কাজিরবাজার ডেস্ক :
সৌদি আরবের তেল স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে হামলার পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের দাম। করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকে প্রথমবারের মতো ব্রেন্ট ক্রুডের দাম উঠেছে ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলারের ওপর। আর যুক্তরাষ্ট্রের তেলের দাম উঠেছে গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
এশীয় বাণিজ্যে সোমবার দিনের প্রথমভাগে তেলের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রায় পাঁচ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ দশমিক ৩৮ ডলারে, যা গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এদিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬৭ দশমিক ৬৯ ডলার প্রতি ব্যারেল। এর আগেই ডব্লিউটিআইয়ের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৭ দশমিক ৯৮ ডলার দেখা গিয়েছিল, যা ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর থেকে সর্বোচ্চ।
করোনা মহামারির ধাক্কায় ইতিহাসের অন্যতম বড় সংকট থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে তেলের বাজার। তবে গত মাসে টেক্সাসসহ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ তুষারপাতের জেরে দৈনিক প্রায় ৪০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমে যায় এবং দাম উঠে যায় ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের ওপর।
তেলের দাম বাড়তে থাকায় গত সপ্তাহে আশা করা হচ্ছিল, তেল রপ্তানিকারকদের জোট ওপেকের সদস্য ও এর মিত্র দেশগুলো উৎপাদনের বিধিনিষেধ শিথিল করে তেল সরবরাহ আরও মসৃণ করবে। তবে চাহিদার ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও বেশিরভাগ নিষেধাজ্ঞাই বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দেশগুলো।
এ অবস্থার মধ্যেই সপ্তাহ দুয়েক ধরে বিশ্বের প্রধান তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরবের তেল স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে হামলা বাড়িয়েছে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। এর জেরে সৌদির প্রতিরক্ষা সামর্থ্য নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তেল স্থাপনায় হামলার জবাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বেশ কিছু প্রদেশে বিমান হামলা চালিয়েছে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। তবে রবিবারও সৌদির প্রধান তেল কোম্পানি আরামকোর একটি স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনি হুথিরা।
সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ (সৌদি প্রেস এজেন্সি) দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে, সমুদ্রের ওপর থেকে আসা একটি ড্রোন আরামকো পরিচালিত রাস তানুরা বন্দরের একটি স্থাপনায় হামলা চালায়।
দেশটির দাবি, এতে তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে আরামকো কর্তৃপক্ষ হামলার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
সৌদি জ্বালানি মন্ত্রণালয় এই হামলাকে ‘নাশকতামূলক কাজ’ উল্লেখ করে বলেছে, এতে শুধু সৌদি আরবকেই নয়, গোটা বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে।
এর আগে, ২০১৯ সালে সৌদির প্রধান তেল স্থাপনাগুলোতে হামলার পরদিনই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। অবশ্য ওই হামলার জেরে সৌদির দৈনিক তেল রফতানি প্রায় অর্ধেক কমে গিয়েছিল, বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিশ্বের প্রায় পাঁচ শতাংশ অপরিশোধিত তেল উৎপাদন। এবারের ধারাবাহিক হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত তেমনটা হয়নি।