কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাহে রমজানুল মুবারকের চতুর্থ দিনে সম্মানিত পাঠকদের শুভেচ্ছা। আজ মাহে রমজানের অত্যন্ত আলোচিত ও প্রিয় ইবাদত তারাবি নামাজ সম্পর্কে দু’চার কথা। কোরান নাজিলের পুণ্য স্মৃতি বিজড়িত মাহে রমজানে তিরিশ দিনব্যাপী তারাবি নামাজ পড়া যেমন সুন্নত, তেমনি এ মাসব্যাপী তারাবিতে কোরান খতম করাও সুন্নত। অবসরে যারা কোরান তিলাওয়াত করতে পারে না বা কোরান পড়তে জানে না তাদের জন্য তারাবিতে খতম শোনা, সর্বোপরি পবিত্র নামাজে সকলে সুললিত কণ্ঠে গোটা কোরান শোনা অত্যন্ত জরুরী ও সুখকর বিষয়। পূর্ববর্তী মুসলিম মনীষী ও কোরান বিশেষজ্ঞগণ সমস্ত কোরানকে পাঁচ শত চল্লিশ রুকু নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। কোরানের কপিতে দেয়া এ চিহ্ন মোতাবেক ২৭ তম রাতে অনায়াসে কোরান খতম সম্ভব। – (ফ. আলমগীরী, আরকানে আরবাআ)। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই মর্মে বিশিষ্ট ইমাম সাহেবানের প্রতি আহ্বান জানায় যে, তারা যেন তারাবি নামাজে খতমে কোরান শব-ই-কদরের রাত পর্যন্ত কন্টিনিউ করার ব্যবস্থা নেন। এতে প্রতি রজনীতে কি পরিমাণ পড়লে সুবিধা এবং ফলপ্রসূ তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
আমাদের দেশে কিছু কিছু মসজিদ আছে যেখানে এর চেয়ে কম সময়ে এক রকম তাড়াহুড়ার মাধ্যমে খতম তারাবি শেষ করা হয়। এতে যেমন কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায় না ; তেমনি গুনাহ হওয়ারও সমূহ সম্ভাবনা থাকে। হাদীসে এসেছে: রুব্বা ক্বা-রিন ইয়াকরায়ূল কোরানা ওয়াল কোরানু ইয়াল আনুহু – এমন কতিপয় ক্বারী আছে, যারা কোরান তিলাওয়াত করে অথচ কোরান তাদের লা’নত দেয়। ’সূরা মুজ্জাম্মিলে বর্ণিত হয়েছে: তোমরা কোরান আবৃত্তি কর সুবিন্যস্ত ও স্পষ্টভাবে। ’
একইভাবে কতিপয় মুসল্লি হাফেজ সাহেবের দীর্ঘ তিলাওয়াতের সময় অহেতুক গল্প গুজব ও আরাম বিশ্রামে মত্ত থাকে। যা ধৃষ্টতার শামিল। এ আচরণ ও মোটেই শোভনীয় ও গ্রহণীয় নয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন: আর যখন কোরান পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক….। ’ – (৭: ২০৪)।
মাহে রমজানের চাঁদ দেখা রজনী থেকে শুরু করে শাওয়ালের ঈদ-উল-ফিতরের বাঁকা চাঁদ দেখার আগের রাত পর্যন্ত এশার নামাজের ফরজ ও সুন্নাত নামাজের পর তারাবির নামাজ বা তারাবির জামাত আদায় করতে হয়। এ নামাজ বিশ রাকাত। প্রতি নিয়তে দু’রাকাত করে আদায় করার নিয়ম। প্রতি চার রাকাআত পর সামান্য বিশ্রাম করা উত্তম এবং এ বিশ্রামের নামই হলো তারাবি। আমাদের দেশে এ বিশ্রামটুকু নেয়া হয় না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দ্রুত রুকু ও সিজদাহ তিলাওয়াত সম্পন্ন করে বিশ রাকাআত নামাজ শেষ করা হয়। যা মোটেই সমীচীন নয়। চার রাকাআত পর পর একটি সুন্দর মুনাজাতও করা হয়। যা একজন মানুষকে প্রচন্ড খোদাপ্রেম ও আধ্যাত্মিকতায় উদ্ভাসিত করে তোলে। যেমন বলা হয়, আলাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা, ওয়া নাউযুবিকা মিনান নার…।
অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে জান্নাতের ভিখারি আর জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ প্রত্যাশী……..।
বাকি এগারো মাস এশার নামাজের পর বিতরের নামাজ একাকী পড়লেও মাহে রমজানে তারাবির নামাজের পর বিতরেরও জামাত করতে হয়। এ পবিত্র নামাজের আনুষ্ঠানিকতা একজন রোজাদারের দেহ মন থেকে সমুদয় খামখেয়ালিপনা ও অলসতা বিদূরিত করতে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে বলে মাওলানা আশরাফ আলী (রহ.) তার যুক্তির নিরিখে শরীয়তের বিধান বইয়ে উল্লেখ করেছেন। ফাতওয়ায়ে আলমগীরীতে বলা হয়েছে, যদি খতম তারাবিতে ক্বিরাত দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে জামাতে লোকসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা থাকে সে পরিস্থিতিতে সূরা তারাবির ব্যবস্থা করে হলেও প্রচুর মুসল্লি সমাগমকে ধরে রাখা উচিত।
তারাবির নামাজ সবসময় এশার নামাজের পরপর পড়তে হয়। এশার নামাজের আগে তারাবির নামাজ আদায় করা শুদ্ধ হয় না। কখনো কোন মুসল্লি দেরিতে মসজিদে আসার কারণে এশার জামাত হারিয়ে ফেললে তিনি তারাবির জামাতে শামিল হওয়ার আগে ইশার নামাজ আদায় করে নেবেন। আর কোন ব্যক্তি ব্যস্ততার কারণে ঘোষিত সময়ে এশা ও তারাবির জামাত ধরতে ব্যর্থ হলে রাতের যে কোন অংশে তিনি এ মহা মূল্যবান বরকতপূর্ণ নামাজ আদায় করে নিতে পারেন।
আল্লাহ পাক আমাদের মাহে রমজানের রজনীতে আত্ম গঠনের মহান অনুশীলন পবিত্র সালাতুত তারাবি বা’জামাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।