কাজিরবাজার ডেস্ক :
দুই মাস বিলম্বের পর মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের দুর্নীতির বিচার শুরু হচ্ছে আজ। বৈশ্বিক ওয়ানএমডিবি (ওয়ানমালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বারহাদ) কেলেঙ্কারির অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে। এই বিচার কার্যক্রম এক মাস চলবে। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারি অভিযোগ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো- ২০১৮ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে নাজিব রাজাক অপ্রত্যাশিতভাবে পরাজয়বরণ করেন। এরপর দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কয়েকবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘ওয়ানএমডিবি’ কেলেঙ্কারি। নাজিব রাজাকেরই গঠন করা মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে শত শত কোটি ডলার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নাজিবের ক্ষমতার মেয়াদকালে বিশ্বব্যাপী অবৈধভাবে ব্যয় করার অভিযোগ রয়েছে। যেসব খাতে অবৈধভাবে ব্যয় করা হয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হলো ম্যানহাটান রিয়েল এস্টেট ও হোটেল, ইয়ট, পিকাসোর আঁকা চিত্রকর্ম, হীরা ও হলিউড চলচ্চিত্র রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, প্রায় একশ’ কোটি ডলার নাজিবের এ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মালয়েশিয়ার এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
ওয়ানএমডিবি বিষয়ে নাজিবের বিরুদ্ধে ৪২টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে মুদ্রাপাচারের ২৭টি, বিশ্বাসভঙ্গের ফৌজদারি অপরাধের জন্য নয়টি, ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য পাঁচটি এবং নিরীক্ষা জালিয়য়াতির একটি অভিযোগ রয়েছে। আর তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর প্রথম বিচার শুরু হচ্ছে আজ। এসব অভিযোগ মূলত ওয়ানএমডিবির ভর্তুকি প্রতিষ্ঠান এসআরসি ইন্টারন্যাশনালের অর্থনৈতিক লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নাজিবের ব্যক্তিগত ব্যাংক এ্যাকাউন্টে এসআরসি ইন্টারন্যাশনাল থেকে আসা একশ’ কোটি ডলারের বিষয়ে বিশ্বাসভঙ্গের ফৌজদারি অপরাধে তিনটি, মুদ্রাপাচারের তিনটি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। এই সাতটি অভিযোগ অস্বীকার করেন নাজিব রাজাক। শুধু মালয়েশিয়াই ওয়ানএমডিবি নিয়ে তদন্ত করছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুসহ ছয়টি রাষ্ট্র এই কেলেঙ্কারির মুদ্রাপাচারের তদন্ত করছে। নাজিব রাজাকের এই বিচার প্রকৃতপক্ষে শুরু হওয়ার কথা ছিল ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে। কিন্তু বিচার শুরু করার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে তা স্থগিত করা হয়। কারণ নাজিবের আইনজীবী আদালতে আবেদন করেছিলেন বিচার বিষয়ে গণমাধ্যম ও লোকজন যাতে আলোচনা না করতে পারে সে বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের। তবে পরে বিচারক সেটা প্রত্যাখ্যান করেন। নাজিবের আইনজীবী শফি আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে বিচার বিলম্ব করার কৌশল নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নাজিব যাতে মালয়েশিয়ার জনগণের কাছ থেকে আরও বেশি সমর্থন এবং নতুন সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টির সুযোগ পান সে চেষ্টা করেছেন আইনজীবী। বিচার শুরুর জন্য ইতোমধ্যে সরকার ব্যাপক চাপের মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি নাজিব একটি মিউজিক ভিডিওসহ একটি গান বানিয়েছে, যেখানে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
এই বিচার কার্যক্রম এক মাস চলবে বলে জানা গেছে। এটা দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়ার শুরু মাত্র। মুদ্রাপাচারের ২১ অভিযোগ ও ওয়ানএমডিবির দুইশ’ কোটি রিঙ্গিত বিষয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের চারটি অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হবে আগামী ১৫ এপ্রিল। সরকারের তহবিল অপব্যবহার বিষয়ে অভিযোগে তৃতীয় বিচার শুরু হবে আগামী ৮ জুলাই। ঘুষ নেয়ার অভিযোগে নাজিবের স্ত্রী রোসমাহ মানসুরকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তিনিও নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।