জগন্নাথপুর থেকে সংবাদদাতা :
জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীধরপাশা গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ সহ ৭০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় ১২৩ জনকে আসামি করে দুই পক্ষের মামলা পাল্টা মামলা দায়ের হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার ৯ আসামিকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। এর মধ্যে ৬৪ জন আসামি সুনামগঞ্জ আদালতে হাজির হলেও বাকিরা পলাতক রয়েছেন।
শনিবার স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে জানান, কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা গ্রামের হাজী তাহির আলীর অনুদানে ও অর্থায়নে দীর্ঘ প্রায় ৬৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় স্থানীয় শ্রীধরপাশা দারুল উলুম মাদ্রাসা। তিনি মারা যাওয়ার পর গ্রামবাসীর সহায়তায় উক্ত মাদ্রাসাটি পরিচালিত হয়ে আসছে। মাদ্রাসায় গ্রামবাসীর সাথে কিছু জমি দান করেন গ্রামের জাবেদ আলম কোরেশী পরিবার। হঠাৎ করে গ্রামবাসীকে না জানিয়ে মাদ্রাসার সাইন বোর্ডে বিএনপি নেতা জাবেদ আলম কোরেশী তার দাদা উমরা মিয়া কোরেশীর নামে নাম করণ করলে গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া স্থানীয় শ্রীধরপাশা জামে মসজিদেও একইভাবে নাম করণ করলে গ্রামবাসীর উত্তেজনা আরো বেড়ে যায়। সেই সাথে স্থানীয় পঞ্চায়েতি কবর স্থানের জমি দখল ও সরকারি পুকুর সহ বিভিন্ন ব্যক্তির জমি দখল নিয়ে গ্রামে চাপা উত্তেজনা দেখা দিলেও ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেননি। কারণ হিসেবে তারা বলেন, জাবেদের টাকা, পেশিশক্তি ও বৈধ-অবৈধ একাধিক বন্দুক আছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে তার উপর নির্যাতন। এক সময় জাবেদ আলম পরিবার কোরেশী উপাধি ব্যবহার করলেও বর্তমানে করছে দেওয়ান ও বক্স উপাধি। একই ব্যক্তি এক সাথে ৩টি উপাধি ব্যবহার করা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন ও কৌতহলের সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় জাবেদের কিছুই ছিল না। এখন তারা নতুন ধনী হয়ে এলাকায় সন্তাসের রাজত্ব করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
এক পর্যায়ে তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামবাসীর পক্ষে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন গ্রামের আ’লীগ নেতা আবদুল মালিক পরিবার। শুরু হয় তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। এ নিয়ে চলতি বছরের ফেব্র“য়ারি মাসে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ সহ ২০ জন আহত হন। এতে তাদের মধ্যে আক্রোশ আরো বেড়ে যায়।
এরই জের ধরে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে শ্রীধরপাশা মাদ্রাসার জমি নিলাম নিয়ে আবারো মুখোমুখি হয় জাবেদ আলম ও আবদুল মালিক পক্ষ। শুরু হয় আ’লীগ ও বিএনপি রাজনীতির পরিচয়ে নিজেদের ক্ষমতা জাহিরের খেলা। এ সময় জাবেদ আলম কোরেশী ও আবদুল মালিক পক্ষের আ’লীগ নেতা ফয়সল মিয়ার মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জাবেদ আলম কোরেশী পক্ষের লোকজন ফয়সল পক্ষকে ধাওয়া করে বন্দুক দিয়ে গুলি চালায়। শুরু হয় দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ। চলে বন্দুকের এলোপাতারি গুলি বর্ষণ। প্রায় দেড় ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং প্রায় ৫০ রাউন্ড বন্দুকের গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে ৩৭ জন গুলিবিদ্ধ সহ কমপক্ষে ৭০ জন মানুষ আহত হন। এর মধ্যে ফয়সল পক্ষের মানুষ বেশি আহত হয়েছেন বলে আহতরা জানান। এ সময় তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উভয় পক্ষের ৯ জনকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় প্রথমে আ.লীগ নেতা আবদুল মালিক পক্ষের আবুল খয়ের বাদী হয়ে ৪৩ জনকে আসামি করে জগন্নাথপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে জাবেদ আলম কোরেশীর পক্ষে মাহবুব আলম কোরেশী বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ৮০ জনকে আসামি করে আরেকটি পাল্টা মামলা দায়ের করেন। মোট ১২৩ জনকে আসামি করে দুই পক্ষের মামলা ও পাল্টা মামলা দায়েরের ঘটনায় বর্তমানে পুলিশের ভয়ে গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর থানার ওসি হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, পৃথক মামলায় এ পর্যন্ত উভয় পক্ষের ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৪ জন সুনামগঞ্জ আদালতে হাজিরা দিলেও বাকি আসামিরা পলাতক রয়েছে।