কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সর্বোচ্চ শ্রম ও দায়বদ্ধতা নিয়ে জাতীয় উন্নয়নে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দক্ষ মানবশক্তি গড়ে তোলা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা এবং এসব খাতে গবেষণা আরও বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বিজ্ঞানী, গবেষক এবং বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ এবং বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।
বিজ্ঞানী ও গবেষকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, দেশের মানুষের দেয়া রাজস্ব থেকে আপনাদের ফেলোশিপ ও গবেষণা অনুদান দিচ্ছি। আপনাদের সর্বোচ্চ শ্রম ও দায়বদ্ধতা নিয়ে জাতীয় উন্নয়নে কাজ করতে হবে। আমাদের সরকার দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে বদ্ধপরিকর। মনে রাখবেন, আপনাদের উদ্ভাবনী জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ যেন মানুষের কল্যাণে হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশীয় মেধাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বেসরকারী খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, দেশ-বিদেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এমএস, এমফিল, পিএইচডি, ও পিএইচডি-উত্তর প্রোগ্রামের জন্য বঙ্গবন্ধু ফোলোশিপ দেয়া হচ্ছে। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে বর্তমান পর্যন্ত এ বাবদ ৫৯৬ জনকে ২২৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি-উত্তর পর্যায়ে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বর্তমান পর্যন্ত ২২ হাজার ২২০ ছাত্রছাত্রী ও গবেষকদের মধ্যে ১৩৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৫ হাজার ২০টি প্রকল্পের অনুকূলে ১৭৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বিশেষ অনুদানও দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের দেয়া রাজস্ব থেকে আপনাদের ফেলোশিপ এবং গবেষণা অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। যারা ফেলোশিপ পাচ্ছেন, সর্বোচ্চ দায়বদ্ধতা নিয়ে জাতীয় উন্নয়নে কাজ করতে হবে। কারণ আমরা চাই দক্ষ মানবশক্তি গড়ে তুলতে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে।’
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলতে চাই। প্রত্যেকে মানুষের ন্যূনতম প্রযুক্তিজ্ঞান থাকুক, সেটা চাই। প্রযুক্তি বিভেদ দূর করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করে উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি শিল্পায়নও আমাদের দরকার। আর শিল্পায়নের ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, সেটা আমাদের ধরা দরকার। তার উপযুক্ত দক্ষ মানবসম্পদও আমাদের গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই যে বড় বড় প্রকল্প আমরা করছি, আজকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র অথবা পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রজেক্ট, এখানে আমাদের বহু ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে বহু কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এর মাধ্যমে আমি মনে করি আমাদের দক্ষ জনবলও সৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ফেলোশিপ পাচ্ছেন তাদের সর্বোচ্চ দায়বদ্ধতা নিয়ে জাতীয় উন্নয়নে কাজ করতে হবে। আমরা বড় বড় প্রকল্প করছি। আগামী দিনের বাংলাদেশ, অর্থাৎ একচল্লিশের উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজে সকলকে মনোনিবেশ করতে হবে। কীভাবে ধাপে ধাপে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।’
গবেষণা না থাকলে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা যেত না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এজন্য আমি গবেষণাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই, কিন্তু আমাদের দেশে বিজ্ঞানের এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা কম হচ্ছে।’ এসব খাতে গবেষণা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটাই পারে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে; আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যত বংশধরদের আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আগামী দিনের বাংলাদেশ, অর্থাৎ ৪১ এর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজে সবাইকে মনোনিবেশ করতে হবে। কীভাবে ধাপে ধাপে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোতে পারি, বাংলাদেশকে কেউ আর দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমি এটাই বলব, আত্মবিশ্বাস হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। আত্মবিশ্বাস নিয়ে চললে যেকোন কাজ করা যায়, অসাধ্য সাধন করা যায়।’
বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। করোনাকালেও ভাল প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারছি। অর্থনৈতিকভাবে আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এখন আর কারও কাছে আমাদের হাত পেতে চলতে হয় না। আমাদের বার্ষিক উন্নয়নের ৯০ শতাংশ আমরা এখন নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি।’
১২ বছরের কম বয়সীদের করোনার টিকার আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও টিকা পাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বয়সের আওতা কমানোর লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কাছে আবেদন করা হয়েছে এবং শীঘ্রই তা পাওয়া যাবে বলে বলে আশা করি।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্কুল কলেজ আমরা খুলে দিয়েছি। এখন স্বাভাবিকভাবেই চলবে। সেই সঙ্গে টিকাও এবং আমরা প্রাইমারী পর্যন্ত টিকা… কোন বয়স পর্যন্ত টিকা দেয়া যেতে পারে। আমরা ১২ বছর পর্যন্ত দিচ্ছি। ডব্লিউএইচওর কাছে ইতোমধ্যে আবেদন করা হয়েছে, আরও অল্প বয়সের শিশুদের জন্য টিকা দেয়ার অনুমতির জন্য। আমার মনে হয় এটা এসে যাবে। কাজেই আমরা তখন মনে হয় সবাইকে টিকা দিতে পারব। যদি ৭-৮ বা ১০ বছর থেকে টিকা দিতে পারি, তাহলে আমাদের প্রাইমারীতে আর কোন অসুবিধা হবে না। তারা নিশ্চিন্তে স্কুলে যেতে পারবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা স্কুল খুলে দিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে তাদের সুরক্ষাটা একান্তভাবে দরকার এবং আমরা সেটা করব। ‘ভবিষ্যত প্রজন্মকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
দেশের প্রায় সত্তর ভাগের কাছাকাছি মানুষ টিকা পেয়েছেন। টিকা এখন সবাইকে নিতে হবে। এর আগে আমি দেখেছি অনীহা। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি মানুষের ভেতরে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে চলতি বছরে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’ এবং বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে বিশেষ অনুদান প্রদান প্রাপ্ত গবেষকদের হাতে সম্মাননার চেক তুলে দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।