিম আনন্দে আত্মহারা। বাবার হাতটা ছেড়ে দিয়ে সোহেলীর কাছে ছুটে এসে বলল,
– আপু, আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
সোহেলী মুছকি হেসে বলল,
– তাই নাকি! আমার ভাইটিকেও তো আজ খুব সুন্দর লাগছে।
– আপু, আম্মু কোথায়?
– খালাম্মা রান্নাঘরের দিকে গেছেন।
আরিম দৌড়ে মায়ের কাছে ছুটে যায়।
এদিকে সোহেলী মনে মনে ছটপট করছে। কখন সবাইকে একসাথে পাবে।
একটুপর খালুসাব বাসায় আসেন। সবার সামনে দাঁড়িয়ে সোহেলী আনন্দের সাথে বলল,
– খালাম্মা, সারাজীবন আপনাদের কাছ থেকে দু’হাতে চেয়ে নিয়েছি। আপনাদের ভালোবাসায় জীবন গড়েছি। আজ আমি আপনাদের সবাইকে ঈদের একটা উপহার দিতে চাই।
জারিম চৌধুরী স্ত্রীর মুখের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে সোহেলীকে বললেন,
– তুমি আমাদের ঈদ উপহার দিবে!
– হ্যাঁ, খালুসাব। আমি আপনাদের ঈদ উপহার দিব। একটু বসেন, প্লিজ।
এই কথা বলে নিজের রুমের দিকে ফিরে আসে সে।
সবগুলো উপহার নিয়ে আবার খাবার টেবিলের পাশে এসে থামলো সে। জারিম চৌধুরী, শাহীন সুলতানা ও আরিম কৌতুহলী হয়ে সোহেলীর দিকে তাকিয়ে আছেন।
সোহেলী আনন্দের মাঝে হঠাৎ কেঁদে ফেললো।শাহীন সুলতানা উতলা হয়ে ওর দিকে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
- আবার কি হয়েছে, সোহেলী? এই খুশির দিনে তুমি কাঁদছো কেন?
সোহেলী চোখের জল মুছতে মুছতে বলল,
- খালাম্মা, এ আমার কান্না নয়; আনন্দ অশ্রু।
এই কথা বলে সোহেলী খালাম্মার হাতে তার ঈদ উপহার তুলে দেয়। তারপর খালুসাব ও আরিমের হাতে তাদের ঈদ উপহার তুলে দেয়।
সোহেলীর কাছ থেকে ঈদ উপহার পেয়ে সবাই অভিভূত।
শাহীন সুলতানাকে “মা”, জারিম চৌধুরীকে “বাবা” আর আরিমকে “ভাই” লেখা তিনটি আর্টপেপার দেয়।
এই ঈদ উপহার তৈরি করতে সোহেলীকে দিনের পর দিন কাজ করতে হয়েছে। কাজ ও পড়ার ফাঁকে একটু সময় পেলে অমনি আঁকতে বসে যেতো সে। পরম যতেœ মনের আবেগে আঁকা আর্টপেপারের লেখাগুলোর কাছ পৃথিবীর সব উপহারই যেন ম্লান হলো।