এনজিও সংগঠন নিয়ন্ত্রণে আইন

38

বিদেশি অনুদানে পরিচালিত অনেক এনজিওর নামে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বিদেশি অনুদানে পরিচালিত দুই শতাধিক এনজিও নিবন্ধন নবায়নের আবেদন করেনি। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েও এক থেকে তিন দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছে এসব সংস্থা। নিবন্ধন নবায়ন না করা অনেক সংস্থারই জঙ্গি তৎপরতাসহ গোপনে যেকোনো সমাজ-রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে ২০৯টি এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে বৈদেশিক অনুদান নিয়ে কাজ করে—এমন দেশি-বিদেশি দুই হাজার ৬০৮টি এনজিও রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি এনজিও ২৫৮টি। বৈদেশিক অনুদান রেগুলেশন আইন ২০১৬ অনুসারে এনজিওগুলোকে ১০ বছরের জন্য নিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। এসব সনদ ১০ বছর পর পর নবায়ন করতে হয়। বিদেশি অনুদানপ্রাপ্ত বিভিন্ন এনজিওর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। আবার সঞ্চয়ের নামে সমিতি গড়ে তুলে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের টাকা তুলে নিয়ে রাতারাতি উধাও হয়ে যাওয়ার অনেক ঘটনাও ঘটেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে অনেকে এনজিওতে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে। দেখা যায়, এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওগুলোর কোনো নিবন্ধন নেই।
এসব কারণেই নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। ‘স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৯’ নামের প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে এনজিওগুলোকে নতুন করে নিবন্ধন নিতে হবে। কারণ একবার নিবন্ধন পেলেই অনন্তকালের জন্য পার পাওয়ার সুযোগ থাকছে না। প্রতি পাঁচ বছর পর পর সরকারের নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিবন্ধন নবায়ন করার বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে। এ ক্ষেত্রে সরকার সন্তুষ্ট না হলে নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে। ‘স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৬১’-এর পরিবর্তে করা নতুন আইনের খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশে বিদেশি অনুদাননির্ভর এনজিওর সংখ্যা আড়াই হাজারের মতো। এ ছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তর, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অধীনে দেশি এনজিও আছে লক্ষাধিক।
সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, নতুন করে নিবন্ধন নিতে গেলে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট অনেক এনজিওকে ঝামেলা পোহাতে হবে। এনজিওসংশ্লিষ্ট কারো কারো এমন ধারণা হতে পারে, সরকার এনজিওগুলোর, বিশেষ করে বিদেশি অনুদাননির্ভর সংস্থাগুলোর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ নিতে এমন বিধান রাখছে। পরোক্ষভাবে বেসরকারি সংগঠনগুলোকে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করতে পারে অংশীজনরা। কেউ কেউ মনে করতে পারে, নতুন আইনটি হবে সংবিধানে দেওয়া সংগঠন করার অধিকারের পরিপন্থী। আর সে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলেই আইনটি চূড়ান্ত করা হলে স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। বরং অংশীজনদের মতামত নিয়ে আইনটি করলে ভালো হবে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারে।