কাজিরবাজার ডেস্ক :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয়ের হিসাব দাখিল না করায় বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৩৭ দলকে সতর্ক করেছে ইসি। একই সঙ্গে ৯ জুনের মধ্যে হিসাব দাখিল করতে দলগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সময় মতো হিসাব দাখিল করা না হলে আইন অনুযায়ী দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী বর্ধিত সময়ের মধ্যে হিসাব দাখিল না করা হলে দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলের ক্ষমতা ইসির রয়েছে।
গত বছর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ইসির সবগুলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ১ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। আইন অনুযায়ী নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে দলগুলোর ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দিতে হয়। গত ২ এপ্রিল এই সময়সীমা পার হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ইসিতে তাদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল করেছে। সময়সীমা পার হলেও বাকিরা এখনও ইসিতে ব্যয়ের হিসাব দাখিল করেনি। ফলে ইসি থেকে চিঠি দিয়ে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ দলগুলোকে আগামী ৯ জুনের মধ্যে হিসাব জমা দিতে বলা হয়েছে। ইসির উপ-সচিব মোঃ আবদুল হালিম খান স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি সোমবার দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে আবদুল হালিম খান বলেন, দলগুলোর সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বরাবর সতর্কতামূলক চিঠি দেয়া হয়েছে। সময় মতো হিসাব জমা না দিলে আইন অনুযায়ী দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে কোন দল হিসাব দিতে ব্যর্থ হলে কমিশন চাইলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে আরও ১৫ দিন সময় দিতে পারে। এই ১৫ দিনের মধ্যেও হিসাব জমা না দিলে কমিশন সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিল করার এখতিয়ার রাখে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, কোন রাজনৈতিক দল ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে সতর্ক করে ৩০ দিন সময় দেবে। এর মধ্যে কোন দল হিসাব দিতে ব্যর্থ হলে কমিশন চাইলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে আরও ১৫ দিন সময় দিতে পারে। এই ১৫ দিনের মধ্যেও হিসাব জমা না দিলে কমিশন চাইলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে। আরপিও অনুযায়ী, যে দল থেকে সর্বোচ্চ ৫০ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, সে দল সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে। সর্বোচ্চ ১০০ প্রার্থীর জন্য দেড় কোটি টাকা ব্যয় করা যায়। সর্বোচ্চ ২০০ প্রার্থীর জন্য ৩ কোটি টাকা এবং ২শ’ বেশি প্রার্থী দিলে সংশ্লিষ্ট দল সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২৫৮ জন, বিএনপির ২৪২ জন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২৯৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আর জাতীয় পার্টি থেকে ১৭৪ আসনে প্রার্থী দেয়া হয়েছিল। আরপিও অনুযায়ী, ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়। ইতোমধ্যে সে সময়ও পার হয়ে গেছে। যারা হিসাব দেননি, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে কমিশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪১টি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশ কংগ্রেস নামে একটি দল ডাব প্রতীকে এবং জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) সিংহ প্রতীকে নিবন্ধন পায়। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় ৩৯ রাজনৈতিক দল। তবে বেশিরভাগ দলই এবার জোটগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন জোট অধিকাংশ আসনের জয়লাভ করে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় গণফোরাম, সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে। তবে জোটের বৃহত দল বিএনপি প্রতীকেই এই জোটের প্রার্থীরা অংশ নেয়। নির্বাচনে ফলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চরম ভরাডুবি ঘটে। বিএনপি থেকে ৬ জন এবং জোটের গণফোরাম থেকে ২ জন প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করেন। নির্বচনের কারচুপির অভিযোগ এনে জোটটি শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত বিজিত সদস্য দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে বিএনপির সংসদে যাওয়ার নিদ্ধান্ত নেয়।