কাজিরবাজার ডেস্ক :
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ জামাতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী মরহুম ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার আজ দশম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৯ সালের এই দিনে উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত রোগে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি তাঁর মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা দিয়ে জনগণের কল্যাণে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।
১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জের ফতেপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন এই বিজ্ঞানী। মরহুম আবদুল কাদের মিয়া ও মরহুমা ময়জুন নেছা বিবির সন্তান ওয়াজেদ মিয়াকে সবাই ‘সুধা মিয়া’ নামেই চিনতেন। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু।
১৯৫৬ সালে জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে তৃতীয় স্থান এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষা বছরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ‘ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স’ সম্পন্ন শেষে ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন মেধাবী ছাত্র ওয়াজেদ মিয়া।
পুরো উপমহাদেশে প্রথম শ্রেণীর এই বিজ্ঞানী ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে যোগ দিয়ে চাকরি জীবন শুরু করেন। পরে আনবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে ইতালির খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তাঁকে ‘এসোসিয়েটশিপ’ প্রদান করে। ১৯৬৯ সালের নবেম্বর থেকে ১৯৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরে ড্যারেসবেরি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণা করেন। ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে শুরু করে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লীস্থ ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন ড. ওয়াজেদ মিয়া।
বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া রাজনীতিতেও ছিলেন সক্রিয়। ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে ছাত্রলীগে যোগ দেন তিনি। ১৯৬১-১৯৬২ শিক্ষা বছরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৬২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাত ঘটে এবং ওই বছরেই জেনারেল আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গ্রেফতারও হন। আজন্ম সৎ ও নিভৃতচারী এই বিজ্ঞানী ১৯৬৭ সালের ১৭ নবেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যকান্ডের সময় ড. ওয়াজেদ মিয়া জার্মানিতে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
ব্যক্তি জীবনে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে অভ্যস্থ এই বিজ্ঞানীর দু’সন্তান। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই রাত ৮টায় প্রথম সন্তান কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম। একমাত্র কন্যা মনোবিজ্ঞানী সায়মা হোসেন পুতুল বর্তমানে কানাডা প্রবাসী। বঙ্গবন্ধুর জামাতা এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বামী হওয়া সত্ত্বেও ড. ওয়াজেদ মিয়াকে কখনও ক্ষমতার কাছাকাছি দেখা যায়নি। নির্লোভ, নিরঙ্কার, সৎ এই খ্যাতনামা বিজ্ঞানীর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।
ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া তাঁর কর্মের জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বেঁচে থাকবেন। কর্মসূচীতে রয়েছে- রংপুরের পীরগঞ্জের ফতেহপুরে ওয়াজেদ মিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন, ঢাকায় ও ফতেহপুরে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, মরহুমের বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর আলোচনা ও স্মৃতিচারণ। ড. এম ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।