৯ দফা দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টিসহ দেশের ২২টি পাটকল শ্রমিকদের টানা ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হয়েছিল শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ওই দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারা দেশে বিভিন্ন জেলার সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এটা ছিল শ্রমিকদের তৃতীয় দফার ধর্মঘট। সোমবার গভীর রাতে সরকারের সঙ্গে আন্দোলনরত শ্রমিকদের এক বৈঠকের পর ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। তবে এবারও দাবি মানা না হলে আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ এপ্রিল টানা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধের কর্মসূচি পালন করা হবে বলে শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন। এর আগে গত ২ এপ্রিল থেকে এই ৯ দফা দাবি নিয়ে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা। শ্রমিকদের দাবির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বকেয়া মজুরি পরিশোধ, অস্থায়ী শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণ, পাট খাতে অর্থ বরাদ্দ, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকদের বীমার বকেয়া প্রদান, বরখাস্ত হওয়া শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ স্থায়ীকরণ, পাট মৌসুমে পাট কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করা।
পাটকল শ্রমিকদের এসব দাবি একেবারেই ন্যায়সংগত। যদিও বিজেএমসি ও পাটকল শ্রমিকদের এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। বিজেএমসি মনে করে, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো দিনের পর দিন লোকসান গুনছে। লোকসানি সংস্থা হওয়ায় সেখানে বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে শ্রমিকদের মত হচ্ছে, তাদের কারণে কোনো পাটকল লোকসান দিচ্ছে না। লোকসান হচ্ছে মূলত ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে। বেসরকারি পাটকলগুলো যদি লাভজনক হতে পারে, তাহলে সরকারি পাটকল লোকসান গুনবে কেন? সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, দেশের পাটকলগুলো অনেক পুরনো। এগুলোর আধুনিকায়ন হয়নি। বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন কোনো পাটপণ্য উৎপাদনে যায়নি দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো। আবার এসব পাটকলে পাট কেনার জন্য সময়মতো অর্থ বরাদ্দ হয় না। অর্থ বরাদ্দ হওয়ার পরও কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে অর্থ ছাড় হয় অনেক দেরিতে। আবার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে যে পণ্য উৎপাদন হয় তার বেশির ভাগ অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে থাকে। অর্থাৎ পাটকল নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলের তেমন কোনো পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না। বাণিজ্যিক পরিকল্পনা, বাজারজাতকরণে অনাগ্রহসহ নানা কারণেই পাটকলগুলো লোকসান গুনছে। অথচ এসব পাটকল আধুনিকায়ন ও শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী পাটপণ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা নেওয়া হলে দেশের পাটশিল্প যে ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেবে না তার প্রমাণ আমাদের প্রতিবেশী দেশটি এরই মধ্যে দিয়েছে।
আমাদের পাটকল আধুনিকায়নে বাধা কোথায়? বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী পাটপণ্য উৎপাদন ও শ্রমিকদের দক্ষতার দিকটিও বিশেষভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। পাটশিল্পের অস্থিরতা দূর করতে স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট মহল আন্তরিকভাবে কাজ করবে— এটাই আমাদের প্রত্যাশা।