চাল উৎপাদকের স্বার্থ রক্ষা চাই

14

ধানের উৎপাদন ভালো হলে চালের উৎপাদনও স্বাভাবিক রীতিতে ভালো হওয়ারই কথা। খাদ্য উৎপাদনের বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমিত পরিমাণে চাল রপ্তানি করা যেতে পারে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান। আরো অনেকে এমন মনে করেন। এতে ধান-চালের বাজারে প্রবহমানতা থাকবে। সরকারি সংরক্ষণাগারে স্থান সংকুলানের জন্য মজুদের চাল বাজারে, হোক তা রপ্তানি বাজার, ছাড়ার আবশ্যকতাও রয়েছে। তবে এ চাল কিভাবে কার মাধ্যমে রপ্তানির জন্য ছাড়া হবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লভ্যাংশ যদি ফড়িয়া, রপ্তানিকারকদের পকেটেই যায় তাহলে চালের আধার ধানের উৎপাদকরা লাভবান হবে কি? ভেবে দেখা দরকার। তাই রপ্তানির প্রক্রিয়াটির দিকে নজর দিতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও কর্তৃপক্ষকে। কৃষক যাতে লাভবান হয় সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ করা ও ধানের মূল্য বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
সরকার ধান কেনে খুবই কম পরিমাণে। তার খাদ্য-মজুদের বেশির ভাগ চাল। আর সে চাল কেনা হয় আড়তদারদের কাছ থেকে, কৃষকের কাছ থেকে নয়। উৎপাদিত ধানের যতটা বিক্রয়যোগ্য তার পুরোটা সরকার কেনে না। বেশির ভাগই কেনে আড়তদাররা। তারাই পরে চাল উৎপাদন করে বাজারে ছাড়ে। চালের আমদানি-রপ্তানির কাজটিও আড়তদারদের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বিপত্তিটা সেখানেই বাধে। কারণ ধান বা চালের ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়ায় সরকারি কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু নজরদারির অভাব রয়েছে। রয়েছে ফড়িয়াগোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর প্রবণতা। ফলে সরকার ধানের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও খোলাবাজারে তা অমান্য করা হয় নানা প্রক্রিয়ায়। এ ব্যত্যয়ী আচরণের তাৎক্ষণিক শিকার হয় ক্ষুদ্র কৃষক, যাদের ফসল তোলা মাত্র বিক্রির আবশ্যকতা থাকে। ধান সংগ্রহ করা বা চাল রপ্তানি করা যা-ই করা হোক, কৃষকের স্বার্থ যেন নিশ্চিত হয়, ক্ষুদ্র কৃষকরা যেন প্রয়োজনের সময় ধান বিক্রিতে অগ্রাধিকার পায়। এসবের নিরিখেই ধানের মূল্য নির্ধারণ, ধান সংগ্রহ ও বাজার পরিবীক্ষণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার।
কৃষককে ন্যায্য মূল্য দেওয়ার নানা উপায়ের একটি সরকারি ভর্তুকি। আরো উপায় আছে। যেমন—ধান-চাল সংগ্রহ ও বিক্রয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিত করা; চাল আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও আমদানি করে চালের দাম কমানো না যায়; সরকারি সংরক্ষণাগার বাড়ানো ও উন্নত করা; ক্ষুদ্র কৃষকের জন্য ব্যাংকঋণ বা কার্ডের মাধ্যমে অগ্রিম টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা, যাতে পরে ধান বেচে সে টাকা শোধ করা যায়। সরকার যদি চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে প্রকৃত উৎপাদকের স্বার্থ রক্ষিত হবে, এটাই আমরা আশা করি। উৎপাদক, সংগ্রাহক ও ভোক্তা—সবার স্বার্থের কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।