কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের (বেডু) অধীনে খাতা মূল্যায়নে কঠোর ও কার্যকর পদ্ধতি চালু হয়েছিল ’১৬ সালে। চালুর পর টানা দু’বছর পাসের হার বৃদ্ধিতে ছেদ পড়লেও এবার ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। গত বছর ছিল ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তবে এবার সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ১০ হাজার ৬২৯ থেকে কমে হয়েছে এক লাখ ৫ হাজার ৫৮৪। এক বছরেই ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত পাসের হার বৃদ্ধিতে কিছুটা আলোচনার জন্ম দিয়েছে মাদ্রাসা ও যশোর বোর্ড।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ছাড়া এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষায় ৯ শিক্ষা বোর্ডে এবার গড় পাসের হার বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে ঢাকা বোর্ডে এবার পাসের এক দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে। তবে জিপিএ-৫ এ শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ঢাকা বোর্ড। আর পাসের হার সর্বোচ্চ রাজশাহী বোর্ডে ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সবচেয়ে কম পাসের হার সিলেট বোর্ডে ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আটি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার এক বছরে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীদের পাসের হার দুই দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এসএমএস পাঠিয়ে অথবা শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট থেকে ফল জানতে পারছে। পাশাপাশি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকেও ফল জানতে পারছে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। তবে ফলের দায়িত্বে থাকলেও শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান এমনকি সব বোর্ড সমন্বয়কারী ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানও ছিলেন না মঞ্চে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছেই অবশ্য অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন সাংবাদিক ও কর্মকর্তাদের অনেকেই। বিষয়টি মন্ত্রীকে অবগত করবেন বলে জানিয়েছেন কয়েক কর্মকর্তা।
বিগত দিনে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করতেন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে ফলের বিস্তারিত তুলে ধরতেন শিক্ষামন্ত্রী। এবার প্রধানমন্ত্রী লন্ডন সফরে থাকায় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা। পরে শিক্ষামন্ত্রী ফল প্রকাশ করেন।
লন্ডন থেকে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো একটি লিখিত বক্তব্য সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করেন শিক্ষামন্ত্রী। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী কৃতকার্য সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, যারা কৃতকার্য হতে পারেনি আবার প্রস্তুত হয়ে পরীক্ষা দিলে তারাও ভাল করতে পারবে। মনে রাখবে তোমরাই আগামীর বাংলাদেশের কর্ণধার। তোমাদেরই এদেশের জনগণ এবং বিশ্ববাসীর সেবায় নিয়োজিত হতে হবে। এজন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আয়ত্তের পাশাপাশি দেশপ্রেমিক এবং মানবিকতায় পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে।’ সময়মতো ফল ঘোষণা করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, দশ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষায় অংশ নেয় ২১ লাখ ২৭ হাজার ৮১৫ পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫, গত বছর পাস করেছিল ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪। এবার গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসিতে অংশ নেয় ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫২ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ১৪ লাখ তিন হাজার ১৫৭। আট বোর্ডে গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। আট বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৪ হাজার ৫৫৬, গত বছর যা ছিল এক লাখ দুই হাজার ৮৪৫।
মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় তিন লাখ ছয় হাজার ৭৮০ ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৭১০। গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৩ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। মাদ্রাসায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ২৮৭, গত বছর যা ছিল তিন হাজার ৩৭১।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় এবার অংশ নেয় এক লাখ ২৬ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ৯১ হাজার ২৯৮। গড় পাসের হার ৭২ দশমিক ২৪ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। কারিগরিতে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৭৫১, গত বছর যা ছিল চার হাজার ৪১৩।
সাফল্যের পেছনে : শিক্ষার্থীদের আকাশচুম্বী সাফল্য এবারও চমকে দিয়েছে সবাইকে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরের পাবলিক পরীক্ষার এই সাফল্যের পেছনের কারণ কী? শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, কঠোর মনিটরিংয়ে শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত শিক্ষা নিশ্চিত করা, ইংরেজী ও গণিতসহ বিজ্ঞান বিষয়ে ভাল ফল, বিনামূল্যে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দেয়া, টেলিভিশনে দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের পাঠদান প্রচার, শিক্ষার উপকরণ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং ব্যাপক বিরোধী প্রচার আজকের ভাল ফলের পেছানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলছিলেন, ফলের মান বৃদ্ধির সূচকে বেশকিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। এর পেছনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু উদ্যোগ ভূমিকা রেখেছে। তবে খাতা মূল্যায়নে এবার কিছুটা উদারতা দেখানো হয়েছিল বলে তথ্য মিলছে বিভিন্ন মাধ্যমে। বেডুর প্রভাবে কঠোর খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণেই গত দুই বছর তার আগের বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকেও এমনটাই বলা হয়েছিল। তাহলে এবার কেবল ঢাকা বোর্ডে পাসের হার কমলেও অন্য সব বোর্ডে পাসের হারের ব্যাপক বৃদ্ধির রহস্য কি তা নিয়ে প্রশ্ন এসেছে সংবাদ সম্মেলনেও। মাদ্রাসা ও যশোর বোর্ডে এক বছরের ব্যবধানেই ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত পাসের হার বৃদ্ধি অস্বাভাবিক কিনা তা নিয়ে মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল সংবাদ সম্মেলনে।
বোর্ডগুলোর খাতা মূল্যালয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন যারা সেই শিক্ষকরা বলছেন, খাতা নেয়ার সময়েই বলে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের স্বার্থের দিকে নজর রাখবেন। এক কথা মানতে গিয়ে নম্বর বেশি দেয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। কারণ নম্বর খুব কম দিলে বেশি ফেল করে বসলে প্রধান পরীক্ষক বা অন্যরা ডেকে বসেন পরীক্ষকদের। এসব ঝামেলা এড়াতে বেশি নম্বর দেন শিক্ষকরা। এবার এই প্রবণতাটা বেশি ছিল কোন কোন বোর্ডে।
মাদ্রাসা বোর্ডে পাস ও জিপিএ ফাইভ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কেবল তাই নয় এখানে গণিতে প্রায় ৯০ শতাংশ এবং আইসিটি বিষয়ে পাসের হার প্রায় ৯৯ শতাংশ। এক বছরে এখানে পাসের হার প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮৩ শতাংশেরও বেশি। পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। জিপিএ ফাইভও বেড়েছে। চলতি বছর পেয়েছে ছয় হাজার ২৮৭ জন।
যা গত বছর ছিল তিন হাজার ৩৭১ জন। হঠাৎ এত ভাল ফলের কোন সুনির্দিষ্ট রহস্য খুঁজে পাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।
যদিও বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম সাইফ উল্ল্যাহ হঠাৎ প্রায় ১৩ শতাংশ পাসের হার বৃদ্ধিতে কোন অভিযোগ আমলে নিতে নারাজ। তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা গণিতে ভাল করেছে তাই তাদের ফল ভাল হয়েছে। ৭৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ থেকে এক বছরেই পাসের হার প্রায় ৯১ শতাংশ হয়েছে যশোর বোর্ডে। এ বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল আলীম দাবি করছেন, তাদের বোর্ডের এ সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে তাদের মনিটরিং। জেএসসি পাসে করার পর থেকেই আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করেছি। কঠোর মনিটরিং ও পরীক্ষার মূল্যায়নের কারণেই এ সাফল্য। তার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সিলেট বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ আবদুল কুদ্দুস। তিনি বলছিলেন, আসলে যশোর বোর্ডের প্রশ্ন সহজ ছিল তাই ভাল ফল।
এমন প্রেক্ষাপটে সংবাদ সম্মেলনে তাই না প্রশ্নের জবাব দিতে হলো শিক্ষা মন্ত্রীকেও। এক বছরের ব্যবধানে মাদ্রাসা ও যশোর শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার এত বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন। ঢাকা বোর্ড ছাড়া সকলের পাসের হার বৃদ্ধি নিয়েও আসে প্রশ্ন। ১৩ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত এক বছরে পাসের হার বৃদ্ধি অস্বাভাবিক কিনা? কোন গ্রেজ নম্বর দেয়া হয়েছিল কিনা? কিংবা পাসের হার বৃদ্ধি নতুন মন্ত্রীর উপহার কিনা? জবাবে মন্ত্রী বলেন, বোর্ডের ফলের ভিন্নতা অস্বাভাবিক নয়। এটি মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। যেখানে বেশি বেড়েছে সেখানে কোন ধরনের শিথিলতা ছিল না। পাসের হার বেড়েছে এটি আমাদের উপহার- এটা মনে করবার কারণ নেই। কারণ পরীক্ষা তো আমরা দেইনি। পরীক্ষার্থীরাই পরীক্ষা দিয়ে ভাল ফল করেছে। আমরা চাই সব শিক্ষার্থী পাস করবে, কিন্তু কোন না কোন কারণে অনেক শিক্ষার্থী পাস করে না। পাসের হারের কৃতিত্ব শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং শিক্ষকদের কৃতিত্ব।
ঢাকা বোর্ডে ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমার কারণ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা বোর্ডে গণিতে পাসের হার গত বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমেছে। মানবিকে গত বছরের তুলনায় কমেছে ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। যেহেতু মোট পরীক্ষার্থীর ৪০ শতাংশ মানবিকের পরীক্ষার্থী, তার প্রভাব পুরো পাসের হারের উপরে কিছুটা পড়েছে। সিলেটে পাসের হার সবচেয়ে কম হওয়ার কারণ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেখানেও গণিতে পাসের হার কম।
কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার বেশি হওয়ার কারণ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, কোথাও যখন এগিয়ে যাচ্ছে সেটা আমাদের শেখার আছে। ধারাবাহিকভাবে একটি বোর্ড ভাল করলে নিশ্চয়ই ভাল কিছু করছে। এই পরিসংখ্যান থেকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব।
আইসিটি শিক্ষায় পাসের হার কম নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আইসিটির শিক্ষক এখনও অপ্রতুল। আমরা শিক্ষক বাড়ানো ও প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা করছি। কারিকুলার রিভিউ করার ক্ষেত্রে আইসিটি শিক্ষাকেও আরও দক্ষ করে তুলতে পারি- সে বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগ দিচ্ছি। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোন শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি, কেন পারল না, সেখানে ব্যর্থতা কোথায় আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কী দায় আছে- এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে আমরা অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেব। অতীতে শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অতীতে তাদের কারণদর্শাতে বলা হয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, শাস্তি দেয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্য তাদের যে ব্যর্থতা আছে সেগুলো কাটিয়ে উঠে যেন সাফল্যের ধারায় আমরা নিয়ে আসতে পারি। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা সাফল্যের দিকে যাচ্ছে, আর যারা শোধরাতে পারছে না কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের এমপিও বাতিল করা হয়েছে। এবার কিছু কেন্দ্রে ভিন্ন প্রশ্ন দেয়ায় ফলে প্রভাব পড়েছে কিনা? মন্ত্রী বলেন, কোন শিক্ষার্থীর যেন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে আমরা সে জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই।
বোর্ডভিত্তিক ফল : ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল পাঁচ লাখ ৪৮ হাজার ২২০ পরীক্ষার্থী। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ৬৮৭, গত বছর যা পেয়েছিল ৪১ হাজার ৫৮৫।
রাজশাহীতে অংশ নিয়েছিল দুই লাখ তিন হাজার ৮৮১ ছাত্রছাত্রী। পাসের হার ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮৬ দশমিক ০৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২ হাজার ৭৯৫, গত বছর যা পেয়েছিল ১৯ হাজার ৪৯৮।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৯৩ হাজার ২৯৭ ছাত্রছাত্রী। পাসের হার ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮০ দশমিক ৪০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে আট হাজার ৭৬৪, গত বছর যা পেয়েছিল ছয় হাজার ৮৬৫।
যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৮২ হাজার ৩১০ ছাত্রছাত্রী। পাসের হার ৯০ দশমিক ৮৮ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৯৪৮, গত বছর তা পেয়েছিল ৯ হাজার ৩৯৫।
চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৪৯ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থী। পাসের হার ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ, গত বছর তা ছিল ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে সাত হাজার ৩৯৩, গত বছর যা পেয়েছিল আট হাজার ৯৪।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অংশ নিয়েছিল এক লাখ ছয় হাজার ৬২১ শিক্ষার্থী। পাসের হার ৭৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭৭ দশমিক ১১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ১৮৯ জন, গত বছর তা পেয়েছিল তিন হাজার ৪৬২ শিক্ষার্থী।
সিলেট শিক্ষা বোর্ড থেকে অংশ নিয়েছিল এক লাখ ১৩ হাজার ১৭১ ছাত্রছাত্রী। পাসের হার ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৭৫৭ শিক্ষার্থী, গত বছর তা পেয়েছিল তিন হাজার ১৯১ জন।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৯৭ হাজার ৫৪৬ ছাত্রছাত্রী। পাসের হার ৮৪ দশমিক ১০ জন, গত বছর যা ছিল ৭৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ২৩ শিক্ষার্থী, গত বছর তা পেয়েছিল দশ হাজার ৭৫৫ জন।
বিদেশ কেন্দ্রের ফল : বিদেশের আটটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৪২৩ ছাত্রছাত্রী। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৮৯ জন। পাসের হার ৯১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৬ জন।
ফল পুনঃনিরীক্ষণ আজ থেকেই : রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে আজ ৭ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে RSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) দেয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে RSC লিখে স্পেস দিয়ে YES লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যে সব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে যে সব বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে দুটি পত্রের জন্য মোট ২৫০ টাকা ফি কাটা হবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে।