দেশজুড়ে দ্বিতীয় দফা তাপপ্রবাহ চলছে। প্রথম দফা শুরু হয়েছিল এপ্রিলের শেষ দিকে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ায় তাপমাত্রার পারদ কিছুটা নেমেছিল। দু-এক দিন যেতে না যেতেই আবার তা চড়েছে, শুরু হয়েছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। গতকাল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা, ঈশ্বরদীসহ পশ্চিমাঞ্চলের অনেক স্থানেই তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি বা তার ওপর। বর্তমান তাপপ্রবাহটি মূলত বয়ে যাচ্ছে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে। ঢাকা মহানগরীতে গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৩৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, সোমবার থেকে কয়েক দিন বৃষ্টি হতে পারে। তখন তাপমাত্রা কিছুটা কমবে। একই সঙ্গে তারা হুঁশিয়ার করেছে, এ মাসেই আরেকটি তাপপ্রবাহ হতে পারে এবং সেটি হতে পারে তীব্র ধরনের। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকেই তীব্র তাপপ্রবাহ বলে। বর্তমান তাপপ্রবাহেই জনজীবনে, বিশেষ করে দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহে তাদের অবস্থা কী হবে?
প্রতিবছর হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়া বা গরমজনিত কারণে কত মানুষ মারা যায়, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। গ্রামাঞ্চলে এসব কারণে কেউ মারা গেলে স্বাভাবিক নিয়মে তাকে দাফন করা হয়। হাসপাতাল বা পরিসংখ্যানকারীরা তার খবরও পায় না। রিকশাচালক, মুটে, কৃষি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক এমনি অনেক পেশায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের তীব্র রোদ মাথায় নিয়েই কাজ করতে হয়। তাঁদের প্রায় সবার দিন আনে দিন খায় অবস্থা। কাজে না গিয়ে উপায় নেই। তাঁরাই তাপপ্রবাহের প্রধান শিকার। পথচারীরাও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। প্রচণ্ড তেষ্টা পেলেও রাস্তায় কোথাও পানি পাওয়ার সুযোগ নেই। বাধ্য হন আশপাশে থাকা শরবত কিনে খেতে কিংবা কোনো হোটেল বা দোকান থেকে দু-এক টাকায় এক গ্লাস পানি কিনে খেতে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব পানি বিশুদ্ধ হয় না। ওয়াসার অবিশুদ্ধ পানিই এসব দোকানে রাখা হয়। তখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে হয়। আবার দীর্ঘক্ষণ পানি না পান করেও অনেকে একিউট ডিহাইড্রেশনের শিকার হন। দরিদ্র শ্রমিকের পক্ষে দোকান থেকে মিনারেল ওয়াটার কিনে খাওয়াও সম্ভব নয়। আমাদের সিটি করপোরেশনগুলো রাস্তার পাশে কিছু সুপেয় পানির উৎস রাখার কথা সম্ভবত বিবেচনাও করে না। অথচ একসময় এই শহরেই এমন ব্যবস্থা ছিল। ছিল অন্যান্য বড় শহরেও।
তাপপ্রবাহ আমরা আটকাতে পারব না। কিন্তু তাপপ্রবাহের কবল থেকে জনজীবনকে রক্ষা করা কিংবা কিছুটা হলেও স্বস্তি দেওয়ার মতো ব্যবস্থা কি করা যায় না? আমরা আশা করি, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দ্রুত দৃশ্যমান উদ্যোগ নেবে।