কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রথম দফার ভোটে বিজেপি হারতে যাচ্ছে এমন গুঞ্জনের মধ্যেই আজ ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট শুরু হচ্ছে। ৯৭ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে আজ। এদিকে নতুন এক সমীক্ষায় অস্বস্তিতে পড়েছে মোদি সরকার। এতে বলা হয়েছে নোটবন্দীর পর চাকরি খুইয়েছেন ৫০ লাখ পুরুষ। বুথে ক্যামেরা বসিয়েছেন মোদি, কংগ্রেসকে ভোট দিলেই জেনে যাবেনÑ এক বিজেপি নেতার এমন মন্ত্যব্য তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এদিকে দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে রীতি মেনে বাবার স্মৃতিজিড়িত ওয়াইনাডের বিখ্যাত থিরুনেল্লি মন্দিরে পূজা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দ্বিতীয় দফায় যেসব আসনে ভোট হবে সেগুলো হলো- অসমের পাঁচটি (স্বায়ত্তশাসিত জেলা, করিমগঞ্জ, মঙ্গলদই, নওগঞ্জ ও শিলচর), বিহারের পাঁচটি (বঙ্কা, ভাগলপুর, কাতিহার, কিষানগঞ্জ ও পুর্ণিয়া), ছত্তিশগড়ের তিনটি (কঙ্কর, মহাসামন্দ ও রাজনন্দগাঁও), জম্মু ও কাশ্মীরের দুটি (শ্রীনগর ও উধামপুর), কর্নাটকের ১৪টি (ব্যাঙ্গালুরু সেন্ট্রাল, ব্যাঙ্গালুরু উত্তর, ব্যাঙ্গালুরু দক্ষিণ, ব্যাঙ্গালুরু পল্লী, চামারাজনগর, চিকবল্লপুর, চিত্রদুর্গ, দক্ষিণ কন্নড়, হাসান, কোলাড়, মনদ্যা, মহীশূর, তুমকুর ও উদুপি চিকমাগালুর), মহারাষ্ট্রের ১০টি (আকোলা, অমরাবতী, বীদ, বুলধনা, হিঙ্গোলী, লেতুর, ননদেদ, ওসমানাবাদ, পরভানি ও সোলাপুর), মণিপুরের একটি (ইনার মণিপুর), উড়িষ্যার পাঁচটি (অস্কা, বরগড়, বোলানগির, কান্দামাল ও সুন্দরগড়), তামিলনাড়ুর ৩৯টি (সবকটি), ত্রিপুরার একটি (ত্রিপুরা পূর্ব), উত্তরপ্রদেশের আটটি (আগ্রা, আলীগড়, অমরোহ, বুলান্দশহর, ফতেহপুর সিক্রি, হাতরাস, মথুরা ও নাগিনা), পশ্চিমবঙ্গের তিনটি (দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও রায়গঞ্জ) এবং প-িচেরির একটি আসনে। সাত দফা ভোটের প্রথম দফা অনুষ্ঠিত হয় গত ১১ এপ্রিল। সপ্তম দফার ভোট হবে আগামী ১৯ মে। ফল ঘোষণা শুরু করা হবে ২৩ মে।
নয়া সমীক্ষায় আরও অস্বস্তিতে মোদি সরকার : ‘৪৫ বছরে দেশে কর্মসংস্থানের হাল সবচেয়ে খারাপ’। সরকারী সমীক্ষার রিপোর্ট ফাঁস হয়ে এমন তথ্য সামনে চলে আসায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছিল মোদি সরকার। বিরোধীদের বেকারত্বের তির সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল শাসক দলকে। এ বার ভোটের মধ্যেই চাকরি খোয়ানো নিয়ে এমন এক সমীক্ষার ফল সামনে এল, যা মোদি সরকারের অস্বস্তি আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়ার পক্ষে যথেষ্ট। নতুন সমীক্ষায় উঠে এসেছে, নোটবন্দীর পর থেকে গত দু’বছরে প্রায় ৫০ লাখ পুরুষ চাকরি হারিয়েছেন। মহিলাদের ধরলে স্বাভাবিকভাবেই এই সংখ্যা আরও অনেকটাই বেড়ে যাবে। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুর আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দ্য সেন্টার ফর সাস্টেইনেবল এমপ্লয়মেন্ট’ একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ‘স্টেট অব ওয়ার্কিং ইন্ডিয়া-২০১৯’ নামে ওই রিপোর্টে যদিও বলা হয়েছে, নোটবন্দী এবং চাকরি খোয়ানোর মধ্যে কোন সংযোগ স্থাপন করা না গেলেও, এটা স্পষ্ট যে, চাকরি খোয়ানোর প্রবণতা বেড়েছে ২০১৬ সালের নবেম্বরের পর থেকে। সমীক্ষাটি করেছেন আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপক আনন্দ শ্রীবাস্তব, রোসা আব্রাহাম এবং অমিত ভোঁসলে। চাকরি খোয়ানোর হারের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের হারের তুল্যমূল্য আলোচনাও করা হয়েছে নতুন সমীক্ষায়। তাতে উঠে এসেছে, ২০১১ সাল থেকেই কর্মসংস্থানের হার কমতে থাকে। নতুন এই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকে বেকারত্বের হার ছিল ২ শতাংশের উপরে। ২০১১ সালে সেটা বেড়ে হয় ৩ শতাংশের বেশি। ৫ শতাংশের উপরে ছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত। কিন্তু নোটবন্দীর পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৮ নবেম্বরের পর এই হার ৬ শতাংশেরও উপরে গিয়ে পৌঁছায়। সমীক্ষক তিন অধ্যাপকের দাবি, নোটবন্দীর পর পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের ওপরই চাকরিতে কোপ পড়েছে বেশি। তাদের বক্তব্য, ‘সাধারণভাবে পুরুষদের চেয়ে মহিলারা বেশি ভুক্তভোগী। মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনই চাকরিতে অংশগ্রহণের হারও কম।’ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, অসংগঠিত ক্ষেত্রে নোটবন্দীর প্রভাব বেশি পড়েছে। সাধারণত, অসংগঠিত ক্ষেত্রে কম শিক্ষিতরা বেশি চাকরি করেন এবং সংগঠিত ক্ষেত্রে ছবিটা উল্টো। এই সূত্রেই সমীক্ষায় দাবি, নোটবন্দীর ফলে অল্প শিক্ষিতদের চাকরিতে বেশি কোপ পড়েছে। কিন্তু নতুন সমীক্ষার ভিত্তি কি? পরিসংখ্যান মন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশন (এনএসএসও) নিয়মিত ব্যবধানে কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব নিয়ে সমীক্ষা (পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে) করে। কিন্তু এনএসএসওর সেই সমীক্ষার তথ্য পাওয়া যায় না। এই সংক্রান্ত তথ্যের একমাত্র বিকল্প সেন্টার ফর মনিটরিং দি ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইই)। এই সরকারী সংস্থাটি প্রতি চার মাস অন্তর সমীক্ষা করে। সেই সমীক্ষার তথ্য (ডেটা) থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার বাড়ির কর্মসংস্থানের তথ্যকে মূলভিত্তি হিসেবে নিয়েছেন তারা। তারপর সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।