দেশে জ্ঞান-মান-ধন, নিরাপত্তা-নিশ্চয়তা এবং পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকার পরও অনেকেই বিদেশে স্বপ্নের ‘সোনার হরিণ’ খোঁজেন। উন্নত ধনী দেশে যেতে বা জায়গা করে নিতে পারেন হাতে গোনা কিছু লোক। অধিকাংশই সফল হন না। বুকভরা আশা ছাড়া আর কিছুই না থাকা এ সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণি কর্মসংস্থান ও উন্নত জীবনের আশায় সব সামর্থ্য বিনিয়োগ করে হলেও পাড়ি জমাতে চায় বিদেশে।
যেখানে কাজের সম্ভাবনার হাতছানি আছে। প্রলোভন আছে পরিবারে সচ্ছলতা আনার। দেশে পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায়, অনেকে কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে যেতে চান। বিভিন্ন দেশে দক্ষ-অদক্ষ জনশক্তির চাহিদাও রয়েছে। বিদেশে তাঁরা সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। কষ্টার্জিত অর্থ পাঠাচ্ছেন, যা শুধু পরিবারের নয়, জাতীয় অর্থনীতিতেও পুষ্টি জোগাচ্ছে। কিন্তু অসাধু চক্রের কালোহাত বিদেশগমনেচ্ছু ব্যক্তিদের জীবনে মারাত্মক প্রবঞ্চনা, ঝুঁকি ও দুর্বিষহ যন্ত্রণার কারণ হচ্ছে। লোভনীয় চাকরির আশ্বাসে এ চক্রের মানব পাচার চলছেই। এদের খপ্পরে পড়ে লাখ লাখ টাকা দিয়ে ইতালি, দুবাই, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রওনা হন নানা বয়সি লোকজন। তাঁদের অনেকেরই ভাগ্যে জুটছে বিভীষিকাময় উল্টো ফল। নিরাপদে পৌঁছানো বা চাকরি পাওয়া তো দূরের কথা, জিম্মি হচ্ছেন চক্রের হাতে। মুক্তিপণের মোটা টাকা গুনতে গিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে পরিবার। টাকা দিতে না পারলে ভোগ করতে হচ্ছে পৈশাচিক নির্যাতন।
যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হচ্ছেন। অনেকেই লাশ হচ্ছেন, সলিলসমাধি ঘটছে সাগর-মহাসাগরে। হারিয়ে যাচ্ছে সোনালি স্বপ্ন দেখা অসংখ্য প্রাণ। এ কোনো নতুন ঘটনাও নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এ অপতৎপরতা এবং তার শিকার লোকজনের দুর্দশা-দুর্ভাগ্যের অবসান হচ্ছে না। এ জন্য দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জনশক্তির বিদেশমুখিতা কমানোর উদ্যোগ চাই। স্বকর্মসংস্থানে প্রণোদনা দিয়ে বিদেশের মোহ কমানো যেতে পারে। বৈধভাবে শ্রমশক্তি রপ্তানির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার সক্রিয়তায় রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তাযুক্ত বিদেশগমন সহজ ও সাশ্রয়ী করতে হবে। যেখানে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানি থাকবে না। জনগণকে বিদেশ গমনে সর্বোচ্চ বৈধতা অর্জন ও সতর্কতা অবলম্বনে সচেতন করা আবশ্যক। সবচেয়ে জরুরি, মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ। তাদের কঠিন শাস্তি দিতে হবে। দুর্ভেদ্য প্রতিরোধে চক্রের দমন এবং তাদের হাত থেকে বিদেশে চাকরিপ্রত্যাশী নাগরিকদের অর্থ-স্বার্থ-জীবন রক্ষা রাষ্ট্রের কর্তব্য।