স্পোর্টস ডেস্ক :
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আজ বেশ শীত পড়েছিল। তবে শিশির ছিল না। শিশিরহীন এই ভিনদেশি শীতে এনামুল, মমিনুলরা যা করলেন, তা মনে হয় কোনো বাংলাদেশির কল্পনাতেও ছিল না। যাচ্ছেতাই ফিল্ডিংয়ের পর আশা ছিল সম্মানজনক একটা হারের। তা হল বটে, তবে সেই ফিল্ডিংয়ের মতোই।
ভুল হয়, হতেই পারে। তাই বলে এমন কাণ্ড! এ যেন গলি ক্রিকেট! মাশরাফির প্রথম ওভারে এনামুল থিরিমান্নের যে ক্যাচটা ফেললেন, তার ব্যাখ্যা কী হতে পারে তা মনে হয় এনামুলও জানেন না। ২২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে থিরিমান্নের যে স্ট্যাম্পিং মিস করেন মুশফিক, তার ব্যাখ্যা যদি হাথুরেসিংহে দিতে পারেন, তবে আপসোসটা একটু কমবে। ৪২তম ওভারে রুবেলের বলে ওঠা সাঙ্গাকারার উপহার দেয়া যে ক্যাচ ছেড়েছেন পয়েন্টে দাঁড়ানো মমিনুল, তা যদি জন্টি রোডস দেখে থাকেন তবে তিনি শিউরে উঠেছেন। হয়তো বলেছেন -এমনো ক্যাচ মিস হয়!
ফিল্ডিং মিসের এই মহোৎসবের ফাঁক গলে দিলশান, সাঙ্গাকারা বুঝিয়ে দিয়েছেন- জীবন দিলে তারা ছাড় দেন না। দিলশান নিজস্ব স্টাইলের সব শট খেলে করেন ১৬১। আর সাঙ্গা অপরাজিত থাকেন ১০৫ রানে। সাঙ্গা-দিলশানের এই বোঝানো জিনিসটা দেখেও এনামুল, মমিনুলের শেখার পাতায় ‘নৈ-ঠয়ন্ট’। এনামুল উড়িয়ে মারতে যেয়ে দিলশানের হাতে ক্যাচ দেন। দিলশান সে ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন। কিন্তু এনামুল জীবন পেয়েও সতর্ক হননি। তাড়াহুড়া করে রানআউট হন। আর মমিনুল নেমেই অফসাইডে শট খেলা শুরু করেন। সেট না হয়ে এভাবে ব্যাট চালালে যা হয় তাই হয়েছে। একবার আউট হতে হতে বেঁচে যান। তবুও একইভাবে পরের বলে লাকমলের বলে ব্যাট চালিয়ে দেন। ধরা পড়েন স্লিপে। স্লিপের অতন্দ্র প্রহরী জয়াবর্ধনে আরেকবার দেখিয়ে দেন এই বয়সে ফিল্ডিংটা তিনি কেমন উপভোগ করেন। তামিম প্রথম ওভারে যেভাবে আউট হন, তা নিয়ে বলার কিছু নেই। মালিঙ্গার অমন বলে বরং আউট না হলেই অবাক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মনে পড়ে তামিম যে বলেছিলেন, আমরা জানি ওদের মালিঙ্গা আছে। ওকে সামলাতে আমরা প্রস্তুত। কতটা প্রস্তুত তা ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বোঝা গেছে।
এ যাওয়া আসার মাঝে ‘পুচকে’ সৌম্য লঙ্কানদের একটু চোখ রাঙানি দেন। ১৫ বলে ২৫ ও করে ফেলেন। এর মধ্যে চারই ছিল ৫টি। অনভিজ্ঞ এই ছেলেটার ব্যাটিং দেখে ধারাভাষ্যকাররাও কথার ফুল ফোটাচ্ছিলেন। কেউ কেউ সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে তাকে তুলনা করছিলেন। কিন্তু আমার ভয়টা ছিল ওর অনভিজ্ঞতা নিয়ে। শেষমেশ সেটাই সত্যি হল। ম্যাথিউসের চালাকি এক ডেলিভারি ধরতে পারলেন না তিনি। ম্যাথিউস ষষ্ট ওভারের শেষ বলটি ছাড়েন একটু ঘুরিয়ে। সৌম্য তা খেলতে যেয়েই ক্যাচ দেন সাঙ্গাকারার হাতে। এমন বেদনার দিনে একটু বিনোদন দেন সাকিব আল হাসান। ৪টি চার এক ছয়ে করেন ৪৫ রান। ব্যাট করতে নামার আগে কম্বল জড়িয়ে থাকা মুশফিক ৩৬ এর বেশি করতে না পারলে বাংলাদেশের হারাটা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সেই সময়টাকে বিলম্বিত করেন নাসিরের বদলে একাদশে সুযোগ পাওয়া সাব্বির। ৬২ বলে খেলেন ৫৩ রানের ‘অকাজে’র একটি ইনিংস। রুবেল একটু ব্যাটিং প্রাকটিস করেন। টেস্টে কীভবাবে ডিফেন্স করতে হয় যেন সেটাই পরখ করছিলেন তিনি। শেষ অবধি তাদের থামতে হয় ৯২ রান আগে।
এই লেখা যখন লিখছি, তখন মেলবোর্নের আকাশে রাতটা ভারি হয়ে আসছে। পেসবক্সে ব্যস্ততা। বাংলাদেশি সাংবাদিকরা বেদনার কাব্য লিখতে ব্যস্ত। মনে পড়ল, স্টেডিয়ামে ঢোকার আগে এক প্রবাসী বলছিলেন, আজ বাংলাদেশ জিতলে তাদের গাড়ি বহরের সবাইকে তিনি মিষ্টি খাওয়াবেন। রাত গভীর হওয়ার আগেই তিনি মাঠ ছেড়েছেন। আর হয়তো আশা নিয়ে ফিরেছেন- ৫ মার্চ স্কটল্যান্ড ম্যাচের দিন ঝুড়ি ঝুড়ি মিষ্টি খাওয়াবেন!
শ্রীলঙ্কা: ৩৩২/১(৫০ওভার)
বাংলাদেশ: ২৪০/১০(৪৭ ওভার)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৯২ রানে জয়ী।
ম্যাচ অব দ্যা ম্যাচ: দিলশান।