বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি কিংবা একটু উন্নত জীবনের আশায় মানুষ দেশান্তরি হয়। বৈধ পথে সুযোগ না পেলে অবৈধ পথে পা বাড়ায়। আর অসহায় মানুষের সেই আকাক্সক্ষার সুযোগ নেয় প্রতারক ও দুর্বৃত্ত শ্রেণির কিছু মানুষ। জানা যায়, অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৩৭ জনই বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। তিউনিসিয়ার জেলে ও কোস্ট গার্ডরা ১৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যেও ১৪ জন বাংলাদেশি। এ থেকে ধারণা করা যায়, আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারীদের বেশ ভালো নেটওয়ার্ক রয়েছে বাংলাদেশে। এর আগেও একই ধরনের বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমনকি মরুভূমিতে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করার কিংবা অনাহারে অনেকের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। হতভাগ্য এই বাংলাদেশিদের রক্ষায় কি কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হবে না?
কয়েক বছর আগে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানোর হিড়িক শুরু হয়েছিল। সে সময় থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের বেশ কিছু গণকবরও আবিষ্কৃত হয়েছিল। তদুপরি মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করায় এই পথে পাড়ি জমানোর আগ্রহে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে এখনো তা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এখন ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমানোর অপচেষ্টা অনেক বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দাতব্য সংস্থার তথ্য থেকে জানা যায়, থাইল্যান্ড থেকে শুরু করে আফ্রিকা পর্যন্ত অনেকগুলো মানবপাচারকারী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। দেশে দেশে তারা নেটওয়ার্ক বিস্তার করে মানবপাচারের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে। শুধু পাচার নয়, নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ও এদের অবৈধ উপার্জনের একটি বড় কৌশল। মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির মতো অমানবিক অভিযোগও রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। তার ওপর নৌকায় করে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তার পরও মানুষ কেন ওদের খপ্পরে পড়ে? তার কারণ, এদের নিয়োজিত এজেন্ট বা দালালরা দিনের পর দিন মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে মানুষকে বোকা বানায়।
কোনো নৌকা যাতে ইতালির উপকূলে ভিড়তে না পারে সে জন্য কোস্ট গার্ড নিয়োজিত করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন কেউ ইউরোপে প্রবেশ করলেও তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এসব বিষয়ে তরুণদের সচেতন করতে হবে, যাতে তারা পাচারকারীদের খপ্পরে না পড়ে। ভূমধ্যসাগরের দুর্ঘটনা থেকে যাঁরা বেঁচে গেছেন, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে এনে সেসব দালালকে চিহ্নিত করতে হবে, যারা মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে তাঁদের নিয়ে গিয়েছিল। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অপরাধীচক্রকে এখনই নির্মূল করা না গেলে ভবিষ্যতে এরা বাংলাদেশে তাদের নেটওয়ার্ক আরো বিস্তৃত করবে এবং তখন তাদের দমন করা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়বে। আমরা আশা করি, এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।