বিকাশমান অর্থনীতি গতিশীল হোক

29

ঢাকায় চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী বিপিও সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় যথার্থই বলেছেন, এই ক্ষেত্রে আমাদের অনুকরণ নয়, বরং নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে হবে। তা না হলে আমরা আন্তর্জাতিক বিশ্বে এ খাতে টিকে থাকতে পারব না। প্রসঙ্গত প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বিশ্বে আউটসোর্সিংয়ের কেন্দ্র হিসেবে ভারত ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। তাই বলে সে দেশের আইটি ও বিপিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুকরণ বা অনুসরণের চেষ্টা আমাদের তরুণদের করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে বরং আপনারা আপনাদের নিজস্ব উদ্ভাবন ও ভিশন ঠিক করুন। নিজস্ব ধারণা ও নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করুন। নতুন নতুন সৃজনশীল ধ্যানধারণা ও উদ্ভাবন নিয়ে এগিয়ে যান। আর তাহলেই আমরা কেবল বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) শিল্পে বিশ্বে আমাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারব। টিকে থাকতে পারব প্রতিযোগিতায়।
দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইটি সেক্টর, প্রযুক্তি ও বিপিওর হাত ধরে অনেকটা এগিয়ে গেছে দেশ। এ কথাও সত্য যে, আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাত এখনও নতুন। সে অবস্থায় বিপিও প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত হবে, দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে আইসিটি খাতে তরুণদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা। দুঃখজনক হলো, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর দুই-তৃতীয়াংশ প্রায় ১১ কোটি তরুণ হলেও অদ্যাবধি এই জনসম্পদকে আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি না সরকারী সহায়তা পাওয়া সত্ত্বেও। আরও দুঃখজনক হলো, আইসিটি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়, ১০ ভাগেরও কম। অথচ গত দশ বছরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আমলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আশাব্যঞ্জক উন্নতি ও অগ্রগতি হয়েছে। দেশের সর্বত্র স্কুল-কলেজসহ গ্রাম-গঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির সেবা। তবু বিপিও খাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা করতে হলে প্রচুর দক্ষ এবং সৃজনশীল উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন জনবল তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশের চলমান দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে এবং তার ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে। অর্থনৈতিক উন্নতিতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি তাতে ২০২১ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ১০ শতাংশে। তাতে করে ২০২৪ সাল থেকে বাংলাদেশ ‘স্বল্পোন্নত দেশের’ তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে। এর স্বপক্ষে প্রধানমন্ত্রী কতিপয় জোরালো যুক্তিও তুলে ধরেন। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বর্তমান সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। এর মধ্যে ১১টি চালু হয়েছে, ৭৯টি প্রক্রিয়াধীন। মাত্র সাত দিনে এসব জোনে বিদ্যুৎ দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
অর্থবছরের শুরুতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। পরিকল্পনামন্ত্রীর মতে, যেভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে ২০৩০ সালের আগেই দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে। এর মধ্যে বেড়েছে রফতানি আয় ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের অর্থ প্রেরণের পরিমাণ। কৃষি খাত তো বরাবরই সাবলীল ও ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখে চলেছে। সর্বোপরি বেড়েছে বিনিয়োগ। জাতীয় আয়ের হিসাবে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। বেসরকারী বিনিয়োগে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি না হলেও দেখা যাচ্ছে, সরকারী বিনিয়োগই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। আইসিটিসহ বিপিও খাত এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ অবদান রাখতে সক্ষম।